প্রমথ চৌধুরী থেকে গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
১) প্রমথ চৌধুরীর প্রথম প্রবন্ধ “জয়দেব”। এটি ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে (জ্যৈষ্ঠ ১২৯৭ বঙ্গাব্দ) শ্রীমতি স্বর্ণকুমারী দেবী সম্পাদিত “ভারতী” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
২) প্রমথ চৌধুরীর ছদ্মনাম – “বীরবল”। “বীরবল” ছদ্মনামে রচিত প্রমথ চৌধুরীর তিনটি প্রবন্ধগ্রন্থ হল - (ক) “বীরবলের হালখাতা” (৩রা সেপ্টেম্বর ১৯১৭), (খ) “বীরবলের টিপ্পনী” (১৯২১) এবং (গ) “দু-ইয়ার্কি” (১৯২১)।
৩) প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত পত্রিকা হল – “সবুজপত্র”।
৪) “সবুজপত্র” পত্রিকাটি প্রকাশিত হয় - ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে (১৩২১ বঙ্গাব্দ)।
৫) “সবুজপত্র” পত্রিকাটি ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ) পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছিল।
৬) প্রমথ চৌধুরী বাংলা সাহিত্যে প্রথম বিদ্রূপাত্মক প্রবন্ধ রচনা করেন।
৭) প্রমথ চৌধুরী ছিলেন বাংলা গদ্যে প্রথম চলিত ভাষারীতির প্রবর্তক। এছাড়া, তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যে ‘ইতালীয় সনেট’-এর প্রবর্তক। বুদ্ধিদীপ্ত তির্যকভঙ্গি তাঁর গদ্য-পদ্য সব রচনার প্রধান বৈশিষ্ট্য। শাণিত যুক্তি ও আলঙ্কারিক ভাষা প্রয়োগেও তিনি দক্ষ ছিলেন। তিনি ইংরেজি ও ফরাসি সাহিত্যে সুপন্ডিত ছিলেন। ফরাসি সনেটরীতি ট্রিয়লেট, তের্জারিমা ইত্যাদি বিদেশি কাব্যবন্ধ বাংলা কাব্যে তিনিই প্রথম প্রবর্তন করেন।
৮) কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমথ চৌধুরীর সনেট জাতীয় রচনাকে বলেছেন, - “ইস্পাতের ছুরি”।
৯) সাহিত্য-সমালোচক বারীন্দ্রকুমার ঘোষ বীরবলের গদ্যের ভাষাকে “সংকর ভাষা” বলেছেন।
১০) তাঁর “আমাদের ভাষা সংকট” প্রবন্ধটি “সবুজপত্র” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
১১) তাঁর “তেল-নুন-লকড়ি” প্রবন্ধটি “ভারতী” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
১২) প্রমথ চৌধুরীর আত্মজীবনীমূলক প্রবন্ধগ্রন্থের নাম – “আত্মকথা” (১৯৪৬/জৈষ্ঠ্য ১৩৫৩)।
১৩) তাঁর সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধ – “বঙ্গসাহিত্যের নবযুগ”, “বর্তমান বঙ্গসাহিত্য”, “বইপড়া”, “রামমোহন রায়”, “বীরবল”, “ভারতচন্দ্র”, “সাহিত্যে খেলা” ইত্যাদি।
১৪) বীরবলের কল্পনাপ্রবণ মনের পরিচয় পাওয়া যায় – “বর্ষা”, “ফাল্গুন”, “বর্ষার দিন”, “প্রাণের কথা”, “সুরের কথা” ইত্যাদি প্রবন্ধগুলিতে।
১৫) তাঁর ভাষাবিষয়ক প্রবন্ধ – “সাধুভাষা বনাম চলিতভাষা”, “আমাদের ভাষা সংকট”।
১৬) তাঁর সমাজবিষয়ক প্রবন্ধ - “তেল নুন লকড়ি”, “বর্তমান সভ্যতা বনাম বর্তমান যুদ্ধ”, “বাঙালি পেট্রিয়টিজম” ইত্যাদি।
১৭) প্রমথ চৌধুরী তাঁর “আত্মকথা” (১৯৪৬/জৈষ্ঠ্য ১৩৫৩) নামক আত্মজীবনীমূলক প্রবন্ধগ্রন্ধে নিজেকে “কৃষ্ণনাগরিক” বলে দাবি করেছেন।
১৮) ভারতচন্দ্রের তিনি যে একজন রসজ্ঞ পাঠক, তার প্রমাণ ভারতচন্দ্র থেকে এত বেশি উদ্ধৃতি সম্ভবতঃ আর কোন লেখকের রচনায় নেই।
১৯) ইংরেজিতে যাকে “Aesthetic Sense” বলে, প্রমথ চৌধুরী ছিলেন সেই রসরুচির সম্রাট।
২০) “সবুজপত্র” পত্রিকা প্রকাশের আগে তাঁর মাত্র কয়েকটি রচনা সাময়িক পত্রিকার অভ্যন্তরে আত্মগোপন করে ছিল - একমাত্র বই আকারে বেরিয়েছিল “সনেট-পঞ্চাশৎ” (২৫ মার্চ ১৯১৩)।
২১) “চৌধুরী-দম্পতি” (ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী ও প্রমথ চৌধুরী) সম্পর্কে বলা হয় “Bengal's most distinguished Couple.”
২২) “চার-ইয়ারি কথা”র স্টাইল ভাস্কর্যধর্মী আর “ঘরে বাইরে”-র স্টাইল গীতিম্পন্দী।
২৪) ১৩২২ বঙ্গাব্দের মাঘ সংখ্যা “মানসী” পত্রিকায় অগ্রহায়ণ সংখ্যা “সবুজপত্র” সাময়িক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রমথ চৌধুরীর “অলঙ্কারের সূত্রপাত” নামক প্রবন্ধটির একটি সমালোচনা বের হয়।
২৫) প্রমথ চৌধুরীকে “মননপ্রধান সাহিত্যিক” বলা হয়।
২৬) “নীললোহিত” ও ‘ঘোষাল’ চরিত্র দুটি প্রমথ চৌধুরীর অনবদ্য চরিত্র সৃষ্টি।
২৭) পাশ্চাত্য সাহিত্যের সঙ্গে যাঁদের পরিচয় আছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রমথ চৌধুরীকে ইংরেজি সাহিত্যে জি. কে. চেষ্টারটন (G. k. Chesterton : ১৮৭৪-১৯৩৬) ও ফরাসি সাহিত্যের মনটেইনেব–এর (১৫৩৩-১৫৯২) সঙ্গে তুলনা করেছেন।
২৮) “বীরবলী গদ্য”রীতির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন এমন কয়েকজন আধুনিক সাহিত্যিক হলেন - অন্নদাশঙ্কর রায়, ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, সঞ্জয় ভট্টাচার্য, সৈয়দ মুজতবা আলী প্রমুখ।
২৯) “ইউরোপীয় সাহিত্যের সাতসমুদ্রের নাবিক” বলা হয় প্রমুথ চৌধুরীকে।
৩০) প্রমথ চৌধুরী কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরকে “প্রাগাধুনিক বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ শিল্পী” বলে মনে করেন।
৩১) “যখ”, “ঝোট্টন” ও “লোট্টন”, “স্বল্প-গল্প”, “প্রগতি রহস্য” – প্রভৃতিকে ঠিক গল্প বলা সঙ্গত নয়। গল্পের একটি আভাস আছে মাত্র, কিন্তু কাহিনীর কোন সুস্পষ্ট বিন্যাস নেই। এই কারণে প্রমথ চৌধুরী এই শ্রেণীর গল্পকে “অণুকথা” বলেছেন।এক সময় এই গল্পগুলি পড়ে রবীন্দ্রনাথের চেকভের গল্পের কথা মনে পড়েছিল, “তোমার ছোট গল্প পড়ে চেকভের ছোট গল্প মনে পড়ল। যা মুখে এসেছে, তাই বলে গেছ হালকা চালে। এতে আলবোলার ধোঁয়ার গন্ধ পাওয়া যায়। এ রকম কিছুই-না লিখতে সাহসের দরকার করে। দেশের লোক সাহিত্যে ভূরিভোজন ভালবাসে - তারা ভাববে ফাঁকি দিয়েছ - কিম্বা ভাববে ঠাট্টা।”
৩২) তাঁর প্রথম গদ্যরচনা স্বনামে প্রকাশিত ও বিশুদ্ধ সাধু ভাষায় লেখা – “জয়দেব” (“ভারতী”, জ্যৈষ্ঠ ১২৯৭/১৮৯০ )।
৩৩) “বীরবল” ছদ্মনামে লিখতে শুরু করেন “ভারতী” পত্রিকায় (বৈশাখ ১৩০৯/১৯০২) - কথ্যভাষাশ্রয়ী বীরবলী রীতির এখানেই রীতিমত সূত্রপাত হয়।
৩৪) “সনেট-পঞ্চাশৎ” কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি সনেটই ফরাসি রীতিতে রচিত।
৩৫) প্রমথ চৌধুরীর গদ্য সাহিত্য “বীরবলী সাহিত্য” নামে পরিচিত।
৩৬) প্রমথ চৌধুরীই সর্বপ্রথম গল্পলেখক যিনি প্রবন্ধ ও গল্পের ব্যবধান অনেকখানি ঘুচিয়ে দিয়েছেন - সাহিত্যের এই দু’টি প্রকরণের ভাসুর-ভাদ্ৰবউ সম্পর্ক মানেননি। তাঁর প্রবন্ধ ও ছোটোগল্প তাই পরস্পরের পরিপূরক।
৩৭) প্রমথ চৌধুরীর প্রথম মৌলিক গল্প “প্রবাস-স্মৃতি”। “সবুজপত্র” প্রকাশের প্রায় পনের-ষোল বছর আগে “ভারতী” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
৩৮) “নয়ী আয়ী পুরানীকে দূর করো রে।” - প্রমথ চৌধুরী তাঁর “আত্মকথা”র দ্বিতীয় খণ্ডে এই গানটির কথা উল্লেখ করেছেন (মনফকিরা সংস্করণ, পৃ. ৮৫-৮৬)।
৩৯) বাংলা সাহিত্যে “বস্তুতন্ত্রতা” কথাটি প্রথম তোলেন বিপিনচন্দ্র পাল। ১৩১৮ বঙ্গাব্দের চৈত্র সংখ্যায় “বঙ্গদর্শন” পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকে তিনি “বস্তুতন্ত্রতাহীন” বলেছিলেন। ড.রাধাকমল মুখোপাধ্যায়ও কিছু দিন পর ঐ একই কথা তোলেন। রাধাকমল মুখোপাধ্যায়ের প্রবন্ধের (“সাহিত্যে বাস্তবতা”, সবুজপত্র, ১৩২১, পৃ. ৬৯৮-৭১০) প্রতিবাদে প্রমথ চৌধুরী “সবুজপত্র” পত্রিকায় একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছিলেন, সেটি হল - “বস্তুতন্ত্রতা বস্তু কি?” ‘সবুজ পত্র’, বর্ষ ১, সংখ্যা ১০, মাঘ ১৩২১, পৃ. ৭১১-৭২৮।
৪০) প্রমথ চৌধুরীর “রায়তের কথা” (১৯২৬) প্রবন্ধগ্রন্থের “রায়তের কথা” প্রবন্ধটি একটি অর্থনৈতিক প্রবন্ধ।
¤ তথ্যঋণ :-
১) 'বাংলা সাহিত্যিক চরিতমালা : আধুনিক যুগ' (প্রথম খণ্ড) [সেপ্টেম্বর ২০২১] - সৌম্যদীপ মাইতি, সাজিদুল মণ্ডল, সপ্তদীপ ঘোষ।
★প্রকাশনা সংস্থা :- 'বুকমার্ট', ৬, কলেজ রো, কলকাতা - ৭০০০০৯।
- আলোচক : সৌম্য মাইতি
- যোগাযোগ : ৬২৯০৩৭৭১৩৪
- S.L.S.T বাংলা অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে চাইলে ফোন করে যোগাযোগ করুন আমার ৬২৯০৩৭৭১৩৪ নম্বরে, অথবা আমার WhatssApp-তে ম্যাসেজ করুন ৮৭৬৮৮৩০২৩০ নম্বরে। ধন্যবাদ।
Post a Comment