মধ্যযুগ সম্পর্কিত ২ নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
১) চণ্ডীদাসের পদাবলির জনপ্রিয়তার কারণগুলি উল্লেখ করুন।
★উত্তর - (ক) প্রেমকে নিত্যনব উপলব্ধিতে পেতে হলে যে দীর্ঘ নিরবচ্ছিন্ন সাধনার প্রয়োজন, তা চণ্ডীদাসের পদে লক্ষণীয়।
(খ) চণ্ডীদাস ভাবতন্ময় আত্মনিষ্ঠ কবি। তিনি মরমিয়া কবি। তাঁর কাব্যের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল পরকীয়া প্রেম। পরপুরুষ তথা পরমপুরুষের জন্যে ঘর-সংসারে বন্দিনী এক অসহায় রমণীর মর্মদাহকে তিনি বাণীরূপ দান করেছেন।
(গ) চণ্ডীদাসের বর্ণিত প্রেম তত্ত্বসম্মত। তাঁর প্রেমে রয়েছে গোপনীয়তা -- "গোপন পিরিতি / গোপনে রাখিবি।"
★Extra Point :-
(ঘ) চণ্ডীদাসের রাধার প্রেম আধ্যাত্মিক এবং সে প্রেমে পরিশীলিত হৃদয়কথা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
২) বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যে গোবিন্দদাসের অবদান আলোচনা করুন। / বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যে গোবিন্দদাসের শ্রেষ্ঠত্বের কারণগুলি লিখুন।
★উত্তর - (ক) চৈতন্যোত্তর বৈষ্ণব পদকর্তাদের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য কবি হলেন গোবিন্দদাস কবিরাজ। তাঁর কবিতায় অসাধারণ শিল্পশোভন পদলালিত্য ও ছন্দের দোলায়িত লীলা পরিলক্ষিত হয়।
(খ) গোবিন্দদাস রূপদক্ষ কবি। ধ্বনিমাধুর্য, চিত্রকল্প এবং নাটকীয়তা সৃজনে তিনি অসাধারণ।
(গ) তিনি তাঁর পদে মার্জিত ভাষা ও সার্থক শব্দচয়ন এবং ব্রজবুলি ভাষার অপূর্ব নির্মাণ করেছেন।
★Extra Point :-
(ঘ) তিনি তাঁর কবিতায় নাটকীয়তা ও চিত্রধর্মীতা, দার্শনিকতা ও তাত্ত্বিকতার অসাধারণ সমন্বয় বা মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন।
(ঙ) তিনি তাঁর পদে আরাধনা মুখ্য পদাবলির অসামান্য আয়োজন করেছেন।
(চ) অধ্যাপিকা সত্যবতী গিরি লিখেছেন, --- "রাধাকৃষ্ণলীলা নিয়ে রচিত তাঁর পদাবলীর বিষয়বস্তু পূর্ববর্তী কবিদের ধারানুবর্তী। কিন্তু অলংকার ব্যবহারে, মণ্ডন কলানৈপুণ্যে, অপূর্ব ছন্দঝংকার এবং শব্দ ব্যবহারের সুমিত কুশলতায় গোবিন্দদাস বিদ্যাপতির সার্থক উত্তরসূরী।"
৩) গোবিন্দদাসের কবিপ্রতিভার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লিখুন।
★উত্তর - (ক) গোবিন্দদাসের গাম্ভীর্য, পাণ্ডিত্য, তত্ত্বচিন্তা একেবারেই তাঁর নিজস্ব। ভাব গভীরতায় তাঁর স্বাতন্ত্র্য চিহ্নিত।
(খ) গোবিন্দদাসের কবিপ্রতিভার অন্তরালে রয়েছে মাতামহ দামোদরের উত্তরাধিকার এবং হাল-অমরু-জয়দেব-কলহন-বিদ্যাপতি-রূপ গোস্বামী ও গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শনের তাত্ত্বিক নির্দেশাবলী। তাই গোবিন্দদাস ছিলেন একাধারে ভক্ত ও কবি।
(গ) গোবিন্দদাস ছিলেন সৌন্দর্যচেতনার কবি। তিনি রূপদক্ষ। ভাষা, ছন্দ ও অলংকার নিয়ে তিনি নিরন্তর পরীক্ষা করেছেন।
★Extra Point :-
(ঘ) তাঁর পদের মধ্যে রয়েছে সংগীতপ্রবণতা, সেই সঙ্গে নাটকীয়তা।
(ঙ) গোবিন্দদাস রাধাকৃষ্ণ লীলার বিভিন্ন পর্যায় নিয়ে পদ রচনা করেছেন। তিনি চিত্ররসের কবি বলেই রূপানুরাগের পদে শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
(চ) এছাড়া অভিসারের পদে তাঁর সমকক্ষ কোন কবির নাম উচ্চারিত হতে পারে না। গৌরাঙ্গবিষয়ক পদেও তিনি অসাধারণত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
৪) গোবিন্দদাসের কবিপ্রতিভার মৌলিকতা কোথায়?
★উত্তর - শব্দালংকারে গোবিন্দদাস জয়দেবকে এবং রীতি নির্মাণের দিক থেকে বিদ্যাপতিকে অনুসরণ করছেন। গোবিন্দদাস বিদ্যাপতির দ্বারা প্রভাবিত হলেও তাঁর মৌলিকত্ব প্রশংসনীয়। যেমন ---
(ক) ভাষা, চিত্রকল্প এবং ধ্বনিঝংকারে তাঁর কবিদৃষ্টির স্বাতন্ত্র্য রয়েছে।
(খ) গোবিন্দদাস নিছক অনুকারক নন, মৌলিক স্রষ্টাও বটে।
(গ) সংগীতধর্মিতা, বাক্-নির্মিতির পারঙ্গমতায় তিনি গুরুকে অতিক্রম করেছেন।
★Extra Point :-
(ঘ) "All arts aspire to the condition of music" -- এই সূত্রে গোবিন্দদাসের কাব্যে আশ্চর্যসুন্দর রূপ লাভ করেছে।
৫) শ্রীনিবাসের শিষ্য কবি বল্লভদাস লিখেছেন, -- "গোবিন্দ দ্বিতীয় বিদ্যাপতি"। তাঁকে এই আখ্যায় ভূষিত করার কারণ কী? / বিদ্যাপতি ও গোবিন্দদাসের কবিপ্রতিভার সাদৃশ্য বা মিল কোথায়?
★উত্তর - (ক) গোবিন্দদাস চৈতন্য-পরবর্তী একমাত্র কবি যিনি বিদ্যাপতিকে অনুসরণ করেছেন। কবি বিদ্যাপতি ও কবি গোবিন্দদাস উভয়েই ছিলেন রূপসচেতন। তাঁরা দু'জনেই কবিতার আঙ্গিক নিয়ে ভেবেছেন।
(খ) পদের লালিত্য, ছন্দের চমৎকারিত্ব ও অলংকারের যথার্থ প্রয়োগ-নৈপুণ্যে কবি গোবিন্দদাস বিদ্যাপতির সার্থক উত্তরসূরি।
(গ) ব্রজবুলি ভাষার যথাযথ বিন্যাস কৌশলে বিদ্যাপতি ও গোবিন্দদাস দু'জনেই সফল। তাই গোবিন্দদাস চিহ্নিত হয়েছেন "দ্বিতীয় বিদ্যাপতি" নামে।
৬) বিদ্যাপতি ও গোবিন্দদাসের কবিপ্রতিভার কয়েকটি বৈসাদৃশ্য বা পার্থক্য লিখুন।
★উত্তর - গোবিন্দদাস অগ্রজ কবি বিদ্যাপতিকে অনুসরণ করলেও উভয় কবির কবিপ্রতিভার পার্থক্য থেকেই যায়। যেমন :-
(ক) বিদ্যাপতি জীবনবাসনায় যতখানি চঞ্চল, ঠিক বিপরীতে গোবিন্দদাস প্রগাঢ় ভক্তি-নিষ্ঠায় অবিচল।
(খ) কবিতার কারুকৃতিতে দু'জনেই তুল্যমূল্য হলেও বিদ্যাপতি যেখানে কামনার রঙ ছড়িয়ে দেন, লৌকিক প্রেমের কথা শোনান; গোবিন্দদাস তার বিপরীতে সাধনমার্গের অন্য আর এক চিরন্তন প্রেমের কাহিনি শোনান।
৭) প্রাক্-চৈতন্য ও উত্তর-চৈতন্য বৈষ্ণব পদাবলির পার্থক্য সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
★উত্তর - (ক) উত্তর-চৈতন্যযুগে মর্ত্যপ্রেমের আধারে রাধাকৃষ্ণ লীলাকে তত্ত্বের আলোকে পরিবেশন করা হয়েছে। অথচ প্রাক্-চৈতন্যযুগে তত্ত্ব অপেক্ষা প্রাধান্য পেয়েছিল লৌকিক প্রেমকথা।
(খ) প্রাক্-চৈতন্যযুগে পঞ্চরসের প্রাধান্য স্বীকৃত হয়েছিল। কিন্তু উত্তর-চৈতন্যযুগে পঞ্চরসের পরিবর্তে মধুর বা শৃঙ্গার রসের প্রাধান্য স্বীকৃত হয়েছিল।
(গ) পদের শেষে যে ভণিতা কবিরা দিয়েছিলেন সেখানে রাধা অনুগামী প্রেম প্রকাশিত হয়েছিল, যা প্রাক্-চৈতন্যযুগে দেখা যায়নি।
★Extra Point :-
(ঘঁ) প্রাক্-চৈতন্যযুগের পদে ধরা পড়েছিল কামনার প্রগাঢ়তা। অন্যদিকে উত্তর-চৈতন্যযুগে পাওয়া গেল আধ্যাত্মিক প্রেমের স্বর্গীয় সুষমা।
৮) "ধর্মমঙ্গল" কাব্যধারার শ্রেষ্ঠ কবি ঘনরাম চক্রবর্তীর কবিকৃতিত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখুন। / ঘনরাম চক্রবর্তীর "ধর্মমঙ্গল" কাব্যের স্বাতন্ত্র্যতা কোথায়?
★উত্তর - (ক) "ধর্মমঙ্গল" কাব্য একান্তভাবে আঞ্চলিক কাব্য এবং এ কাব্যধারার শ্রেষ্ঠ কবি ঘনরাম চক্রবর্তী পাণ্ডিত্যে, মেধায়, অলংকরণে তাঁর কাব্যকে অসাধারণ বিষয় ও রূপের সমন্বয়ে মধ্যযুগের অনবদ্য শিল্পসম্ভারে রূপদান করেছেন।
(খ) "ধর্মমঙ্গল" কাব্য বীররসাত্মক। এর সঙ্গে রোমান্স ও অ্যাডভেঞ্চারের মিশেল ঘটেছে। কলিঙ্গা, কানাড়ার মতো এত অসংখ্য বীরাঙ্গনা নারী মধ্যযুগের আর কোন কাব্যে পাওয়া যায় না।
(গ) প্রাচীন ডোম সৈন্যদের বীরত্বকথা এ কাব্যের বিশেষত্বের অন্যতম দিক।
★Extra Point :-
(ঘ) ঘনরামের কাব্যে রাঢ়বঙ্গের ইতিহাস, ভূগোল, সমাজতত্ত্ব, লোকসংস্কৃতির বহু প্রামাণিক তথ্য পাওয়া যায়।
(ঙ) ঘনরামের শব্দনির্মাণ কৌশল বুদ্ধিদীপ্ত, তাঁর বাণী অলংকারের বন্ধনে পরিশীলিত।
(চ) বিচিত্র চরিত্র চিত্রশালা এ কাব্যের বিশেষত্ব। প্রাগাধুনিক বাংলা সাহিত্যে বুদ্ধিদীপ্ত পতিতা নারীর জ্ঞান, মনীষার সন্ধান এখানে পাওয়া যায়। পতিতা সুরক্ষা তারই প্রমাণ।
৯) জীবনী কাব্য হিসেবে কৃষ্ণদাস কবিরাজের "শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত"-এর দু'টি ঐতিহাসিক গুরুত্ব লিখুন।
★উত্তর - (ক) কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ এই কাব্যে তত্ত্বনিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন। অচিন্ত্য ভেদাভেদ তত্ত্ব, কৃষ্ণতত্ত্ব, রাধাতত্ত্ব, গোপী তত্ত্ব, সাধ্য-সাধনতত্ত্ব, প্রেমবিলাসবিবর্ত, পঞ্চরস ইত্যাদি প্রসঙ্গ এই কাব্যে স্থান পেয়েছে।
(খ) কৃষ্ণদাস এই কাব্যে ঐতিহাসিক নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবকে প্রেমের অবতাররূপে দেখেছেন, যে কারণে এই কাব্যের মধ্যে অলৌকিকতা ও অতিলৌকিকতা অনেক সময় চোখে পড়েছে।
★Extra Point :-
(গ) "মুরারী গুপ্তের কড়চা", কবি কর্ণপুরের গ্রন্থ, "স্বরূপ দামোদরের কড়চা" ইত্যাদি গ্রন্থ থেকে তিনি ঋণ গ্রহণ করেছেন।
১০) কৃষ্ণদাস কবিরাজের "শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত" কাব্যটি কী কী কারণে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে?
★উত্তর - (ক) চৈতন্যজীবনী বিষয়ক গ্রন্থগুলির মধ্যে কৃষ্ণদাস কবিরাজের "শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত" শ্রেষ্ঠ। এই কাব্যটি বিষয় বৈচিত্র্যে, সংকলনে, কবিত্বময় ভাষায় অপূর্ব।
(খ) চৈতন্যতত্ত্ব ও চৈতন্যপ্রচারিত ধর্মের পূর্ণ পরিচয় পাওয়া যায় এই কাব্যে।
(গ) দার্শনিক তত্ত্বে এই কাব্যটি সমৃদ্ধ। এই কাব্যে রাধার প্রেমকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে প্রতিপন্ন করা হয়েছে। "শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত"কার লিখেছেন, --- "প্রেমের পরম রস 'মহাভাব' জানি। / সেই মহাভাবরূপা রাধা ঠাকুরাণী।।"
★Extra Point :-
(ঘ) মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের অবতার তত্ত্ব ও লীলারহস্য উদ্ঘাটনে এই কাব্যের বিকল্প নেই।
(ঙ) ভক্তিনিষ্ঠার সঙ্গে কবিত্বের যথাযথ যোগসাজশ ঘটেছে আলোচ্য এই কাব্যে এমন কয়েকটি পঙ্ক্তি আছে, যা অনুভবের প্রগাঢ়তায় অসামান্য -- "না সো রমণ, না হাম রমণী। / দুঁহুমন মনোভাব পেষল জনি।।"
(চ) এই কাব্যে চৈতন্যের জীবনদর্শনের পাশাপাশি গৌড়ীয় বৈষ্ণবতত্ত্বের মূল বিষয়গুলি যেভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, তা এককথায় বৈষ্ণব তত্ত্ব-সমুদ্রে ঝিনুকে মুক্ত দর্শনের মতো।
১১) রামপ্রসাদ সেনের কবিপ্রতিভার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন।
★উত্তর - (ক) কবি ঈশ্বর গুপ্ত লিখেছেন, --- "বঙ্গদেশের মধ্যে যত মহাশয় কবিরূপে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, তন্মধ্যে রামপ্রসাদ সেনকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলিয়া গণ্য করিতে হইবে।" "সংবাদ প্রভাকর" পত্রিকায় এই মন্তব্যের কারণ রামপ্রসাদ ছিলেন 'সকল রসের __, প্রেমিক, ভাবুক ও ___ এবং জ্ঞানী'।
(খ) রামপ্রসাদ তাঁর কাব্যে উপাচার-বর্জিত উপাসনার কথা বলেছেন।
(গ) তিনি তাঁর পদে মানুষের প্রতি অকুণ্ঠ ভালবাসার কথা বলেছেন।
★Extra point :-
(ঘ) তিনি তাঁর কাব্যে সামাজিক অসঙ্গতির সত্যনিষ্ঠ চিত্র উপস্থাপন করেছেন।
(ঙ) তিনি তাঁর পদে সহজকথা সহজসুরে বলেছেন।
১২) ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের "অন্নদামঙ্গল" কাব্যকে "নূতন মঙ্গল" বলা হয় কেন?
★উত্তর - (ক) এই কাব্যের চরিত্র নির্মাণে ভারতচন্দ্র প্রচলিত দেব-মাহাত্ম্যের ভাবনা থেকে সরে এসেছেন। অর্থাৎ দেবলীলার পটভূমিকায় মানব মহিমা স্বীকৃত।
(খ) বীররস বা করুণরসের পরিবর্তে তিনি এই কাব্যে প্রসন্ন হাস্যরসকে উপস্থাপন করেছেন। অর্থাৎ এই কাব্যের বিষয় ও রূপ ব্যতিক্রমী।
(গ) আধুনিক কাব্যজিজ্ঞাসা তাঁর কাব্যের মূল ভিত্তিভূমি। এই কাব্যের মধ্যে যথার্থেই প্রকাশিত হয়েছে 'realities of line'.
★Extra Point :-
(ঘ) "অন্নদামঙ্গল" কাব্যে পুরাতন যুগের অন্তঃসারশূন্যতাকে কবি প্রচণ্ড আঘাত হেনেছেন।
(ঙ) এই কাব্যের মধ্যে বাস্তববোধ, সমাজচেতনা, নির্মোহ দৃষ্টি, জীবন-পর্যালোচনা দেখা গিয়েছে।
(চ) তীক্ষ্ণ তির্যকতা, হাস্যকৌতুক, অসঙ্গতির চমকপ্রদ উজ্জ্বলতা, শাণিত বাগ্ভঙ্গি এই কাব্যে উপস্থিত।
(ছ) শব্দ নির্মাণে, ভাষার চমৎকারিত্ব প্রতিপাদনে, ছন্দের যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ভারতচন্দ্রের "অন্নদামঙ্গল" কাব্য যথার্থেই "নূতন মঙ্গল"।
১৩) ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের কাব্যের দু'টি বৈশিষ্ট্য লিখুন।
★উত্তর - (ক) মধ্যযুগীয় মঙ্গলকাব্যের বিশেষ কাঠামো অনুসরণ করে তিনি কাব্য রচনা করলেও তাঁর ভাবধারা সম্পূর্ণ নতুন।
(খ) দেবলীলার পটভূমিকায় কবি মানুষের কাহিনিই মুখ্যত বিবৃত করেছেন। তাঁর কাব্যে দেবচরিত্রের মহিমা অপেক্ষা মনুষ্যচরিত্রই অধিকতর সজীব ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।
১৪) শাক্তপদাবলির ক্ষেত্রে ভক্তের আকুতির বিশেষত্ব কোথায়?
★উত্তর - ভক্তের আকুতি পর্যায়ের পদগুলির মধ্যে জননী যেন তার স্নেহবাৎসল্যে সন্তানের সমস্তরকমের কষ্ট-যন্ত্রণা, ব্যর্থতা-গ্লানি ধুয়ে দেন। সুতরাং এই পদগুলি একদিকে আন্তরিকতায় পূর্ণ, অন্যদিকে তত্ত্বে নিপুণ। ভক্তির সঙ্গে তত্ত্বের মেশামিশিতেই ভক্তের আকুতির শ্রেষ্ঠ।
১৫) কবিগানের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন।
★উত্তর - (ক) এইসব গানে প্রভূত পরিমাণ অনুপ্রাসের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
(খ) মূলত রাধাকৃষ্ণের লীলাবিষয়ক গান এখানে গাওয়া হত।
(গ) কবিগান মূলত সংগীত এবং সেই সংগীত অবশ্যই ধর্মনিরপেক্ষ আবেগ ও আনন্দের জন্ম দিয়েছিল।
★Extra Point :-
(ঘ) এইসব গানের মধ্যে ভাবের গভীরতা বা অসামান্য কাব্যকলার স্পর্শ না থাকলেও এই গানগুলিকে উপেক্ষা করা যায় না।
(ঙ) সবথেকে বড় কথা এই যে, কবিগানের লোকরঞ্জন ক্ষমতা অনস্বীকার্য।
- আলোচক : সৌম্য মাইতি
- যোগাযোগ : ৬২৯০৩৭৭১৩৪
- S.L.S.T বাংলা অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে চাইলে ফোন করে যোগাযোগ করুন আমার ৬২৯০৩৭৭১৩৪ নম্বরে, অথবা আমার WhatssApp-তে ম্যাসেজ করুন ৮৭৬৮৮৩০২৩০ নম্বরে। কারণ আমার এখন নতুন ব্যাচে ভর্তি চলছে। এখানে উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর মতো সঠিক তথ্যসহকারে ১ নম্বরের পাশাপাশি ২ নম্বরের ডেসক্রিপটিভ প্রশ্নোত্তরও করানো হয়। ধন্যবাদ।
Post a Comment