কাজী নজরুল ইসলামের উপাধি ও ছদ্মনাম
কাজী নজরুল ইসলামের বিভিন্ন নাম, বাল্য নাম বা ছোটোবেলার ডাক নাম, উপাধি ও ছদ্মনাম ক্রমানুযায়ী সাজিয়ে তথ্যসহকারে নিম্নে দেওয়া হল :-
¤ কাজী নজরুল ইসলামের বিভিন্ন নাম :- তিনি ছিলেন "সাম্যের কবি", "মৈত্রীর কবি"। এছাড়াও তাঁর আরও কিছু নাম ও উপাধি পাওয়া যায়।
¤ "দুখু মিঞা" :- কাজী নজরুল ইসলামের আগে তাঁর মায়ের তিনটি সন্তান মারা যায়। নজরুলের জন্মানোর খবর পেয়ে তাঁর চাচা বলেছিল এই মিঞাও আমাদের দুঃখ দিতে এসেছে। তাই এর নাম রাখা হোক "দুখু মিঞা"। কারণ সকলেই ভেবেছিল নজরুলও মারা যাবে।
এছাড়াও আমরা সবাই জানি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বাল্য নাম বা ছোটোবেলার ডাক নাম ছিল "দুখু মিঞা"। মাত্র এগার-বার বছর বয়সের কিশোর কবিকে অন্ন জোটাতে উদয়াস্ত কঠিন পরিশ্রম করতে হয়েছে। কাজ করতে হয়েছে রুটির দোকানে এবং রাত্রীযাপন করতে হয়েছে ঐ দোকানেরই এক কোনো চিপা জায়গায়; নাম লেখাতে হয়েছে লেটোর দলে। তাঁর শৈশবকালের কঠিন জীবন সংগ্রামের জন্যই তাঁকে এই নামে ডাকা হত।
¤ "ধূমকেতু" :- এটি কবি কাজী নজরুল ইসলামের ছদ্মনাম। এই নামে তিনি ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ১১ আগস্ট (২৬ শ্রাবণ ১৩২৯ বঙ্গাব্দ) একটি দ্বি-সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন।
¤ "যুগের কবি" :--কাজী নজরুল ইসলামকে তাঁর সমসাময়িকেরা আখ্যায়িত করেছেন "যুগের কবি" বলে। এই অভিধা অযৌক্তিক ও অসংগত ছিল না। কিন্তু কাকে যুগের কবি বলা যায়? যিনি যুগের দাবি পূরণ করেন, তিনিই যুগের কবি। তবে নজরুল সেই কবি যিনি তাঁর যুগের দাবিও পূরণ করেছেন, চিরকালের মানুষের জন্যও রেখে গেছেন তাঁর শাশ্বত বাণী। সুতরাং তিনি কালের কবি, একই সঙ্গে কালোত্তীর্ণ। যেসব সমস্যা তাঁর কালে ছিল এবং যত দিন তা পৃথিবীতে থাকবে, তত দিন তিনি প্রাসঙ্গিক, তত দিন তাঁর প্রয়োজন ফুরোবে না।
¤ "বুলবুল" :- কাজী নজরুল ইসলাম হিন্দু-মুসলিম উভয় ধর্মীয় গান রচনা করেছেন। ইসলামী গানের মধ্যে "ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ", "তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে", "মহরমের চাঁদ এল ঐ" প্রভৃতি গানগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়। আধুনিক বাংলা গানের জগতে তিনি "বুলবুল" নামে পরিচিত। তিনি অনেক "শ্যামা সংগীত"-এরও রচয়িতা।
¤ "বিদ্রোহী কবি" :- বাংলা সাহিত্যে কবি কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব ধূমকেতুর মতো। অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি বলিষ্ঠ বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন ও মহাবিশ্বে মহাজাগরণ ঘটিয়েছিলেন। তাঁর গভীরতম চেতনায় যে ক্ষোভ, বঞ্চিতের প্রতি যে নিবিড় সহানুভূতি, তা বজ্রাগ্নির মতো অসহনীয় উত্তাপে ফুটে উঠেছিল। তাঁর কবিতায় তিনি সামাজিক অবিচার ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। "অগ্নিবীণা" কাব্যগ্রন্থের 'বিদ্রোহী' কবিতার মধ্য দিয়ে তাঁর বিদ্রোহের আত্মপ্রকাশ। পরে তিনি তাঁর "বিষের বাঁশী", "ভাঙার গান", "প্রলয়লিখা" প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ এবং "যুগবাণী" প্রবন্ধগ্রন্থ ও "চন্দ্রবিন্দু" নামক গানের বইতে মানুষের সৃষ্ট কৃত্রিম সমাজ ব্যবস্থার ভণ্ডামীর মুখোশ উদ্ঘাটন ও মূল উৎপাটনে বিদ্রোহের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। এ সমস্ত কারণে বাংলা কাব্যসাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামকে "বিদ্রোহী কবি" উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
¤ "গাজী আব্বাস বিটকেল" :- সজনীকান্ত দাস "শনিবারের চিঠি" পত্রিকার ভাদ্র সংখ্যায় কাজী নজরুল ইসলামকে ব্যঙ্গ করে "বাংলার আধুনিক বরপুত্র নবযুগ ধুরন্ধর সাহিত্য সারথি" আখ্যা দিয়ে তাঁর "অনামিকা" কবিতার একটি প্যারোডি ছাপা হয় "বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ" নামে, যার রচয়িতা হিসাবে ছাপানো হয় "গাজী আব্বাস বিটকেল" নামটি।
¤ "ব্যাঙাচি কবি" :- কবি হওয়ার আশায়, গান গাওয়ার আনন্দে ও উপার্জনের আশায় তিনি প্রথমে চাচা কাজী বজলে করিমের লেটো গানের দলে ও পরে ওস্তাদ শেখ চকোর গোদার দলে যোগ দেন। শেখ চকোর গোদা কবির তারিফ করে নাম দেন "ব্যাঙাচি কবি"।
¤ কাজী নজরুল ইসলামের উপাধি :-
১) "বিদ্রোহী কবি"
২) "সাম্যবাদী কবি"
৩) "মানুষের কবি"
৪) "যুগের কবি"
৫) "বুলবুল"
৬) "গাজী আব্বাস বিটকেল"
৭) "ব্যাঙাচি কবি"
৮) "মৈত্রীর কবি"
৯) "হাবিলদার কবি"
¤ কাজী নজরুল ইসলামের ছদ্মনাম :-
১) "নুরু"
২) "নরু"
৩)"তারাক্ষাপা"
৪) "নজরুল এছলাম"
৫) "মোহম্মদ লোক হাসান"
৬) "বাগনান"
৭) "কহ্লন মিশ্র"
¤ তথ্যঋণ :- একটা বাংলাদেশী পেজের কিছু তথ্যকে সামান্য এডিট করে এবং অনেক তথ্য সংযোগ করে নিজের মতো সাজিয়ে নিয়ে এই ব্লগে পোস্ট করলাম। তাই ওই বাংলাদেশী পেজটির কাছে আমি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।
- আলোচক : সৌম্য মাইতি
- যোগাযোগ : ৬২৯০৩৭৭১৩৪
- S.L.S.T বাংলা অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে চাইলে ফোন করে যোগাযোগ করুন আমার ৬২৯০৩৭৭১৩৪ নম্বরে, অথবা আমার WhatssApp-তে ম্যাসেজ করুন ৮৭৬৮৮৩০২৩০ নম্বরে। কারণ আমার এখন নতুন ব্যাচে ভর্তি চলছে।
Post a Comment