একাদশ শ্রেণির 'সাহিত্যচর্চা' বইয়ের সমস্ত উৎস
এখানে পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের একাদশ শ্রেণির পাঠ্য বিষয়ের সমস্ত উৎস নিম্নে দেওয়া হল ---
¤ গল্প :-
১) "কর্তার ভূত" :-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "লিপিকা" ছোটোগল্প সংগ্রহের রচনা শুরু হয় ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে। শেষ হয় ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের মে-জুন মাসে। এর রচনা সংখ্যা ৩৯টি। তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত এটি। প্রথম পর্যায়ে ১৪টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮টি এবং তৃতীয় পর্যায়ে ১৭টি। পাঠ্যাংশে সংকলিত "কর্তার ভূত" গল্পটি "লিপিকা"র তৃতীয় পর্যায়ের ২ সংখ্যক রচনা। "কর্তার ভূত" রচনাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল "প্রবাসী" পত্রিকায় ১৩২৬ বঙ্গাব্দের আষাঢ় সংখ্যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "লিপিকা" ছোটোগল্প সংগ্রহ থেকে "কর্তার ভূত" রচনাটি সংকলিত।
২) "তেলেনাপোতা আবিষ্কার" :-
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে "যুগান্তর" পত্রিকার শারদ সংখ্যায় প্রেমেন্দ মিত্রের "তেলেনাপোতা আবিষ্কার" গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে প্রেমেন্দ্র মিত্রের ছোটোগল্প-সংকলন গ্রন্থ "কুড়িয়ে ছড়িয়ে"-তে "তেলেনাপোতা আবিষ্কার" গল্পটি অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত "প্রেমেন্দ্র মিত্রের শ্রেষ্ঠ গল্প" সংকলন গ্রন্থে গল্পটি স্থান লাভ করে। এই সংকলন গ্রন্থ থেকে গল্পটি নেওয়া হয়েছে।
৩) "ডাকাতের মা" :-
সতীনাথ ভাদুড়ীর লেখা "ডাকাতের মা" গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৬১ বঙ্গাব্দের শারদীয় "যুগান্তর" পত্রিকায়। গল্পটি পরে লেখকের তৃতীয় গল্পগ্রন্থ "চকাচকী"-তে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয় ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে। "চকাচকী" গল্পগ্রন্থের তৃতীয় গল্প হল "ডাকাতের মা"। এখান থেকে গল্পটি পাঠ্য হিসেবে সংকলিত হয়েছে।
¤ প্রবন্ধ :-
১) "সুয়েজখালে : হাঙর শিকার" :-
"গোলকুণ্ডা" জাহাজে চড়ে স্বামী বিবেকানন্দ দ্বিতীয় বার পাশ্চাত্য দেশে যাত্রা করেছিলেন ২০ জুন ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে। স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দ তখন "উদ্বোধন" পত্রিকার সম্পাদক। তাঁর অনুরোধে স্বামীজি তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্ত পত্রাকারে নিয়মিত লিখে পাঠান। "উদ্বোধন" পত্রিকার প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের বিভিন্ন সংখ্যায় তা "বিলাতযাত্রীর পত্র" নামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। স্বামী সারদানন্দ কয়েক বছর পরে তা "পরিব্রাজক" নাম দিয়ে পুস্তকাকারে প্রকাশ করেন। "সুয়েজখালে : হাঙর শিকার" এই গ্রন্থের একটি অধ্যায়। এই অধ্যায়টি অপরিবর্তিত অবস্থায় পুরোপুরি পাঠ্য হিসেবে সংকলিত হয়েছে। যাইহোক্, আলোচ্য প্রবন্ধটি মূলগ্রন্থ স্বামী বিবেকানন্দের "পরিব্রাজক" গ্রন্থ থেকে সংকলিত।
২) "গালিলিও" :-
বিজ্ঞানাচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসুর লেখা "গালিলিও" জীবনীমূলক প্রবন্ধটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের বিজ্ঞানবিষয়ক মাসিক পত্রিকা "জ্ঞান ও বিজ্ঞান"-এ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল সংখ্যায়। পরে "সত্যেন্দ্রনাথ বসু রচনা সংকলন" গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয় "গালিলিও" প্রবন্ধটি। সেখান থেকে "গালিলিও" প্রবন্ধটি উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্য হিসেবে গৃহীত হয়েছে।
¤ কবিতা :-
১) "নীলধ্বজের প্রতি জনা" :-
মাইকেল মধুসূদন দত্ত "বীরাঙ্গনা" কাব্যটি লেখেন ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে। কারণ "সোমপ্রকাশ" পত্রিকায় "বীরাঙ্গনা" কাব্যের সমালোচনা প্রকাশিত হয় ১০ মার্চ ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে। মাইকেল মধুসূদন দত্ত এই কাব্যগ্রন্থটি উৎসর্গ করেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়কে। উৎসর্গেপত্রে তারিখ আছে ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ১৬ ফাল্গুন। বাংলা ভাষায় মধুকবির দশমতম রচনা হল "বীরাঙ্গনা" কাব্য। "বীরাঙ্গনা" কাব্যের ১১ সংখ্যক সর্গ হল এই "নীলধ্বজের প্রতি জনা"। সুতরাং "নীলধ্বজের প্রতি জনা" নামীয় ১১ সংখ্যক সর্গটি মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত "বীরাঙ্গনা" কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
২) "বাড়ির কাছে আরশিনগর" :-
সাধক বাউল লালন ফকিরের "বাড়ির কাছে আরশিনগর" গানটি লালনশিষ্য "ভোলাই-এর গানের খাতা (প্রথম পর্ব)" থেকে সংকলিত। এটি ২৫২ (খ) নম্বর গান। পাঠ্যপুস্তকের সংকলিত গানে কিছু কিছু শব্দের পাঠান্তর হয়েছে। যেমন - দিনো (দিনও) , অঘাত (অগাধ) , মাতা (মাথা) , সর্নর (শূন্যের) , এক্ষানে (একখানে) ইত্যাদি।
৩) "দীপান্তরের বন্দিনী" :-
"ফণি-মনসা" হল কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ১১ সংখ্যক মুদ্রিত কাব্যগ্রন্থ। এটির প্রকাশকাল ২৯ জুলাই ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ। প্রথম সংস্করণের সূচিপত্র অনুযায়ী "দীপান্তরের বন্দিনী" কবিতাটি "ফণি-মনসা" কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় কবিতা। কবিতাটির রচনাস্থান ছিল হুগলি। কবিতাটি রচিত হয় ১৩৩১ বঙ্গাব্দে। ওই সনের ৭ মাঘ "বিজলী" পত্রিকাতে কবিতাটি "বন্দিনী" শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল। "ফণি-মনসা" কাব্যগ্রন্থ থেকে আলোচ্য "দীপান্তরের বন্দিনী" কবিতাটি সংকলিত হয়েছে।
৪) "নুন" :-
জয় গোস্বামী রচিত "ভুতুমভগবান" কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে। দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যাংশে অন্তর্ভুক্ত এই "নুন" কবিতাটি কবি জয় গোস্বামীর "ভুতুমভগবান" কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
¤ আন্তর্জাতিক গল্প :-
১) "বিশাল ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়ো" :-
"বিশাল ডানাওয়ালা থুড়থুড়ে বুড়ো" গল্পটির লেখক গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ। এটির রচনাকাল ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ। এই গল্পটি ছোটোদের জন্য লেখা। গল্পটি অনুবাদ করেছেন অধ্যাপক মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অনূদিত গ্রন্থ "সরল এরেন্দিরা আর তার নিদয়া ঠাকুমার অবিশ্বাস্য করুণ কাহিনী" ("এ ভেরি ওল্ড ম্যান উইথ এনর মাংস উইংস") গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
¤ ভারতীয় কবিতা :-
১) "শিক্ষার সার্কাস" :-
মালয়ালম কবি আইয়াপ্পা পানিকর ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে "শিক্ষার সার্কাস" কবিতাপাঠ রচনা করেন। কবিতাটি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছেন কবি উৎপলকুমার বসু। তাঁর লেখা "দিন ও রাত্রি" ("Days and Nights") কাব্যগ্রন্থ থেকে আলোচ্য কবিতাটি সংকলিত হয়েছে।
¤ পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ :-
১) "গুরু" :-
"অচলায়তন" নাটকটিকে অভিনয়ের উপযোগী সহজ করার উদ্দেশ্যে নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "অচলায়তন" নাটকটিকে কিছুটা রূপান্তরিত করে , কিছুটা লঘুতর করে নতুন রুপ দেন। তিনি নাটকটির নাম দেন "গুরু"। "গুরু" নাটকের ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছোট্ট একটি বাক্য লিখেছেন, -- "সহজে অভিনয় করিবার অভিপ্রায়ে 'অচলায়তন' নাটকটি 'গুরু' নামে এবং কিঞ্চিৎ রূপান্তরিত এবং লঘুতর আকারে প্রকাশ করা হইল।" "অচলায়তন" নাটকটি লেখা হয়েছিল ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের মে-জুন মাসে। ওই বছরই "প্রবাসী" পত্রিকার আশ্বিন সংখ্যায় "অচলায়তন" নাটকটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ২ আগস্ট ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে। "অচলায়তন" নাটকটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উৎসর্গ করেন যদুনাথ সরকার মহাশয়কে। "অচলায়তন" নাটকটির প্রকাশের পাঁচ বছর পরে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে "অচলায়তন"-এর রূপান্তরিত ও নতুন নাট্যরুপ "গুরু" রচনা করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। "অচলায়তন"-এর ছাপা একখানা বইয়ের ওপর পরিমার্জন করে ও প্রয়োজনে সাদা কাগজে লিখে নাট্যরুপটি গড়ে তোলা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "গুরু" নাটকের সম্পূর্ণ অংশটি "পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ" বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করে উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্য করা হয়েছে।
- আলোচক : সৌম্য মাইতি
- যোগাযোগ : ৬২৯০৩৭৭১৩৪
- S.L.S.T বাংলা অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে চাইলে ফোন করে যোগাযোগ করুন আমার ৬২৯০৩৭৭১৩৪ নম্বরে, অথবা আমার WhatssApp-তে ম্যাসেজ করুন ৮৭৬৮৮৩০২৩০ নম্বরে। ধন্যবাদ।
Post a Comment