দশম শ্রেণির 'সাহিত্য সঞ্চয়ন' বইয়ের সমস্ত উৎস
দশম শ্রেণির 'সাহিত্য সঞ্চয়ন' অর্থাৎ পাঠ্য বইয়ের সমস্ত উৎস একজায়গায় সাজিয়ে গুছিয়ে পরপর নিম্নে দেওয়া হল :-
¤ গল্প :-
১) "জ্ঞানচক্ষু" :- আশাপূর্ণা দেবী রচিত ছোটোদের গল্প-সংকলন গ্রন্থ "কুমকুম" থেকে "জ্ঞানচক্ষু" গল্পটি গৃহীত হয়েছে। এই গল্প-সংকলন গ্রন্থটি ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার "দেব সাহিত্য কুটীর" প্রকাশনা সংস্থা থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
২) "বহুরূপী" :- "বহুরূপী" গল্পটি সুবোধ ঘোষের "গল্পসমগ্র" নামক গল্প-সংকলন গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ড থেকে সংকলিত। এই খণ্ডে সুবোধ ঘোষের ৫০টি গল্প সংকলিত হয়েছে। গল্প-সংকলন গ্রন্থের এই খণ্ডটি ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে কলকাতার "আনন্দ পাবলিশার্স প্রা: লি:" প্রকাশনা সংস্থা থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
৩) "পথের দাবী" :- কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের "পথের দাবী" উপন্যাসটি "বঙ্গবাণী" নামক মাসিক পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় ১৩২৯ বঙ্গাব্দের (১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ) ফাল্গুন-চৈত্র সংখ্যা থেকে ১৩৩২ বঙ্গাব্দের (১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ) বৈশাখ সংখ্যা পর্যন্ত। এই উপন্যাসটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের ৩১ আগস্ট (ভাদ্র ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ)। আমাদের পাঠ্যাংশের "পথের দাবী" রচনাটি মূল উপন্যাসের ষষ্ঠ পরিচ্ছেদের প্রায় শেষাংশ থেকে সপ্তম পরিচ্ছেদের শেষ দুটি অনুচ্ছেদ বাদে অবশিষ্টাংশ নিয়ে গঠিত হয়েছে।
৪) "অদল বদল" :- পান্নালাল প্যাটেল বিরচিত "অদল বদল" গল্পটি গুজরাটি ভাষা থেকে "The Exchange" নামে এস. সুন্দর প্রথম অনুবাদ করেন। ভারতবর্ষের অন্যতম প্রকাশনা সংস্থা "ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট" থেকে এই গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয়। তাঁর "Stories for Kids" নামক গল্প-সংকলন গ্রন্থ থেকে আমাদের পাঠ্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত "অদল বদল" গল্পটি গৃহীত হয়েছে।
৫) "নদীর বিদ্রোহ" :- "নদীর বিদ্রোহ" গল্পটি কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রন্থাকারে প্রকাশিত দশম গ্রন্থ এবং চতুর্থ গল্পগ্রন্থ "সরীসৃপ" থেকে গৃহীত হয়েছে। এই গল্পগ্রন্থটি ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ আগস্ট (শ্রাবণ ১৩৪৯ বঙ্গাব্দ) কলকাতার "গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্স" প্রকাশনা সংস্থা থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। আমাদের আলোচ্য গল্পটি "সরীসৃপ" গল্পগ্রন্থের নয় সংখ্যক গল্প।
¤ কবিতা :-
১) "অসুখী একজন" :- সাহিত্যিক নবারুণ ভট্টাচার্য কর্তৃক বাংলায় অনূদিত পাবলো নেরুদার দুটি কবিতা স্থান পেয়েছে "বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে" গ্রন্থে। এই গ্রন্থ থেকে পাঠ্য "অসুখী একজন" কবিতাটি গ্রহণ করা হয়েছে। উক্ত গ্রন্থে বিদেশি বিভিন্ন সাহিত্যিকের লেখা কবিতা ও গদ্যরচনার অনুবাদ সংকলিত হয়েছে।
"অসুখী একজন" কবিতার শেষ দুটি পঙ্ক্তি পাঠ্য "সাহিত্য সঞ্চয়ন" বইতে রাখা হয়নি। বাদ দেওয়া পঙ্ক্তি দুটি হল ---
"এমন কোনো ফাঁকা জায়গা নেই যা দুঃখের চেয়ে বড়,
যেখানে রক্ত ঝরে সেরকম আর কোনো পৃথিবী হয় না।"
২) "আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি" :- "আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি" কবিতাটি কবি শঙ্খ ঘোষের "জলই পাষাণ হয়ে আছে" কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। এই কাব্যগ্রন্থটি কলকাতার "প্যাপিরাস" প্রকাশনা সংস্থা থেকে ২০০৪ খ্রিস্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থে মোট ৩১টি কবিতা আছে। পাঠ্য কবিতাটি এই কাব্যগ্রন্থের একত্রিশতম, অর্থাৎ শেষতম কবিতা।
৩) "আফ্রিকা" :- ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "আফ্রিকা" কবিতাটি রচনা করেন। কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় "প্রবাসী" পত্রিকায় ১৩৪৩ বঙ্গাব্দে। পরবর্তীকালে কবিতাটি তাঁর "পত্রপুট" (১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ) কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণে ১৬ সংখ্যক কবিতা হিসেবে স্থান পায়। এ ছাড়াও কবিতাটিকে পরবর্তীকালে "সঞ্চয়িতা" কাব্য-সংকলন গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই কাব্য-সংকলন গ্রন্থটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৮ বঙ্গাব্দ)।
৪) "অভিষেক" :- কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা "মেঘনাদবধ কাব্য" (১ম খণ্ড : জানুয়ারি ১৮৬১ ও ২য় খণ্ড ; জুন ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দ) মোট নয়টি সর্গে বিভক্ত। প্রথম সর্গের নাম "অভিষেক"। এই সর্গে মোট ৭৮৫টি চরণ আছে। তার মধ্যে ৬৫৭ থেকে ৭৬২ পর্যন্ত মোট ১০৬টি পঙ্ক্তি পাঠ্য কবিতার অন্তর্ভুক্ত।
৫) "প্রলয়োল্লাস" :- সংগ্রামী চেতনার অতন্দ্র প্রহরী কাজী নজরুল ইসলামের "প্রলয়োল্লাস" গীতিকাটি প্রথমে "প্রবাসী" পত্রিকায় জ্যৈষ্ঠ ১৩২৯ বঙ্গাব্দে (১৯২২ খ্রিস্টাব্দ) প্রকাশিত হয়। পরে এটি "অগ্নিবীণা" কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা হিসেবে গৃহীত হয়। এই কাব্যগ্রন্থটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ২৫ অক্টোবর (কার্তিক ১৩২৯ বঙ্গাব্দ)।
৬) "সিন্ধুতীরে" :- কবি সৈয়দ আলাওলের শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ "পদ্মাবতী"। প্রায় ১০৮ বছর পর আরাকানের বৌদ্ধ রাজার অমাত্য মাগন ঠাকুরের নির্দেশে সৈয়দ আলাওল ১৬৪৬ খ্রিস্টাব্দে "পদ্মাবতী" কাব্যগ্রন্থটি রচনা করেন। গ্রন্থটি কবি মালিক মুহম্মদ জায়সীর আওধী ভাষায় লেখা "পদুমাবৎ" কাব্যগ্রন্থের অনুবাদ। মুহম্মদ জায়সী তাঁর কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে। আলোচ্য পাঠ্য "সিন্ধুতীরে" নামাঙ্কিত অংশটি সৈয়দ আলাওলের "পদ্মাবতী" নামক মূল কাব্যগ্রন্থের অংশ। মূল কাব্যগ্রন্থে এর নাম ছিল "পদ্মা-সমুদ্রখণ্ড"। "সিন্ধুতীরে" নামটি "সাহিত্য সঞ্চয়ন" (দশম শ্রেণি) গ্রন্থের সংকলকদের দেওয়া।
৭) "অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান" :- "অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান" কবিতাটি কবি জয় গোস্বামীর "পাতার পোশাক" নামক কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। এই কাব্যগ্রন্থটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে।
¤ প্রবন্ধ :-
১) "হারিয়ে যাওয়া কালিকলম" :- শ্রীপান্থ (প্রকৃত নাম : নিখিল সরকার) রচিত একাধিক গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি গ্রন্থ হল --- "কালি কলম মন"। নির্বাচিত পাঠ্য "হারিয়ে যাওয়া কালি কলম" রচনাটি "কালি কলম মন" গ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছে। বিষয়টি নির্বাচনের উদ্দেশ্য আজকের প্রজন্মের কাছে তৎকালীন সামাজিক অবস্থা, লেখালেখির সমস্যা --- এককথায় লেখালেখির ব্যবস্থাপনা কেমন ছিল, তা জানানো।
২) "বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান" :- রাজশেখর বসুর (ছদ্মনাম : পরশুরাম) স্বনামে লিখিত একটি বিখ্যাত বিজ্ঞানমূলক প্রবন্ধগ্রন্থ "বিচিন্তা"। এই প্রবন্ধগ্রন্থটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে (১৩৬২ বঙ্গাব্দ)। এই প্রবন্ধগ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণের একটি বিখ্যাত প্রবন্ধ হল "বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান"।
¤ নাটক :-
১) "সিরাজদ্দৌলা" :- "সিরাজদৌল্লা" নাট্যাংশটি নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের "সিরাজদ্দৌলা" নামক মূল নাটক থেকে গৃহীত হয়েছে। নাটকটি রচিত হয় ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে। ওই বছরই ২৮ জুন "নাট্যনিকেতন" মঞ্চে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। তিন অঙ্কের মূল নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্য নিয়ে পাঠ্যাংশের অন্তর্গত নাটকটি রচিত হয়েছে।
¤ পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ :-
১) "কোনি" :- মতি নন্দী রচিত "কোনি" উপন্যাসটি ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে "আনন্দ পাবলিশার্স প্রা: লি:" থেকে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে এই উপন্যাস অবলম্বনে ওই একই নামের একটি বাংলা চলচ্চিত্র নির্মিত হয়ে। এটি ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে সরোজ দে পরিচালিত এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনীত একটি জাতীয় পুরস্কার (ভারত) প্রাপ্ত বাংলা চলচ্চিত্র।
- আলোচক : সৌম্য মাইতি
- যোগাযোগ : ৬২৯০৩৭৭১৩৪
- S.L.S.T বাংলা অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে চাইলে ফোন করে যোগাযোগ করুন আমার ৬২৯০৩৭৭১৩৪ নম্বরে, অথবা আমার WhatssApp-তে ম্যাসেজ করুন ৮৭৬৮৮৩০২৩০ নম্বরে। ধন্যবাদ।
Post a Comment