মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্যধারার কবি পরিচয়
মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্যধারার মূলত তিনটি মঙ্গলকাব্যধারার (মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল ও ধর্মমঙ্গল) কবি পরিচয় সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল ---
¤ মঙ্গলকাব্যের ধারা বা শ্রেণিবিভাগ :-
অজস্র মঙ্গলকাব্যসমূহের মধ্যে তিনটি মঙ্গলকাব্যকে মুখ্যত গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই তিনটি ধারার মঙ্গলকাব্য হল ---
১. মনসামঙ্গল।
২. চণ্ডীমঙ্গল।
৩. ধর্মমঙ্গল।
★তথ্য :- এই তিনটি ধারার মঙ্গলকাব্যের মধ্যে একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কাব্যমূল্যে মনসামঙ্গল শ্রেষ্ঠ। ঐতিহাসিক মূল্য বিচার থেকে শুরু করে কাব্য সৌন্দর্য আলোচনা প্রসঙ্গে অবশ্যই মনসামঙ্গলের ধারাটিকে প্রাধান্য দিতে হয়। কি আখ্যান নির্মাণে, কি চরিত্র চিত্রণে মনসামঙ্গলের আখ্যান শৈল্পিক বিচারে নিঃসন্দেহে যুগোত্তীর্ণ।
¤ মনসামঙ্গল কাব্যধারার কবি পরিচয় :-
I. রাঢ়ের 'মনসামঙ্গল' :
(ক) বিষ্ণু পাল।
(খ) কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ।
(গ) বিপ্রদাস পিপিলাই।
II. পূর্ববঙ্গের 'পদ্মাপুরাণ' :
(ক) নারায়ণ দেব।
(খ) বিজয় গুপ্ত।
(গ) বংশীদাস।
III. উত্তরবঙ্গের 'মনসামঙ্গল' :
(ক) তন্ত্রবিভূতি।
(খ) জগজ্জীবন ঘোষাল।
(গ) জীবনকৃষ্ণ মৈত্র।
১. পঞ্চদশ শতাব্দী :
(ক) নারায়ণ দেব - 'পদ্মাপুরাণ'।
(খ) বিজয় গুপ্ত - 'পদ্মাপুরাণ'।
(গ) বিপ্রদাস পিপিলাই - 'মনসামঙ্গল' / 'মনসাবিজয়'।
২. ষোড়শ শতাব্দী :
(ক) গঙ্গাদাস সেন - 'মনসামঙ্গল'।
(খ) রায় বিনোদ - 'মনসামঙ্গল'।
৩. সপ্তদশ শতাব্দী :
(ক) কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ - 'মনসামঙ্গল' / 'জগতীমঙ্গল' / 'ক্ষেমানন্দী'।
(খ) দ্বিজ বংশীদাস - 'পদ্মাপুরাণ'।
(গ) তন্ত্রবিভূতি - 'মনসামঙ্গল' / 'মনসাপুরাণ'।
৪. অষ্টাদশ শতাব্দী :
(ক) জগজ্জীবন ঘোষাল - 'মনসামঙ্গল'।
(খ) ষষ্ঠীবর দত্ত - 'পদ্মাপুরাণ'।
(গ) জীবন মৈত্র - 'মনসামঙ্গল'।
(ঘ) দ্বিজ রসিক - 'মনসামঙ্গল'।
(ঙ) বিষ্ণু পাল - 'মনসামঙ্গল'।
(চ) বাণেশ্বর রায় - 'মনসামঙ্গল'।
★তথ্য :- মনসামঙ্গল কাব্যের আদি কবি হলেন কানা হরিদত্ত এবং এই কাব্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি হলেন বিজয় গুপ্ত। কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ হলেন মনসামঙ্গল কাব্যধারার প্রথম কবি যাঁর কাব্য প্রথম মুদ্রণ সৌভাগ্য লাভ করে। তাঁর 'জগতীমঙ্গল' বা 'ক্ষেমানন্দী' নামের মনসামঙ্গল কাব্যটি ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশনারীদের সহায়তায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম মুদ্রণ লাভ করেছে। আধুনিক কালে মনসামঙ্গল কাব্য অবলম্বনে বিশিষ্ট নাট্যকার শম্ভু মিত্র 'চাঁদ বণিকের পালা' (১৯৭৮/মাঘ ১৩৮৪) নামে একটি নাটক রচনা করেন।
¤ চণ্ডীমঙ্গল কাব্যধারার কবি পরিচয় :-
১. ষোড়শ শতাব্দী :
(ক) মানিক দত্ত - 'চণ্ডীমঙ্গল'।
(খ) দ্বিজমাধব - 'মঙ্গলচণ্ডীর গীত'।
(গ) কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তী - 'কবিকঙ্কণ-চণ্ডী'।
২. সপ্তদশ শতাব্দী :
(ক) দ্বিজ রামদেব - 'অভয়ামঙ্গল'।
৩. অষ্টাদশ শতাব্দী :
(ক) মুক্তরাম সেন - 'সারদামঙ্গল'।
(খ) হরিরাম - 'চণ্ডীমঙ্গল'।
(গ) ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর - 'অন্নদামঙ্গল'।
(ঘ) জয়নারায়ণ সেন - 'চণ্ডীমঙ্গল'।
(ঙ) ভবানীশঙ্কর - 'মঙ্গলচণ্ডীর পাঞ্চালিকা'।
(চ) অকিঞ্চন চক্রবর্তী - 'চণ্ডীমঙ্গল'।
★তথ্য :- এছাড়াও দ্বিজ বলরাম, দ্বিজ জনার্দন, মুক্তরাম সেন, রামানন্দ যতির লেখা 'চণ্ডীমঙ্গল পাঁচালি' রচনা এবং মুকুন্দ মিশ্রের 'বাসুলীমঙ্গল' ও রাধাকৃষ্ণ দাসের 'গোসানীমঙ্গল' উল্লেখযোগ্য। জনশ্রুতি অনুসারে চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের আদি কবি হলেন মানিক দত্ত এবং এই কাব্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি হলেন কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তী।
¤ ধর্মমঙ্গল কাব্যধারার কবি পরিচয় :-
১. ষোড়শ শতাব্দী :
(ক) মানিক গাঙ্গুলি - 'ধর্মমঙ্গল'।
(খ) খেলারাম - 'ধর্মমঙ্গল'।
(গ) শ্যাম পণ্ডিত - 'ধর্মমঙ্গল'।
২. সপ্তদশ শতাব্দী :
(ক) রূপরাম চক্রবর্তী - 'ধর্মমঙ্গল'।
(খ) রাজারাম দাস - 'ধর্মমঙ্গল'।
৩. অষ্টাদশ শতাব্দী :
(ক) সীতারাম দাস - 'অনাদিমঙ্গল'।
(খ) ঘনরাম চক্রবর্তী - 'শ্রীধর্ম্মমঙ্গল'।
(গ) রামচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় - 'ধর্মমঙ্গল'।
(ঘ) সহদেব চক্রবর্তী - 'ধর্মমঙ্গল'।
(ঙ) নরসিংহ বসু - 'ধর্মমঙ্গল'।
(চ) হৃদয়রাম সাউ - 'ধর্মমঙ্গল'।
★তথ্য :- ধর্মমঙ্গল কাব্যের আদি কবি হলেন ময়ূর ভট্ট এবং এই কাব্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি হলেন ঘনরাম চক্রবর্তী। এছাড়া অন্যতম প্রাচীন কবি হলেন আদিরূপরাম। অন্যান্য কবিদের যে নামগুলি পাওয়া যায় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল --- গোবিন্দরাম বন্দ্যোপাধ্যায়, রামনারায়ণ, রামকান্ত রায়, ধর্মদাস বৈদ্য, বিশ্বনাথ দাস প্রমুখ।
¤ তথ্যঋণ :-
১) 'বাংলা সাহিত্যের সামগ্রিক ইতিহাস' (ডিসেম্বর ২০১৮) - ডঃ দীপঙ্কর মল্লিক ও ডঃ দেবারতি মল্লিক।
★প্রকাশনা সংস্থা :- 'দিয়া পাবলিকেশন', ৪৪/১ এ বেনিয়াটোলা লেন, কলকাতা - ৭০০০০৯।
- আলোচক : সৌম্য মাইতি
- যোগাযোগ : ৬২৯০৩৭৭১৩৪
- S.L.S.T বাংলা অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে চাইলে ফোন করে যোগাযোগ করুন আমার ৬২৯০৩৭৭১৩৪ নম্বরে, অথবা আমার WhatssApp-তে ম্যাসেজ করুন ৮৭৬৮৮৩০২৩০ নম্বরে। ধন্যবাদ।
Post a Comment