ভানুভক্ত আচার্য : নেপালি কবি এবং লেখক
(১৮১৪ খ্রিস্টাব্দ --- ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দ)
আচার্য ভানুভক্ত ছিলেন একজন নেপালি কবি এবং লেখক। নেপালি সাহিত্যে তাঁর অবদান অনেক।
¤ জন্ম ও জন্মস্থান :-
১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে নেপালের তানাহু পেলার ছুন্দি রামঘা গ্রামে ভানুভক্ত আচার্য জন্মগ্রহণ করেন।
¤ পারিবারিক পরিচয় :-
ভানুভক্তের পিতা ধনঞ্জয় আচার্য ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। তাঁর পরিবার ছিল শিক্ষিত। তিনি তাঁর পিতামহ শ্রীকৃষ্ণ আচার্যের কাছ থেকে ধর্মসম্বন্ধীয় শিক্ষালাভ করেছিলেন।
¤ বাল্যজীবন :-
বাল্যকাল থেকেই ভানুভক্তের জ্ঞানের প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। রামায়ণ, মহাভারত তাঁর শুনতে খুব ভালো লাগত। তাই ছোটোবেলা থেকেই রামায়ণের প্রতি তাঁর একটা আকর্ষণ থেকে যায়।
¤ পেশা :- কবি ও লেখক।
¤ শিক্ষাজীবন :-
তাঁর এই শিক্ষালাভের একমাত্র প্রেরণদাতা ছিলেন তাঁর পিতামহ শ্রীকৃষ্ণ আচার্য।
¤ সংক্ষিপ্ত জীবন :-
ভানুভক্ত আচার্যের জীবনে পুষ্পশয্যা ছিল না। জীবনে তাঁকে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। কিন্তু কোনো কিছুই তাঁর মিশন থেকে তাঁকে নিরস্ত করতে পারেনি। সর্বদা তিনি সক্রিয় ও সতর্ক। নেপালি সাহিত্যে তাঁর অবদান অনেক। তিনি ছিলেন একজন সুদর্শন পণ্ডিত মানুষ। বন্ধুদের কাছ থেকে তিনি সর্বদা ভিন্ন ছিলেন। সর্বত্র একা থাকতে ভালোবাসেন। তাঁর মধ্যে ছিল প্রকৃতির অপরিমেয় প্রেম ও আগ্রহ। যখন তিনি কবিতা লিখতেন তখন তিনি সত্যিই প্রকৃতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হতেন। ভানুভক্ত আচার্য একটি উর্বর লেখক ছিলেন। তিনি বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। এমনকি একটি সুমধুর কবিতার মধ্যে সাধারণ কথোপকথনকে ঘুরিয়ে দিতে পারতেন অনায়াসেই। তাঁর মতো বিরল প্রতিভার অধিকারী খুব কমই দেখা যায়।
¤ সাহিত্যকর্ম :-
¤ রামায়ণের অনুবাদ :-
আচার্য ভানুভক্ত ছিলেন প্রথম নেপালীয় কবি যিনি মহান মহাকাব্য রামায়ণের অনুবাদ করেছিলেন সংস্কৃত ভাষা থেকে নেপালি ভাষায়। তাই ভানুভক্তকেই বলা হয়ে থাকে নেপালের প্রথম ও আদি কবি।
¤ কবিতা রচনা :-
১৮২০-১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভানুভক্ত আচার্য অনেক কবিতা লিখেছেন। দুর্ভাগ্যবশত, আজ আমরা এই লেখার সবকিছুই হারিয়েছি।
¤ চিন্তা-ভাবনার বহিঃপ্রকাশ :-
নেপাল এবং নেপালি ভাষার প্রেমী ভানুভক্ত আচার্য স্থীরপ্রতিজ্ঞ ছিলেন নতুন কিছু করে সমাজ অথবা দেশকে কিছু দেবার জন্য। সমাজ অথবা দেশের কল্যাণের প্রেরণা পেয়েছিলেন একজন শ্রমিক যে কিনা ঘাস কেটে জীবিকা নির্বাহণ করে, সে সমাজের লোকেদের জল পেতে সুবিধা হবে এই ভেবে একটা কুয়ো খুরে ফেলেন। এই মহান কাজ দেখে ভানুভক্ত আচার্য চিন্তা-ভাবনা করলেন যে যদি একজন নিরক্ষর দরিদ্র শ্রমিক সমাজের কল্যাণে কিছু করতে পেরে সকলের শ্রদ্ধার পাত্র হতে পারে তবে আমি একজন শিক্ষিত ধনী হয়ে সমাজের জন্য কেন কিছু করতে পারব না!
".... কুয়া খনাও
ঘাশী দরিদ্র ধরবো
তর বুদ্ধি কস্তো
ম ভানুভক্ত ধনী ভৈখন
আজ এস্তো ...."
ব্রাহ্মণ কুলে জন্মানোর জন্য রীতি অনুযায়ি পুজা-অর্চণাদির জন্য সংস্কৃতে জ্ঞান থাকা দরকার। সেই জন্য নিজ ঘরেই পিতামহের কাছে ভানুভক্ত আচার্য সংস্কৃত শিখতেন।
¤ সাহিত্যখ্যাতি :-
আচার্য ভানুভক্ত নেপালি সাহিত্যের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি একজন অসাধারণ কবি, যিনি নেপালি সাহিত্যের একমাত্র সাহিত্যিক যাঁর সাহিত্যখ্যাতি শুধু নেপালে নয়, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।
¤ ভারত ভ্রমণ :-
একজন তরুণ কবি হিসাবে ভানুভক্ত বই কেনার জন্য এবং তাঁর সাহিত্য সৌহার্দ্যময় করার জন্য একবার তিনি ভারতে আসেন। বেনারসে কিছুদিন অতিবাহিত করার পর তিনি কাঠমান্ডু (বর্তমান নেপালের রাজধানী শহর) ফিরে যান। আগমনের পথে কাঠমান্ডুর সৌন্দর্য্যে মোহিত ও অভিভূত হন। কাঠমান্ডুর সুন্দর মন্দির, ঝরঝরে পরিস্কার রাস্তা, একচেটিয়া হস্তশিল্প, বড়বাজার, মানুষ জনতার, সুন্দর ঘর ও প্রাসাদ ইত্যাদি তাঁর হৃদয়কে মুগ্ধ করেছিল। শুধু হৃদয় নয় তরুণ কবির আত্মাকে হরণ করেছিল।
¤ শেষজীবন :-
তাই ভানুভক্ত কাঠমান্ডুতেই আজীবন, অর্থাৎ শেষজীবন পর্যন্ত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আর শেষজীবন এখানেই কাটিয়েছিলেন।
¤ মৃত্যু ও মৃত্যুস্থান :-
১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে এই মহান পণ্ডিত ভানুভক্ত আচার্য নেপালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৪ বছর।
¤ আরও দেখুন :-
- আলোচক : সৌম্য মাইতি
- যোগাযোগ : ৬২৯০৩৭৭১৩৪
- S.L.S.T বাংলা অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে চাইলে ফোন করে যোগাযোগ করুন আমার ৬২৯০৩৭৭১৩৪ নম্বরে, অথবা আমার WhatssApp-তে ম্যাসেজ করুন ৮৭৬৮৮৩০২৩০ নম্বরে। ধন্যবাদ।
Post a Comment