মৃদুল দাশগুপ্ত : 'সোনার বুদ্বুদে'র কবি
(৩ এপ্রিল ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ ---)
¤ জন্ম ও জন্মস্থান :-
১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৩ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার শ্রীরামপুরে মৃদুল দাশগুপ্ত জন্মগ্রহণ করেন।
¤ পারিবারিক পরিচয় :-
মৃদুল দাশগুপ্তের পিতা ছিলেন জ্যোৎস্না কুমার দাশগুপ্ত এবং মাতা ছিলেন সান্ত্বনা দাশগুপ্ত। কবির বাল্যজীবন কাটে হুগলি জেলার শ্রীরামপুরে।
¤ পেশা :- কবি, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক।
¤ ছাত্রজীবন :-
শ্রীরামপুরের পূর্ণচন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর প্রথম পাঠ শুরু হয়। শ্রীরামপুর ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন থেকে তিনি উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। তারপর উত্তরপাড়া প্যারীমোহন কলেজ থেকে তিনি জীববিদ্যায় স্নাতক হন।
¤ কর্মজীবন :-
শ্রীরামপুর ইউনিয়ন ইন্সটিটিউশনে জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে মৃদুল দাশগুপ্তের কর্মজীবন শুরু হয়। পরে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে সাংবাদিকতাকেই তিনি পেশা হিসেবে বেছে নেন। তাঁর সাংবাদিকতা শুরু হয় "সাপ্তাহিক পরিবর্তন" পত্রিকা থেকে এবং পরে তিনি "যুগান্তর" পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে তিনি "আজকাল" পত্রিকায় যোগ দেন। এখনও সেই পত্রিকার সঙ্গে তিনি যুক্ত রয়েছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লিখে চলেছেন।
¤ সাহিত্য জগতে আত্মপ্রকাশ :-
১৯৬৪-৬৫ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ১০-১১ বছর বয়সে "আনন্দমেলা" বা "পাততাড়ি" পত্রিকায় তাঁর লেখা ছড়া প্রকাশিত হয়। এগুলি পাঠকমহলে খুব সমাদৃত হয়েছিল।
অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর প্রথম কবিতা ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ১৪ বছর বয়সে "শীর্ষবিন্দু" পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকার মধ্যে দিয়েই তিনি সাহিত্য জগতে আত্মপ্রকাশ করেন।
¤ সাহিত্যকর্ম :-
শ্রীরামপুর ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনে থাকাকালীনই তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। পরে শ্রীরামপুর থেকে প্রকাশিত "শীর্ষবিন্দু", "বেলাভূমি" প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। কলকাতা থেকে প্রকাশিত ধূর্জটিচন্দের "এবং" পত্রিকায় গুচ্ছ কবিতা লিখেছেন কবি। এছাড়াও তিনি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "কৃত্তিবাস" এবং তারাপদ রায়ের "কয়েকজন" পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। "আনন্দমেলা" পত্রিকায় তাঁর রচিত ছড়া বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তিনি "বাইসন" ও "শত জলঝর্নার ধ্বনি" নামে দুটি লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। কবি তাঁর ছন্দ-অবয়ব ও মন্তাজ সৃষ্টির গুণে বাঙালি পাঠককে আজও আলোড়িত করেন।
¤ গ্রন্থপঞ্জি (রচনাপঞ্জি) :-
¤ কাব্যগ্রন্থ :-
মৃদুল দাশগুপ্তের গ্রন্থাকারে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৬টি।। সেগুলির তালিকা প্রকাশকাল অনুসারে ক্রমানুযায়ী সাজিয়ে নিম্নে দেওয়া হলো ---
১) "জলপাইকাঠের এসরাজ" (১৯৮০)
২) "এভাবে কাঁদে না" (১৯৮৬)
৩) "গোপনে হিংসার কথা বলি" (১৯৮৮)
৪) "সূর্যাস্তে নির্মিত গৃহ" (১৯৯৮)
৫) "ধানখেত থেকে" (২০০৭)
৬) "সোনার বুদ্বুদ" (২০১০)
¤ অগ্রন্থিত সংকলন গ্রন্থ :-
১) 'অগ্রন্থিত চূর্ণ কবিতা' (২০১৪-১৫)
২) 'অগ্রন্থিত সাম্প্রতিক' (জুলাই ২০২০)
¤ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কবিতা :-
১) "বর্গি হানা ২০০৬"
★তথ্য :- এটি পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত একটি প্রতিবাদী কবিতা। এই কবিতাটি ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ১৬-৩০ এপ্রিল হুগলি জেলা থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক 'প্রতিপক্ষ' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
২) "ক্রন্দনরতা জননীর পাশে"
৩) "ধানখেত থেকে"
★তথ্য :- এটি পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত একটি প্রতিবাদী কবিতা। এই কবিতাটি ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি সংখ্যায় ৯/৩ ট্যামার লেন, কলকাতা - ৭০০০০৯ থেকে প্রকাশিত "কবিসম্মেলন" পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
৪) "রান্নাঘর আরও রান্নাঘর : প্রযুক্তি"
৫) "ফুল"
৬) "সফর"
৭) "গৃহ"
৮) "ঘোর"
৯) "দুর্ঘটনা"
১০) "ক্লাউন"
১১) "বিবাহপ্রস্তাব"
১২) "ইহলোক"
★তথ্য :- এই কবিতাটি মৃদুল দাশগুপ্তের "গোপনে হিংসার কথা বলি" (১৯৮৮) কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
¤ ছড়াগ্রন্থ :-
তাঁর রচিত ছড়াগ্রন্থগুলির বিভিন্ন ছড়া বিভিন্ন পত্রিকায় বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। সেগুলি হলো ---
১) "ঝিকিমিকি ঝিরিঝিরি"
২) "আমপাতা জামপাতা"
৩) "ছড়া পঞ্চাশ" ("ছড়া ৫০")
৪) "রঙিন ছড়া"
¤ গদ্যগ্রন্থ বা প্রবন্ধগ্রন্থ :-
কাব্যগ্রন্থ ও ছড়াগ্রন্থের পাশাপাশি তাঁর দু'টি গদ্যগ্রন্থ বা প্রবন্ধগ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছিল। সেগুলি হলো ---
১) "কবিতা সহায়"
২) "সাত-পাঁচ"
¤ পাঠ্যাংশের অন্তর্ভুক্ত কবিতা :-
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অন্তর্ভুক্ত দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবই "সাহিত্যচর্চা"য় কবি মৃদুল দাশগুপ্তের "ক্রন্দনরতা জননীর পাশে" কবিতাটি স্থান পেয়েছে। এটি পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত একটি প্রতিবাদী কবিতা। এই কবিতাটি প্রথমে ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের মে-আগস্ট সংখ্যায় "পর্বান্তর" পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে কবিতাটি ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুর আন্দোলনের পটভূমিতে লেখা "ধানক্ষেত থেকে" (২০০৭) কাব্যগ্রন্থের বা কবিতা-পুস্তিকার অন্তর্ভুক্ত হয়। কবিতাটির পঙ্ক্তি বা ছত্রসংখ্যা - ১৬টি এবং স্তবক সংখ্যা - ১টি।
¤ কবিতার বৈশিষ্ট্য :-
১) মৃদুল দাশগুপ্ত তাঁর কবিতায় ব্যক্তিমনের নিঃসঙ্গতাকে সহজ সাবলীলতায় ফুটিয়ে তোলেন।
২) তিনি ছিলেন ভিন্নস্বরের স্রষ্টা। তাই তাঁর কবিতায় ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কাহিনি বর্ণিত হয়েছি।
¤ নিজের সম্পর্কে মন্তব্য :-
১) কবি মৃদুল দাশগুপ্ত নিজের সম্পর্কে বলেছেন, --- "আমি মনে করি আমি নিজে কবিতা লিখি না। আকাশ থেকে নামে। কবিতা লেখার কালে, একটা কলমের যে ভূমিকা, আমার ভূমিকাও ঠিক সেরকম। ধারক বা বাহকের। আর তাই, কোনো বিষয় কেন্দ্রিক কবিতা লিখতে পারি না। ফলে কবিতার আর নামকরণ করে উঠতে পারছি না।"
২) কবি মৃদুল দাশগুপ্ত নিজের সম্পর্কে বলেছেন, --- "আমার বাবা, আমি যাতে শ্রীরামপুরে বন্ধুদের সঙ্গে নকশালপন্থী হতে না পারি সেজন্য কলকাতা বা শ্রীরামপুর কলেজে আমায় ভর্ত্তি করান নি।"
৩) কবি জয় গোস্বামীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দেবদাস আচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও তাঁর কথায়, --- "আমরা কখনও প্রতিষ্ঠানকে লেখক-কবি সরবরাহ করব না।" এই গুরুবাক্য মাথায় তুলেছিল কবি মৃদুল দাশগুপ্ত।
¤ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি :-
১) তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ "জলপাই কাঠের এসরাজ" ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে, দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ "এভাবে কাঁদে না" ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে এবং তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ "গোপনে হিংসার কথা বলি" ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
২) তিনি সাংবাদিকতাকে বেছে নিয়েছেন পেশার জন্য বা জীবিকার জন্য, কবিতার কারণে নয়।
৩) বিভিন্ন কবি সম্মেলনে তিনি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, তারাপদ রায়, সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত প্রমুখের সঙ্গে কবিতা পাঠ করতেন।
৪) তিনি তাঁর দীর্ঘ সাহিত্যজীবনে কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়া বেশিকিছু কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন নি। তবে তিনি এখনও লিখে চলেছেন এবং বর্তমানে জীবিত সাহিত্যিকদের মধ্যে অনেক সমাদৃতও হয়েছেন।
¤ পুরস্কার ও সম্মাননা :-
মৃদুল দাশগুপ্ত মূলত তাঁর কাব্যগ্রন্থের জন্য বেশকিছু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। সেগুলির তালিকা কবির পুরস্কার ও সম্মাননা পাওয়ার সাল অনুসারে ক্রমানুযায়ী সাজিয়ে নিম্নে দেওয়া হলো ---
১) ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে : তাঁকে "ন্যাশনাল রাইটার্স অ্যাওয়ার্ড"-এ সম্মানিত করা হয়।
২) ২০০০ খ্রিস্টাব্দে : তিনি "সূর্যাস্তে নির্মিত গৃহ" (১৯৯৮) কাব্যগ্রন্থের জন্য "পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি" পুরস্কারে ভূষিত হন।
৩) ২০১২ খ্রিস্টাব্দে : তিনি "সোনার বুদ্বুদ" (২০১০) কাব্যগ্রন্থের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার "রবীন্দ্র পুরস্কার" লাভ করেন।
¤ তথ্যঋণ :-
১) 'বাংলা শিক্ষক' (দ্বাদশ শ্রেণি) --- ড. অমল পাল, অপূর্ব কর ও ড. প্রিয়তোষ বসু।
★প্রকাশনা সংস্থা :- 'ছায়া প্রকাশনী', ১, বিধান সরণি, কলকাতা - ৭০০০৭৩।
২) 'মিলানসাগর'।
- আলোচক : সৌম্যদীপ মাইতি
- যোগাযোগ : ৬২৯০৩৭৭১৩৪
- S.L.S.T বাংলা অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে চাইলে ফোন করে যোগাযোগ করুন আমার ৬২৯০৩৭৭১৩৪ নম্বরে, অথবা আমার WhatssApp-তে ম্যাসেজ করুন ৮৭৬৮৮৩০২৩০ নম্বরে। ধন্যবাদ।
Post a Comment