NEW :
Loading contents...

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমগ্র সাহিত্যের শ্রেণিবিন্যাস

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস, ছোটোগল্প, নাটক ও প্রবন্ধগ্রন্থের শ্রেণিবিন্যাস পরপর সাজিয়ে তথ্যসহকারে নিম্নে দেওয়া হল ----

¤ কাব্যগ্রন্থ :- বিপুল কালসীমায় পরিব্যাপ্ত রবীন্দ্রনাথের কবিতা বা কাব্যগ্রন্থগুলিকে বিশেষ প্রবণতা অনুসারে কয়েকটি পর্যায়ে বিন্যস্ত করা যায়। যেমন ---

১. নির্মাণ বা সূচনা পর্যায় (১৮৭৮-১৮৮১) :

(ক) 'কবিকাহিনী' (১৮৭৮)।

(খ) 'বনফুল' (১৮৮০)।

(গ) 'ভগ্নহৃদয়' (১৮৮১)।

★তথ্য :- এই পর্যায়ের কাব্যগ্রন্থগুলিতে বিহারীলাল চক্রবর্তী, অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরী প্রমুখ কবির প্রভাব লক্ষ করা যায় বলে কবি নিজেই এগুলিকে বলেছেন 'কপিবুকের কবিতা'।

২. বিকাশ বা উন্মেষ পর্যায় (১৮৮২-১৮৮৬) :

(ক) 'সন্ধ্যাসংগীত' (১৮৮২)।

(খ) 'প্রভাতসংগীত' (১৮৮৩)।

(গ) 'ছবি ও গান' (১৮৮৪)।

(ঘ) 'শৈশবসংগীত' (১৮৮৪)।

(ঙ) 'ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী' (১৮৮৪)।

(চ) 'কড়ি ও কোমল' (১৮৮৬)।

★তথ্য :- এই পর্যায়ের কাব্যগ্রন্থগুলিতেই প্রথম খুঁজে পাওয়া যায় রবীন্দ্রকাব্যের বৈশিষ্ট্য।

৩. ঐশ্বর্য বা সমৃদ্ধি পর্যায় (১৮৯০-১৮৯৬) :

(ক) 'মানসী' (১৮৯০)।

(খ) 'চিত্রাঙ্গদা' (১৮৯২)।

(গ) 'সোনার তরী' (১৮৯৪)।

(ঘ) 'নদী' (১৮৯৬)।

(ঙ) 'চিত্রা' (১৮৯৬)।

(চ) 'চৈতালি' (১৮৯৬)।

★তথ্য :- এই পর্যায়ের কাব্যগ্রন্থ বা কবিতাগুলির মধ্যে রবীন্দ্রনাথের কাব্য-দর্শনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ 'জীবনদেবতা' তত্ত্বের সুস্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়।

৪. অন্তর্বর্তী বা অতীত ঐশ্বর্য পর্যায় (১৮৯৬-১৯১০) :

(ক) 'কণিকা' (১৮৯৯)।

(খ) 'কথা' (১৯০০)।

(গ) 'কাহিনী' (১৯০০)।

(ঘ) 'ক্ষণিকা' (১৯০০)।

(ঙ) 'কল্পনা' (১৯০০)।

(চ) 'নৈবেদ্য' (১৯০১)।

(ছ) 'স্মরণ' (কাব্যগ্রন্থ-ভুক্ত : ১৯০৩/১৩১০ ও গ্রন্থাকারে প্রকাশ : ১৯১৪/১৩২১)।

(জ) 'শিশু' (কাব্যগ্রন্থ-ভুক্ত : ১৯০৩ ও গ্রন্থাকারে প্রকাশ : ১৯০৯)।

(ঝ) 'উৎসর্গ' (কাব্যগ্রন্থ-ভুক্ত : ১৯০৪/১৩১০ ও গ্রন্থাকারে প্রকাশ : ১৯১৪/১৩২১)।

(ঞ) 'খেয়া' (১৯০৬)।

(ট) 'কথা ও কাহিনী' (১৯০৮)।

★তথ্য :- এই পর্যায়ের কাব্যগ্রন্থগুলিতে প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্যের প্রতি কবি আকর্ষিত হয়েছেন।

৫. গীতাঞ্জলি বা অধ্যাত্ম পর্যায় (১৯১০-১৯১৫) :

(ক) 'গীতাঞ্জলি' (১৯১০/১৩১৭)।

(খ) 'গীতিমাল্য' (১৯১৪/১৩২১)।

(গ) 'গীতালি' (১৯১৪/১৩২১)।

★তথ্য :- এই পর্যায়ের কাব্যগ্রন্থগুলিতে রবীন্দ্রনাথের নিজস্ব অধ্যাত্মচেতনার প্রকাশ ঘটেছে।

৬. বলাকা পর্যায় (১৯১৬-১৯২৯) :

(ক) 'বলাকা' (১৯১৬)।

(খ) 'পলাতকা' (১৯১৮)।

(গ) 'শিশু ভোলানাথ' (১৯২২)।

(ঘ) 'পূরবী' (১৯২৫)।

(ঙ) 'লেখন' (১৯২৭)।

(চ) 'মহুয়া' (১৯২৯)।

★তথ্য :- এই পর্যায়ের কাব্যগ্রন্থগুলিতে মুক্ত ছন্দে কবির গতিতত্ত্ব ও যৌবনতত্ত্বের অপরূপ প্রকাশ ঘটেছে।

৭. পুনশ্চ বা গদ্যকবিতা পর্যায় (১৯৩০-১৯৩৬) :

(ক) 'বণবাণী' (১৯৩১)।

(খ) 'পরিশেষ' (১৯৩২)।

(গ) 'পুনশ্চ' (১৯৩২)।

(ঘ) 'বিচিত্রতা' (১৯৩৩)।

(ঙ) 'শেষ সপ্তক' (১৯৩৫)।

(চ) 'বীথিকা' (১৯৩৫)।

(ছ) 'পত্রপুট' (১৯৩৬)।

(জ) 'শ্যামলী' (১৯৩৬)।

★তথ্য :- এই পর্যায়ের কাব্যগ্রন্থগুলির প্রায় সব কবিতাই গদ্যকবিতা বা গদ্যছন্দে লেখা। এই সব কবিতায় রবীন্দ্রনাথ নবীন বিস্ময়ে ধরা দেন পাঠকের কাছে।

৮. অন্তিম বা শেষ বা গোধূলি পর্যায় (১৯৩৬-১৯৪১) :

(ক) 'খাপছাড়া' (১৯৩৭)।

(খ) 'ছড়ার ছবি' (১৯৩৭)।

(গ) 'প্রান্তিক' (১৯৩৮)।

(ঘ) 'সেঁজুতি' (১৯৩৮)।

(ঙ) 'প্রহাসিনী' (১৯৩৯)।

(চ) 'আকাশ-প্রদীপ' (১৯৩৯)।

(ছ) 'নবজাতক' (১৯৪০)।

(জ) 'সানাই' (১৯৪০)।

(ঝ) 'রোগশ্যায়' (১৯৪০)।

(ঞ) 'আরোগ্য' (১৯৪১)।

(ট) 'জন্মদিনে' (১৯৪১)।

(ঠ) 'শেষ লেখা' (১৯৪১)।

★তথ্য :- এই পর্যায়ের কাব্যগ্রন্থগুলিতে জীবনসায়াহ্নে উপনীত কবির জীবন, মৃত্যু ও বিশ্বজগৎ সম্বন্ধীয় গভীর উপলব্ধি প্রকাশিত হয়েছে মুক্তক ছন্দের আঙ্গিকে।

¤ উপন্যাস :- কিছুটা বিতর্কের অবকাশ রেখেও বিষয়ের বৈচিত্র্যে রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসকে কয়েকটি পর্যায়ে বিন্যস্ত করা যায়। যথা ---

১. ইতিহাস ও রোমান্সনির্ভর উপন্যাস :

(ক) 'বউ-ঠাকুরাণীর হাট' (১১ জানুয়ারি ১৮৮৩)।

(খ) 'রাজর্ষি' (ফেব্রুয়ারি ১৮৮৭/১২৯৩)।

২. জীবনসমস্যামূলক সামাজিক উপন্যাস :

(ক) 'চোখের বালি' (৫ এপ্রিল ১৯০৩/১৩০৯)।

(খ) 'নৌকাডুবি' (২ সেপ্টেম্বর ১৯০৬/১৩১৩)।

(গ) 'যোগাযোগ' (১৯২৯/আষাঢ় ১৩৩৬)।

৩. রাজনৈতিক ও সমাজনীতিমূলক (স্বদেশচেতনামূলক) উপন্যাস :

(ক) 'গোরা' (১ ফেব্রুয়ারি ১৯১০/১৩১৬)।

(খ) 'ঘরে বাইরে' (১৯১৬/১৩২৩) [চেতনাশ্রয়ী উপন্যাস]।

(গ) 'চার অধ্যায়' (১৯৩৪/অগ্রহায়ণ ১৩৪১) [চেতনাশ্রয়ী উপন্যাস]।

৪. রোমান্টিক ও তত্ত্বমূলক উপন্যাস :

(ক) 'চতুরঙ্গ' (১৯১৬/ভাদ্র ১৩২৩)।

(খ) 'শেষের কবিতা' (১৯২৯/ভাদ্র ১৩৩৬) [কাব্যোপন্যাস]।

(গ) 'দুই বোন' (১৯৩৩/ফাল্গুন ১৩৩৯)।

(ঘ) 'মালঞ্চ' (১৯৩৪/চৈত্র ১৩৪০)।

★বি. দ্র. - রবীন্দ্রনাথ তরুণ বয়সে 'করুণা' (১৮৭৭-৭৮) নামে একটি উপন্যাস লেখেন যা 'ভারতী' পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসে এক কিশোরীর বেদনাময় জীবনের কথা ফুটে উঠেছে। শিল্পরূপ অথবা চরিত্রচিত্রণ কোনোদিক থেকেই এটি উচ্চমানের রচনা নয় এবং রবীন্দ্রনাথ একে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন নি।

¤ ছোটোগল্প :- বিষয়ের বিচারে রবীন্দ্রনাথের ছোটোগল্পকে কয়েকটি পর্যায়ে বিন্যস্ত করা যায়। সেগুলি হল ---

১. পারিবারিক গল্প :

(ক) 'স্বর্ণমৃগ' (১৮৯২/ভাদ্র-আশ্বিন ১২৯৯)।

(খ) 'দান-প্রতিদান' (১৮৯৩/চৈত্র ১২৯৯)।

(গ) 'শাস্তি' (১৮৯৩/শ্রাবণ ১৩০০)।

(ঘ) 'দিদি' (১৮৯৫/চৈত্র ১৩০১)।

(ঙ) 'ঠাকুরদা' (১৮৯৫/জ্যৈষ্ঠ ১৩০২)।

(চ) 'রাসমণির ছেলে' (১৯১১/আশ্বিন ১৩১৮)।

২. সামাজিক গল্প :

(ক) 'দেনাপাওনা' (১২৯৮)।

(খ) 'রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা' (১২৯৮)।

(গ) 'বিচারক' (১৮৯৪/পৌষ ১৩০১)।

(ঘ) 'দুর্বুদ্ধি' (১৯০০/ভাদ্র ১৩০৭)।

(ঙ) 'নষ্টনীড়' (১৯০১/বৈশাখ-অগ্রহায়ণ ১৩০৮)।

(চ) 'হৈমন্তী' (১৯১৪/জ্যৈষ্ঠ ১৩২১)।

(ছ) 'স্ত্রীর পত্র' (১৯১৪/শ্রাবণ ১৩২১)।

(জ) 'ভাইফোঁটা' (১৯১৪/ভাদ্র ১৩২১)।

(ঝ) 'পয়লা নম্বর' (১৯১৭/আষাঢ় ১৩২৪)।

(ঞ) 'নামঞ্জুর গল্প' (১৯২৫/অগ্রহায়ণ ১৩৩২)।

৩. প্রকৃতিবিষয়ক গল্প :

(ক) 'সুভা' (১৮৯৩/মাঘ ১২৯৯)।

(খ) 'আপদ' (১৮৯৫/ফাল্গুন ১৩০১)।

(গ) 'অতিথি' (১৮৯৫/ভাদ্র-কার্তিক ১৩০২)।

৪. প্রেমবিষয়ক গল্প :

(ক) 'দালিয়া' (১৮৯২/মাঘ ১২৯৮)।

(খ) 'মধ্যবর্তিনী' (১৮৯৩/জ্যৈষ্ঠ ১৩০০)।

(গ) 'সমাপ্তি' (১৮৯৩/আশ্বিন-কার্তিক ১৩০০)।

(ঘ) 'দৃষ্টিদান' (১৮৯৮/পৌষ ১৩০৫)।

(ঙ) 'নষ্টনীড়' (১৯০১/বৈশাখ-অগ্রহায়ণ ১৩০৮)।

৫. অতিপ্রাকৃতবিষয়ক বা অলৌকিক গল্প :

(ক) 'নিশীথে' (১৮৯৫/মাঘ ১৩০১)।

(খ) 'ক্ষুধিত পাষাণ' (১৮৯৫/শ্রাবণ ১৩০২)।

(গ) 'মণিহারা' (১৮৯৮/অগ্রহায়ণ ১৩০৫)।

★বি. দ্র. - 'তিনসঙ্গী' (১৯৪১/১৩৪৭) : রবীন্দ্রনাথের পরিণত বয়সের লেখা তিনটি গল্পের সংকলন গ্রন্থ 'তিনসঙ্গী'। রবীন্দ্রনাথের অন্য সব গল্প থেকে এক দুর্বার ব্যতিক্রম। এই গল্প-সংকলন গ্রন্থের গল্পগুলি স্বতন্ত্র উল্লেখের দাবি রাখে‌। 'তিনসঙ্গী'র প্রথম গল্প 'ল্যাবরেটরি' (১৫ আশ্বিন ১৩৪৭) গল্পটি কঠিন দীপ্তিতে সমুজ্জ্বল। এই গল্পের নায়িকা সোহিনী পঞ্জাবের মেয়ে যার আগে বিয়ে হলেও সে আসে বলিষ্ঠ বীর্যবান বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ নন্দকিশোরের কাছে এবং নতুন করে গড়ে তোলে তার জীবন। সোহিনী এক আশ্চর্য মেয়ে -- তার ব্যবহারে সংকোচ নেই, শান দেওয়া ছুরির মতো তার হাসি, আর তার ভেতর থেকে ঝকঝক করছে ক্যারেকটারের তেজ। ব্যবসায়ে নামা নন্দকিশোর এক মূল্যবান ল্যাবরেটরি গড়ে তোলে অনেক অর্থে অনেক সাধনায়। তার মৃত্যুর পর দৃঢ় কঠিন সোহিনী তার স্বামীর প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন জনের লোলুপ প্রয়াস থেকে বাঁচিয়ে রাখে। তার মেয়ে নীলা গৌরবর্ণ সুন্দরী যার বিয়ের জন্য সোহিনী একটা যোগ্যপাত্র খুঁজছিল যে ছেলে তাদের ল্যাবরেটরির দায়িত্ব নেবে। সে পেল রেবতীকে যে বিজ্ঞানের অত্যন্ত কৃতী ছাত্র। কিন্তু লঘুচেতা নীলার অনেক প্রণয়ী যারা নীলাকে পেতে চায় এবং নীলার সম্পত্তির দিকেই তাদের বেশি লোভ। বিদ্বান মেধাবী কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে বোকা রেবতীকে নীলা প্রলুব্ধ করে তার অসৎ নীতিহীন বন্ধুদের কাছে নিয়ে আসে। একদিন নীলা বাড়িতে পার্টি দেয় সোহিনীর অনুপস্থিতিতে এবং সে ও তার বন্ধুরা সেখানে আসে রেবতীকে প্রায় কবজা করে ফেলে যাকে তারা তাদের প্রতিষ্ঠানের সভাপতি করবে এবং নীলার সাহায্যে নীলা ও রেবতীর সব সম্পত্তি হাতিয়ে নেবে। মত্ত উচ্ছৃঙ্খল পার্টির মধ্যে সোহিনী আসে এবং ভয়ংকর কথা ঘোষণা করে যে নীলা নন্দকিশোরের মেয়ে নয় এবং নন্দকিশোর মৃত্যুকালে তা বলে দলিল করে গেছেন। বিমূঢ় স্তম্ভিত হয়ে নীলার মধুলোভী প্রিয়জনরা চলে যায় এবং রেবতীও তার প্রবল প্রতাপশালী পিসীমার ডাকে 'সুড়সুড় করে' চলে যায়। ভাবনায় প্রখর, চরিত্র চিত্রণে অসামান্য (বিশেষত সোহিনীর চরিত্র যা বাংলা সাহিত্যে অনন্য) এবং আঙ্গিকে ঋদ্ধ 'ল্যাবরেটরি' গল্প বাংলা সাহিত্যে অনন্য। 'তিনসঙ্গী'র অন্য দুটি গল্প যথাক্রমে 'রবিবার' (২৫ আশ্বিন ১৩৪৬) ও 'শেষকথা' (ফাল্গুন ১৩৪৬) সুখপাঠ্য হলেও অপর গল্প অর্থাৎ 'ল্যাবরেটরি'র মতো উচ্চপর্যায়ের নয়।

¤ নাটক :- রবীন্দ্রনাথের নাটকগুলিকে কয়েকটি পর্যায়ে বিন্যস্ত করা যায়। যেমন ---

১. গীতি ও কাব্যধর্মী নাটক :

(ক) 'বাল্মীকি প্রতিভা' (১৮৮১) [প্রথম প্রকাশিত নাটক]।

(খ) 'রুদ্রচণ্ড' (২৫ জুন ১৮৮১/১৮০৩ শক) [প্রথম রচিত নাটক]।

(গ) 'কালমৃগয়া' (১৮৮২)।

(ঘ) 'প্রকৃতির প্রতিশোধ' (১৮৮৪)।

() 'চিত্রাঙ্গদা' (১৮৯২)।

(চ)'বিদায় অভিশাপ' (১৮৯৪)।

২. প্রচলিত রীতিনিষ্ঠ নাটক :

(ক) 'রাজা ও রাণী' (১৮৮৯) [রোমান্টিক ট্র্যাজেডি]।

(খ) 'বিসর্জন' (১৮৯০) [রোমান্টিক ট্র্যাজেডি]।

(গ) 'মুকুট' (১৯০৮)।

(ঘ) 'প্রায়শ্চিত্ত' (১৯০৯/১৩১৬)।

(ঙ) 'তপতী' (১৯২৯)।

(চ) 'বাঁশরী' (১৯৩৩)।

৩. কৌতুক বা হাস্যরসের নাটক :

(ক) 'গোড়ায় গলদ' (১৮৯২)।

(খ) 'বৈকুণ্ঠের খাতা' (১৮৯৭)।

(গ) 'ব্যঙ্গকৌতুক' (১৯০৭)।

(ঘ) 'শেষরক্ষা' (১৯২৮)।

(ঙ) 'চিরকুমার সভা' (১৯৩৬)।

৪. ঋতুনাটক :

(ক) 'শারদোৎসব' (১৯০৮)।

(খ) 'ফাল্গুনী' (১৯১৬)।

(গ) 'বসন্ত' (১৯২৩/১৩২৯)।

(ঘ) 'শেষবর্ষণ' (১৯২৫)।

(ঙ) 'নটরাজ ঋতুরঙ্গশালা'।

(চ) 'শ্রাবণ গাথা' (১৯২৮)।

৫. নৃত্যনাটক :

(ক) 'নটীর পূজা' (১৯২৬)।

(খ) 'শাপমোচন' (১৯৩৩)।

(গ) 'তাসের দেশ' (১৯৩৩)।

(ঘ) 'চণ্ডালিকা' (১৯৩৩)।

(ঙ) 'শ্যামা' (১৯৩৯)।

৬. রূপক ও সাংকেতিক নাটক :

(ক) 'রাজা' (১৯১০)।

(খ) 'ডাকঘর' (১৬ জানুয়ারি ১৯১২)।

(গ) 'অচলায়তন' (রচনাকাল : ১৯১১ ও গ্রন্থাকারে প্রকাশকাল : ২ আগস্ট ১৯১২)।

(ঘ) 'অরূপরতন' (১৯১৯)।

(ঙ) 'মুক্তধারা' (১৯২২/১৩২৯)।

(চ) 'রক্তকরবী' (১৯২৬/১৩৩৩)।

(ছ) 'কালের যাত্রা' (১৯৩২)।

¤ প্রবন্ধগ্রন্থ :- রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধ-সাহিত্যকে কয়েকটি পর্যায়ে বিন্যস্ত করা যায়। যথা ---

১. ভাষা ও সাহিত্যবিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ :

(ক) 'সাহিত্য' (১৯০৭)।

(খ) 'আধুনিক সাহিত্য' (১৯০৭)।

(গ) 'লোকসাহিত্য' (১৯০৭)।

(ঘ) 'প্রাচীন সাহিত্য' (১৯০৮)।

(ঙ) 'শব্দতত্ত্ব' (১৯০৯)।

(চ) 'সাহিত্যের পথে' (১৯৩৬)।

(ছ) 'ছন্দ' (১৯৩৬)।

(জ) 'বাংলাভাষা পরিচয়' (১৯৩৮)।

(ঝ) 'সাহিত্যের স্বরূপ' (১ বৈশাখ ১৩৫০) [মরণোত্তর প্রকাশিত]

★বি. দ্র. - নিতান্ত কিশোর বয়স থেকেই রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য সমালোচনায় ব্রতী হন। 'জ্ঞানাঙ্কুর' ও 'প্রতিবিম্ব' পত্রিকায় ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে (কার্তিক ১২৮৩) রবীন্দ্রনাথের সমালোচনা প্রকাশিত হয় -- 'ভুবনমোহিনী প্রতিভা', 'অবসর সরোজিনী' ও 'দুঃখ সঙ্গিনী'। তার মধ্যে 'ভুবনমোহিনী প্রতিভা' নবীনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের লেখা, 'অবসর সরোজিনী' রাজকৃষ্ণ রায়ের লেখা ও 'দুঃখ সঙ্গিনী' হরিশচন্দ্র নিয়োগীর লেখা। এরপর ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে 'ভারতী' পত্রিকায় মাইকেল মধুসূদন দত্তের 'মেঘনাদবধকাব্য' (১৮৬১)-এর সমালোচনা প্রকাশিত হয়। যেখানে তিনি তীক্ষ্ণভাবে ওই কাব্যের বিরূপ সমালোচনা করেন (অবশ্য পরবর্তীকালে এজন্য তিনি দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন)। এই পত্রিকায় তিনি আরও সমালোচনামূলক নিবন্ধ লেখেন। রবীন্দ্রনাথ পরবর্তীকালে আরো গভীর ভাবময় ও রসনিবিড় সাহিত্য-প্রবন্ধ রচনা করেন।

২. স্বদেশ, সমাজ ও রাজনীতিবিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ :

(ক) 'ভারতবর্ষ' (১৯০৬)।

(খ) 'স্বদেশ' (১৯০৮)।

(গ) 'কালান্তর' (১৯৩৭)।

(ঘ) 'সভ্যতার সংকট' (১৯৪১)।

৩. শিক্ষা, ধর্ম ও দর্শনবিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ :

(ক) 'শিক্ষা' (১৯০৮) [শিক্ষাবিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ]।

(খ) 'ধর্ম' (১৯০৯) [ধর্ম ও দর্শনবিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ]।

(গ) 'শান্তিনিকেতন' (১৯০৯-১৬) [ধর্ম ও দর্শনবিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ]।

(ঘ) 'মানুষের ধর্ম' (১৯৩৩) [ধর্ম ও দর্শনবিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ]।

৪. বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ :

(ক) 'বিশ্বপরিচয়' (১৯৩৭)

★তথ্য - এই জাতীয় রচনাতেও রবীন্দ্রনাথ আশ্চর্য নিপুণ। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে তিনি প্রাণতত্ত্বের ও সৃষ্টিতত্ত্বের প্রকাশ ঘটিয়েছেন এখানে। বিশ্বের ও মহাশূন্যের রহস্যকে তিনি তুলে ধরেছেন এই গ্রন্থে। এই গ্রন্থের আলোচ্য বিষয় হল -- পরমাণুলোক, নক্ষত্রলোক, সৌরজগৎ, গ্রহলোক এবং ভূলোক।

৫. আত্মপরিচয় ও জীবনীমূলক রচনা :

(ক) 'জীবনস্মৃতি' (২৫ জুলাই ১৯১২/১৩১৯) [আত্মপরিচয় বা আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ]।

(খ) 'ছেলেবেলা' (১৯৪০/ভাদ্র ১৩৪৭) [আত্মপরিচয়]।

(গ) 'আত্মপরিচয়' (১৯৪৩/১ বৈশাখ ১৩৫০) [আত্মপরিচয়-মরণোত্তর প্রকাশিত]।

(ঘ) 'চারিত্রপূজা' (১৯০৭) [জীবনীমূলক রচনা বা জীবনীগ্রন্থ]।

(ঙ) 'ভারতপথিক রামমোহন রায়' (১৯৩৩) [জীবনীমূলক রচনা]।

(চ) 'মহাত্মা গান্ধী' [জীবনীমূলক রচনা]।

(ছ) 'বুদ্ধদেব' [জীবনীমূলক রচনা] (১৯৫৫)।

★তথ্য :- এই জীবনীমূলক গ্রন্থে কয়েকটি প্রবন্ধ ও কবিতা আছে। এটি রবীন্দ্রনাথের মরণোত্তর প্রকাশিত গ্রন্থ।

(জ) 'খৃষ্ট' [জীবনীমূলক রচনা] (১৯৫৯)।

★তথ্য :- এটি রবীন্দ্রনাথের মরণোত্তর প্রকাশিত গ্রন্থ।

৬. ডায়েরি ও ভ্রমণমূলক প্রবন্ধগ্রন্থ :

(ক) 'য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র' (১৮৮১)।

(খ) 'য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি' (১৮৯৬)।

(গ) 'জাপান-যাত্রী' (১৯১৯)।

(ঘ) 'পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি' (১৯২৯/জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৬)।

(ঙ) 'রাশিয়ার চিঠি' (১৯৩১)।

(চ) 'পথে ও পথের প্রান্তে' (১৯৩২)।

(ছ) 'পথের সঞ্চয়' (১৯৩৯/১৩৪৬)।

★তথ্য - ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে (জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৬ বঙ্গাব্দ) 'পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি' ও 'জাভা-যাত্রীর পত্র' উভয়ের সমাহারে 'যাত্রী' গ্রন্থের প্রকাশ। বিষয়বস্তু এবং রচনাকাল উভয়েই ভিন্ন। এজন্য রবীন্দ্র-শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে 'বিশ্বযাত্রী রবীন্দ্রনাথ' গ্রন্থমালার দু'টি স্বতন্ত্র গ্রন্থরূপেই 'পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি' এবং 'জাভা-যাত্রীর পত্র' প্রচার করা হইল।

৭. ব্যক্তিগত প্রবন্ধগ্রন্থ ও চিঠিপত্র :-

(ক) 'পঞ্চভূত' (১৮৯৭/১৩০৪) [ব্যক্তিগত প্রবন্ধগ্রন্থ]।

(খ)'বিচিত্র প্রবন্ধ' (১৯০৭/বৈশাখ ১৩১৪) [ব্যক্তিগত প্রবন্ধগ্রন্থ]।

(গ) 'চিঠিপত্র' (১৮৮৭) [পত্র-সংকলন গ্রন্থ]।

(ঘ) 'ছিন্নপত্র' (১৯১২/১৩১৯) [পত্র-সংকলন গ্রন্থ]

(ঙ) 'ছিন্নপত্রাবলী' (অক্টোবর ১৯৬০) [পত্র-সংকলন গ্রন্থ; মরণোত্তর প্রকাশিত]।

(চ) 'জাভা-যাত্রীর পত্র' (১৯২৯/জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৬) [পত্র-সংকলন গ্রন্থ]।

★তথ্য - রবীন্দ্রনাথকে বাংলায় Personal Essay বা ব্যক্তিগত প্রবন্ধের শ্রেষ্ঠ লেখক বলা হয়। তাঁর 'বিচিত্র প্রবন্ধ' (১৯০৭) এর উদাহরণ। বঙ্কিমচন্দ্রের 'কমলাকান্তের দপ্তর' (১৮৭৫) প্রবন্ধগ্রন্থ ছাড়া এর তুল্য রচনা আর নেই। প্রকৃতপক্ষে রবীন্দ্রনাথের প্রায় সমস্ত প্রবন্ধই তথ্যনিষ্ঠ ও তাত্ত্বিক হয়ে লেখকের হৃদয়ের স্পর্শে তাঁর গভীর অনুভূতির ছোঁয়ায় ঝলমল করে উঠেছে। 'বিচিত্র প্রবন্ধ'র বিভিন্ন রচনার বক্তব্যে আছে কবিত্ব, ভাষায় আছে ব্যঞ্জনা, প্রকাশে আছে লাবণ্য। রবীন্দ্রনাথ এই গ্রন্থের অতি সংক্ষিপ্ত ভূমিকায় জানিয়েছেন, --- 'ইহার যদি কোন মূল্য থাকে তাহা বিষয়বস্তুগৌরবে নয়, রচনারসসম্ভোগে।' তাঁর 'পঞ্চভূত' (১৮৯৭) প্রবন্ধগ্রন্থে পাঁচটি চরিত্রের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে সৌন্দর্য নরনারী মনুষ্য মন অখণ্ডতা ইত্যাদির মধ্যে তাঁর মনের বিচিত্র লীলা, তাঁর অন্তর্লোকের পরিচয় ধরা পড়েছে।

                     তাঁর 'ছিন্নপত্রাবলী' (অক্টোবর ১৯৬০) নামক চিঠিপত্রের সংকলন গ্রন্থ কবিচেতনার গভীর রসনিবিড় বর্ণসমুজ্জ্বল প্রকাশ। সন্ধ্যার একটি বর্ণনা এখানে উদ্ধৃত হল বিস্ময়কর কবিকল্পনা সুগভীর প্রকৃতিপ্রেম ও আশ্চর্য সৌন্দর্যানুরাগ একটি পত্রে ধরা পড়েছে। এটি একটি পত্র-সংকলন হলেও যথেষ্ট সাহিত্যগুণ ও দার্শনিক-প্রজ্ঞা প্রযুক্ত বলে রবীন্দ্র-অনুরাগী পাঠকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে থাকে। এর অধিকাংশ পত্রের রচনা স্থান শিলাইদহ, শাহজাদপুর ও পতিসর। পত্রগুলোর রচনাকাল সেপ্টেম্বর ১৮৮৭ - ১৫ ডিসেম্বর ১৮৯৫। রবীন্দ্রনাথের 'ছিন্নপত্র' ও 'ছিন্নপত্রাবলী' পত্র-সংকলন দু'টি ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণীকে লেখা। প্রথমে ১৪৫টি চিঠি নিয়ে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে (১৩১৯ বঙ্গাব্দ) প্রকাশিত হয় 'ছিন্নপত্র'। পরে আরও ১০৭টি পত্র সংকলিত হয়ে অক্টোবর ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষে প্রকাশিত হয় 'ছিন্নপত্রাবলী'। বাঙালির জীবনে রবীন্দ্রনাথের 'ছিন্নপত্রাবলী' পড়া একটা আর্ট। রবীন্দ্রনাথ চিঠিপত্র নিয়ে তাঁর গভীর ভাবনাকে ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন সময়ে। চিঠির মধ্যে যে কথা বলা তা প্রকৃতপক্ষে মানবমনের জীবনের লীলা। প্রকৃতিও রোজ একটা করে চিঠি পাঠায় ধরণীর কাছে যা সে বুকের কাছে তুলে ধরে একমনে পড়ে। সেই একই চিঠি ধরণী পড়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। সুরলোকের বাণী পৃথিবীর বুকের ভেতর দিয়ে রূপে রূপে বিচিত্র হয়ে ওঠে চিঠি। চিঠি তাই মানুষের কথা, সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বপ্রকৃতির আলো আর সৌন্দর্য।

 ¤ তথ্যঋণ :- 

১) 'বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ পরিচয়' (জুলাই ২০০৯) - ড. শ্রীদিলীপ কুমার মিত্র।

★প্রকাশনা সংস্থা :- 'দিশারী প্রকাশনী', ৫-বি, কলেজ রো, কলকাতা - ৭০০০০৯।

২) 'রবীন্দ্র-গ্রন্থ-পরিচয়' (পৌষ ১৩৪৯) - ড. শ্রীব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।

★ভূমিকা :- শ্রীসজনীকান্ত দাস।

★প্রকাশনা সংস্থা :- 'সাহিত্য-নিকেতন', পি ৩২, মন্মথ রোড, বেলগাছিয়া, কলকাতা।

★প্রকাশক :- শ্রীসনৎকুমার গুপ্ত।

৩) 'বাংলা সাহিত্যিক চরিতমালা : আধুনিক যুগ' (প্রথম খণ্ড) [সেপ্টেম্বর ২০২১] - সৌম্যদীপ মাইতি, সাজিদুল মণ্ডল, সপ্তদীপ ঘোষ।

★প্রকাশনা সংস্থা :- 'বুকমার্ট', ৬, কলেজ রো, কলকাতা - ৭০০০০৯।

  ¤ আরও দেখুন :-  



  • আলোচক : সৌম্য মাইতি
  • যোগাযোগ : ৬২৯০৩৭৭১৩৪
  • S.L.S.T  বাংলা অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে চাইলে ফোন করে যোগাযোগ করুন আমার ৬২৯০৩৭৭১৩৪ নম্বরে, অথবা আমার WhatssApp-তে ম্যাসেজ করুন ৮৭৬৮৮৩০২৩০ নম্বরে। ধন্যবাদ।

This is a premium content, you can continue reading this content in our Android App. Click the button below to continue. alert-info

Post a Comment

Previous Post Next Post