NEW :
Loading contents...

মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের কয়েকটি প্রশ্নের সমাধান

মধ্যযুগ থেকে ২টি ও আধুনিক যুগ থেকে ২টি প্রশ্নের অর্থাৎ মোট ৪টি প্রশ্নের সমাধান করে নিম্নে দেওয়া হল :-

¤ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের ভণিতা ও ভণিতাবিহীন পদ

১) শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে 'গাইল বড়ু চণ্ডীদাস' ভণিতাটি কতবার ব্যবহৃত হয়েছে?

★উত্তর - ২৯৮ বার।

২) শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে 'বড়ু চণ্ডীদাস' ভণিতাটি কতবার ব্যবহৃত হয়েছে?

★উত্তর - ৪৩ বার।

৩) শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে 'চণ্ডীদাস' ভণিতাটি কতবার ব্যবহৃত হয়েছে?

★উত্তর - ১০৭ বার।

৪) শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে 'অনন্ত বড়ু চণ্ডীদাস' ভণিতাটি কতবার ব্যবহৃত হয়েছে?

★উত্তর - ৭ বার।

★যেহেতু এখানে 'গাইল বড়ু চণ্ডীদাস' ভণিতাটির মধ্যেই 'বড়ু চণ্ডীদাস' ভণিতাটির উল্লেখ আছে। তাই শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের মোট ভণিতার সংখ্যা = (২৯৮+১০৭+৭) = ৪১২টি। [২৯৮ ধরলে এখানে আর ৪৩ ধরা যাবে না।]

★ড. অমিত্রসূদন ভট্টাচার্যের মতে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে মোট ভণিতার সংখ্যা ৪১৮টি। [ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে ৪১৫টি এবং ড. মিহির চৌধুরী কামিল্যার মতে ৪১৯টি --- যদিও এই মতটি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ অধিকাংশ পণ্ডিতদের মতে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে মোট ভণিতার সংখ্যা ৪১৮টি হবে।]

★সুতরাং শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে ভণিতা পাওয়া যায়নি এমন পদের সংখ্যা = (৪১৮-৪১২) = ৬টি। [প্রমাণিত]

¤ বৈষ্ণব পদাবলির আদি কবি ও আদি বৈষ্ণব কবি

১) মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে 'বৈষ্ণব পদাবলির আদি কবি' বলে কাকে আখ্যা দেওয়া হয়?

★উত্তর - কবি বিদ্যাপতিকে।

২) মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে 'আদি বৈষ্ণব কবি' বলে কাকে আখ্যা দেওয়া হয়?

★উত্তর - কবি জয়দেবকে।

৩) জন্মসাল হিসেবে মিলিয়ে দেখলে মধ্যযুগের সাহিত্যে বৈষ্ণব পদাবলির আদি রচয়িতা বলে কাকে ধরা হয়?

★উত্তর - কবি জয়দেবকে।

¤ প্রমথ চৌধুরীর 'জয়দেব' প্রবন্ধের পত্রিকায় প্রকাশ

১) প্রমথ চৌধুরীর 'জয়দেব' প্রবন্ধটি কবে, কোন্ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?

★উত্তর - প্রমথ চৌধুরীর মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে (জ্যৈষ্ঠ ১২৯৭ বঙ্গাব্দ) শ্রীমতি স্বর্ণকুমারী দেবী সম্পাদিত 'ভারতী' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। যদিও স্বর্ণকুমারী দেবী প্রমথ চৌধুরীর এই প্রবন্ধটির অনেকাংশ বাদ দিয়ে ছাপেন। এটি প্রমথ চৌধুরীর প্রথম প্রকাশিত রচনা (প্রবন্ধ)। এই প্রবন্ধের মধ্যে দিয়ে প্রমথ চৌধুরী বাংলা সাহিত্য জগতে আত্মপ্রকাশ করেন। তখন প্রমথ চৌধুরী ছিলেন 'এম. এ' ক্লাসের ছাত্র।

★পরবর্তীতে শ্রীপ্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত 'সবুজপত্র' পত্রিকায় 'জয়দেব' প্রবন্ধটি পুনঃপ্রকাশিত হয়। প্রমথ চৌধুরী তাঁর 'আত্মকথা' (১৯৪৬/জ্যৈষ্ঠ ১৩৫৩) নামক আত্মজীবনীমূলক প্রবন্ধগ্রন্থে এ কথা লিখেছেন।  যেটা আমাদের তিনজনের লেখা 'বাংলা সাহিত্যিক চরিতমালা : আধুনিক যুগ' (প্রথম খণ্ড) বইটিতেও প্রমথ চৌধুরীর 'সাহিত্য জগতে আত্মপ্রকাশ' অংশে খুব ভালো করে দেওয়া আছে। আর এই প্রবন্ধের প্রকাশকালটা আমরা বিভিন্ন সমালোচনামূলক বই থেকে 'প্রমথ চৌধুরীর গ্রন্থপঞ্জি' অংশ থেকে নিয়েছি।

★আর অধ্যাপক তপন কুমার চট্টোপাধ্যায়ের বই দেখে আপনারা বলছেন, প্রমথ চৌধুরীর 'জয়দেব' প্রবন্ধটি ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে 'সাধনা' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই তথ্যটি যে ভুল তার প্রমাণ নীচে দেওয়া হল। আপনারা সবাই একবার মিলিয়ে নেবেন।

★প্রমথ চৌধুরীর 'জয়দেব' (১৮৯০/জ্যৈষ্ঠ ১২৯৭) প্রবন্ধটি প্রকাশের প্রায় চার বছর (তিন বছর নয় মাস) পরে ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে (ফাল্গুন ১৩০০ বঙ্গাব্দ) বলেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওই একই নামের অর্থাৎ 'জয়দেব' প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়। তাই বিভিন্ন সাহিত্যের ইতিহাস বইগুলোতে এই তথ্যটি ভুল দেওয়া আছে। আর আশাকরি আপনাদের কোনো ডাউট থাকবে না।

¤ শৈলজানন্দের 'কয়লাকুঠির দেশ' ও 'কয়লাকুঠি'

১) 'কয়লাকুঠির দেশ' :- এটি একটি উপন্যাস। এর প্রকাশকাল ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ)। এই উপন্যাসটিকে সব সাহিত্যের ইতিহাস ও সাহিত্যের রূপরীতি বইতে বাংলা সাহিত্যের প্রথম আঞ্চলিক উপন্যাস বলা হয়েছে। কিন্তু এর প্রকাশকাল দেখে বুঝতে পারবেন, যে এর আগে বাংলা সাহিত্যে অনেক আঞ্চলিক উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। এই উপন্যাসটিকে অনেকে 'কয়লাকুঠির দেশে' বললেও কিন্তু সঠিক বানান হবে 'কয়লাকুঠির দেশ'। শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের অধিকাংশ উপন্যাসেই রাঢ়বঙ্গ এবং সেখানকার কয়লাখনি অঞ্চল প্রাধান্য পাওয়ায় তাঁর বেশিরভাগ উপন্যাস আঞ্চলিক উপন্যাস উপন্যাস হবার পথে অগ্রসর হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে তাঁর সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হল 'কয়লাকুঠির দেশ'। এটি তাঁর দ্বিতীয় পর্বের উপন্যাস। এই উপন্যাসটিতে শৈলজানন্দ বর্ধমান-বীরভূমের কয়লাখনি অঞ্চলের আঞ্চলিক পটভূমিকায় নব্য ধনী দেবু চাটুজ্যের পুত্র রঞ্জনের সঙ্গে বনেদি মুখুজ্যে বংশের সীতারাম মুখুজ্যের কন্যা মালার রোমান্টিক প্রণয় কাহিনি বর্ণনা করেছেন।

২) 'কয়লাকুঠি' :- এটি একটি ছোটোগল্প। এই গল্পটি ১৩২৯ বঙ্গাব্দের (১৯২২ খ্রিস্টাব্দ) কার্তিক সংখ্যায় মাসিক 'বসুমতী' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এটি শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের প্রথম উল্লেখযোগ্য ছোটোগল্প। মাত্র বাইশ বছর বয়সে তিনি এই গল্পটি রচনা করেন। এই গল্পটি রচনার মধ্য দিয়েই বাংলা সাহিত্যে তিনি বিশেষ পরিচিতি পান। এই ছোটোগল্পটিকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম আঞ্চলিক রচনা বা ছোটোগল্প বলা হয়। বাউরি সম্প্রদায়ের মেয়ে বিলাসীর সুতীব্র প্রেমতৃষ্ণা এবং তার করুণ পরিণতি নিয়ে গল্পটি রচিত। এই গল্পটি পড়ে অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত মন্তব্য করেছেন, --- "কে এই নবাগত? মাটির উপরকার শোভনশ্যামল আস্তরণ ছেড়ে একেবারে তার নিচে অন্ধকার গহ্বরে গিয়ে প্রবেশ করেছে? সেখানে কয়লার বদলে তুলে আনছে হীরামণি?"

★সুতরাং 'কয়লাকুঠির দেশ' এবং 'কয়লাকুঠি' কিন্তু ভিন্ন দুটি নাম বা রচনা। প্রথমটি উপন্যাস এবং দ্বিতীয়টি ছোটোগল্প। দুটি রচনাই কিন্তু আঞ্চলিক শ্রেণির। দুটি রচনার মধ্যে দূরত্ব রয়েছে (১৯৫৮-১৯২২) = ৩৬ বছরের।

  ¤ আরও দেখুন :-  



  • আলোচক : সৌম্য মাইতি
  • যোগাযোগ : ৬২৯০৩৭৭১৩৪
  • S.L.S.T  বাংলা অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে চাইলে ফোন করে যোগাযোগ করুন আমার ৬২৯০৩৭৭১৩৪ নম্বরে, অথবা আমার WhatssApp-তে ম্যাসেজ করুন ৮৭৬৮৮৩০২৩০ নম্বরে। ধন্যবাদ।

This is a premium content, you can continue reading this content in our Android App. Click the button below to continue. alert-info

Post a Comment

Previous Post Next Post