বৃন্দাবন দাস ঠাকুর ও "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্য
১) বেশিরভাগ সমালোচকের মতে, বৃন্দাবন দাস কত খ্রিস্টাব্দে, কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? এবং কত খ্রিস্টাব্দে পরলোকগমন করেন?
★উত্তর - বেশিরভাগ সমালোচকের মতে, বৃন্দাবন দাস ১৮ মাস গর্ভাবস্থার পরে (জনশ্রুতি) ১৫০৭ খ্রিস্টাব্দে (১৪২৯ শকাব্দ) বৈশাখী কৃষ্ণাদ্বাদশীতে বর্ধমান জেলার দেনুড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৫৮৯ খ্রিস্টাব্দে (১৫১১ শকাব্দ) ৮২ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন।
২) গবেষক জগবন্ধু ভদ্রের মতে, বৃন্দাবন দাস কত খ্রিস্টাব্দে, কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? এবং কত খ্রিস্টাব্দে পরলোকগমন করেন?
★উত্তর - গবেষক জগবন্ধু ভদ্রের মতে, বৃন্দাবন দাস ১৮ মাস গর্ভাবস্থার পরে (জনশ্রুতি) ১৫০৭ খ্রিস্টাব্দে (১৪২৯ শকাব্দ) বৈশাখী কৃষ্ণাদ্বাদশীতে শ্রীহট্টে তাঁর মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে (১৫০৪ শকাব্দ) ৭৫ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন।
৩) ড. বিমানবিহারী মজুমদারের মতে, বৃন্দাবন দাস কত খ্রিস্টাব্দে, কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? তিনি কোন্ শতাব্দীর কবি ছিলেন?
★উত্তর - ড. বিমানবিহারী মজুমদারের মতে, বৃন্দাবন দাস ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে নদিয়া জেলার নবদ্বীপের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং তিনি পরবর্তীকালে বর্ধমান জেলার দেনুড় গ্রামে বসবাস শুরু করেন। তিনি ষোড়শ শতাব্দীর কবি ছিলেন।
৪) বৃন্দাবন দাসের পিতা এবং মাতার নাম কী? আর তাঁর গুরুর নাম কী?
★উত্তর - বৃন্দাবন দাসের পিতার নাম বৈকুণ্ঠ দাস এবং মাতার নাম নারায়ণী দেবী, যিনি ছিলেন শ্রীনিবাস আচার্যের ভ্রাতুষ্পুত্রী। আর তাঁর গুরুর নাম নিত্যানন্দ প্রভু।
৫) বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম চৈতন্য জীবন-চরিত কে রচনা করেন? তাঁর রচিত চৈতন্য জীবনীমূলক কাব্যটির নাম কী?
★উত্তর - বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম চৈতন্য জীবন-চরিত রচনা করেন বৃন্দাবন দাস। তাঁর রচিত চৈতন্য জীবনীমূলক কাব্যটির নাম "শ্রীচৈতন্যভাগবত"।
৬) ড. বিমানবিহারী মজুমদার ও গবেষক রামগতি ন্যায়রত্নের মতে, বৃন্দাবন দাস তাঁর "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যটি কত খ্রিস্টাব্দে রচনা করেন?
★উত্তর - ড. বিমানবিহারী মজুমদার ও গবেষক রামগতি ন্যায়রত্নের মতে, বৃন্দাবন দাস তাঁর "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যটি আনুমানিক ১৫৪৮ খ্রিস্টাব্দে রচনা করেন।
★Extra Notes :-
- গবেষক দীনেশচন্দ্র সেনের মতে, বৃন্দাবন দাসের "শ্রীচৈন্যভাগবত" কাব্যটি ১৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে রচিত হয়েছিল।
- গবেষক অম্বিকাচরণ ব্রহ্মচারীর মতে, "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যটি ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে রচিত। তিনি একটি পুথিতে এই কাব্যের রচনাকাল নির্দেশে নিম্নের শ্লোকটি উল্লেখ করেছেন --- "চৌদ্দশত সাতানব্বই শকের গণন। / নিত্যানন্দ ধ্যানে গ্রন্থ হইল সমাপন।"
- গবেষক জগবন্ধু ভদ্র ও অত্যুতচরণ চৌধুরীর মতে, "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যটি ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দে রচিত।
- ড. সুকুমার সেনের মতে, "চৈতন্যভাগবত' রচনার সমাপ্তিকাল ১৫৩৫-৩৬ খ্রিস্টাব্দে ধরিতে হয়।" তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তাঁর যুক্তিস্বরূপ তিনি জানিয়েছেন, গ্রন্থরচনাকালে নিত্যানন্দ হয় দারপরিগ্রহ করেননি, না হয় তখন বীরভদ্রের জন্ম হয়নি। সুতরাং এই সিদ্ধান্ত অনুসারে বৃন্দাবন দাসের "শ্রীচৈতন্যভাগবত" রচনার সমাপ্তিকাল ধরতে হয় ১৫৩৫-৩৬ খ্রিস্টাব্দে।
- অধ্যাপক সুখময় মুখোপাধ্যায়ের মতে, "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যটি ১৫৩৮-১৫৫০ খ্রিস্টাব্দের ভিতর রচিত হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে তিনি তাঁর "প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের কালক্রম" গ্রন্থে বলেছেন, --- "চৈতন্যভাগবতে'র রচনাকালের নিম্নতম সীমা ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দ। সুতরাং ১৫৩৮-১৫৫০ খ্রিস্টাব্দের ভিতর বৃন্দাবন দাস 'চৈতন্যভাগবত' রচনা করেছিলেন বলে সিদ্ধান্ত করা যায়।"
- অধ্যাপক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের মতে, বৃন্দাবন দাসের "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যের রচনাকাল ১৫৩৪-৪৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে।
৭) বৃন্দাবন দাস তাঁর "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যের চৈতন্যবিষয়ক তথ্য কার কাছ থেকে পেয়েছিলেন? তাঁর কাব্যের রচনাশৈলীর নির্মাণ অনেকাংশে কার, কোন্ কাব্য অনুসারে হয়েছে?
★উত্তর - বৃন্দাবন দাস তাঁর "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যের চৈতন্যবিষয়ক তথ্য গুরু নিত্যানন্দ প্রভুর কাছ থেকে পেয়েছিলেন। তাঁর কাব্যের রচনাশৈলীর নির্মাণ ১৫১৩ খ্রিস্টাব্দে রচিত মুরারী গুপ্তের "শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যচরিতামৃত" বা "মুরারী গুপ্তের কড়চা" অনুসারে হয়েছে।
৮) বৃন্দাবন দাসের "চৈতন্যমঙ্গল" কাব্যের নাম পরিবর্তন করে "শ্রীচৈতন্যভাগবত" নাম রাখা হয় কেন?
★উত্তর - বৃন্দাবন দাসের কাব্যের প্রথমে নাম ছিল "চৈতন্যমঙ্গল"। কিন্তু পরবর্তীতে এই কাব্যের নাম পরিবর্তন করা হয়, কারণ - লোচন দাসের চৈতন্যজীবনী বিষয়ক কাব্যেরও নাম ছিল একই। তাই বৃন্দাবন দাস মাতা নারায়ণী দেবীর নির্দেশানুসারে কিংবা বৃন্দাবনের মোহান্তদের পরামর্শ অনুসারে তাঁর "চৈতন্যমঙ্গল" কাব্যের নাম পরিবর্তন করে "শ্রীচৈতন্যভাগবত" নাম রাখা হয়।
৯) বৃন্দাবন দাস কার নির্দেশ ও উপদেশ অনুযায়ী "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যটি লেখেন? এই কাব্যের পূর্ব নাম কী ছিল?
★উত্তর - বৃন্দাবন দাস তাঁর গুরু নিত্যানন্দ প্রভুর নির্দেশ ও উপদেশ অনুযায়ী "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যটি লেখেন। এই কাব্যের পূর্ব নাম ছিল "চৈতন্যমঙ্গল"।
১০) বৃন্দাবন দাসের "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যটি কয়টি খণ্ডে বিভক্ত? প্রতিটি খণ্ডের নাম উল্লেখ করে সেগুলির পরিচ্ছেদ বা অধ্যায় সংখ্যা উল্লেখ করুন।
★উত্তর - বৃন্দাবন দাসের "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যটি তিনটি খণ্ডে বিভক্ত। যথা - আদিখণ্ড, মধ্যখণ্ড ও অন্ত্যখণ্ড। এই কাব্যের আদিখণ্ডে পনেরটি অধ্যায়, মধ্যখণ্ডে ছাব্বিশটি অধ্যায় ও অন্ত্যখণ্ডে দশটি অধ্যায়, অর্থাৎ এই কাব্যের তিনটি খণ্ডে মোট একান্নটি পরিচ্ছেদ বা অধ্যায় রয়েছে।
১১) বৃন্দাবন দাসের "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যের তিনটি খণ্ডের মধ্যে কোন্ খণ্ডটি শ্রেষ্ঠ? তাঁর "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যের ছত্রসংখ্যা কত?
★উত্তর - বৃন্দাবন দাসের "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যের তিনটি খণ্ডের মধ্যে আদিখণ্ডটি শ্রেষ্ঠ। তাঁর "শ্রীচেতন্যভাগবত" কাব্যের ছত্রসংখ্যা প্রায় পঁচিশ হাজার।
১২) বৃন্দাবন দাসের "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যটির পূর্ব নাম যে "চৈতন্যমঙ্গল" ছিল -- তা কার, কোন্ গ্রন্থ থেকে জানা যায়? কবিকর্ণপুর বা পুরীদাস বা পরমানন্দ সেন তাঁকে কী নামে আখ্যায়িত করেন?
★উত্তর - বৃন্দাবন দাসের "শ্রীচেতন্যভাগবত" কাব্যটির পূর্ব নাম যে "চৈতন্যমঙ্গল" ছিল -- তা কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজের "শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত" কাব্য থেকে জানা যায়। কবিকর্ণপুর বা পুরীদাস বা পরমানন্দ সেন তাঁকে "বেদব্যাস" নামে আখ্যায়িত করেন।
১৩) বৃন্দাবন দাসের "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যের কোন্ খণ্ডে নীলাচলের কাহিনি এসেছে? এই কাব্যের কোন্ খণ্ডটি অসম্পূর্ণ?
★উত্তর - বৃন্দাবন দাসের "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যের অন্ত্যখণ্ডে নীলাচল বাসের কাহিনি মুখ্যত স্থান পেয়েছে। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের অন্তিম পর্যায়ের জীবনকাহিনি এর মধ্যে খুবই অসম্পূর্ণ, বিক্ষিপ্ত ও অসংলগ্ন। এই কাব্যের অন্ত্যখণ্ডটি অসম্পূর্ণ।
১৪) বৃন্দাবন দাসের "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যের আদিখণ্ডের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনার পরিচয় দিন।
★উত্তর - (ক) আদিখণ্ডে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের জন্ম, বাল্যলীলা, বিবাহ, বিদ্যাশিক্ষা, অধ্যাপনা ও পিতৃপিণ্ডদানের জন্য গয়াগমনের ঘটনা রয়েছে।
(খ) এর মধ্যে গয়াতে যেয়ে চৈতন্যের ঈশ্বরপুরীর নিকট দীক্ষালাভ ও স্বদেশে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত ঘটনা বিবৃত হয়েছে।
১৫) বৃন্দাবন দাসের "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যের মধ্যখণ্ডের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনার পরিচয় দিন।
★উত্তর - (ক) মধ্যখণ্ডে নদিয়া জেলার নবদ্বীপে হরিনাম সংকীর্তনের বিভোর, বিহ্বল - লীলাবৈচিত্র্য, অধ্যাপনা ত্যাগ ও সন্ন্যাস গ্রহণের বর্ণনা রয়েছে।
(খ) এর মধ্যে রয়েছে কাজির বিরোধিতা ও কাজিদলন উদ্ধারের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
১৬) বৃন্দাবন দাসের "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যের শেষ খণ্ডটির অসম্পূর্ণতার কারণ কী?
★উত্তর - বৃন্দাবন দাস তাঁর গুরু নিত্যানন্দ প্রভুর মুখ থেকে যতটুকু শুনেছিলেন, ততটুকুই তিনি কাব্যমধ্যে উপস্থাপন করেছিলেন। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের নীলাচলে যাত্রার সময় তিনি মহাপ্রভুর সঙ্গে না থাকায় নিত্যানন্দ এ বিষয়ে শিষ্য বৃন্দাবন দাসকে তথ্যনির্ভর প্রামাণিক বক্তব্য জানাতে পারেন নি। ফলে "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যের শেষ খণ্ডটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
১৭) বৃন্দাবন দাসের "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যটির গুরুত্ব কোথায়?
★উত্তর - (ক) কৃষ্ণদাস কবিরাজের "শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত" কাব্যে আছে বৈষ্ণবধর্মের তত্ত্ব ও দর্শন। আর বৃন্দাবন দাসের "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যে আছে ষোড়শ শতাব্দীর ইতিহাসের বাস্তব নিষ্ঠা।
(খ) মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের জীবনের ক্রমবিকাশের লীলা বর্ণনার পাশাপাশি ষোড়শ শতাব্দীর সামাজিক, রাষ্ট্রনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মদর্শন এই গ্রন্থে আলোচিত হয়েছে।
(গ) নদিয়া জেলার নবদ্বীপে সমৃদ্ধি, বিদ্যাচর্চা, আমোদ-প্রমোদ ছাড়াও বৃহত্তর বঙ্গের রাষ্ট্রনৈতিক সংবাদও এই কাব্যে কবি দিয়েছেন।
১৮) জীবনীকাব্য হিসেবে বৃন্দাবন দাসের "শ্রীচৈতন্যভাগবত"-এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব লিখুন।
★উত্তর - (ক) বৃন্দাবন দাসের "শ্রীচৈতন্যভাগবত" হল বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম জীবনীকাব্য। এই কাব্যে সর্বমোট একান্নটি অধ্যায়ে কবি বৃন্দাবন দাস চৈতন্যের গৌড়লীলার যে বর্ণনা করেছেন, তা ঐতিহাসিক তথ্যে সমৃদ্ধ। তৎকালীন নদিয়ার নবদ্বীপ এবং বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের কথা এই কাব্য থেকে জানা যায়।
(খ) এই কাব্যে শ্রীগৌরাঙ্গের মানবমূর্তি অঙ্কন করেছেন কবি বৃন্দাবন দাস। যেটুকু তিনি তাঁর গুরু নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর মুখ থেকে শুনেছেন সেই অংশটুকুকেই যথাযথভাবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি লিখেছেন, - "নিত্যানন্দ প্রভু মুখে বৈষ্ণবের তত্ত্ব। / কিছু কিছু শুনিলাম সবার মহত্ত্ব।।"
★Extra Point :-
(গ) বৃন্দাবন দাস এই কাব্যে চৈতন্যদেবের ব্যক্তিমহিমা উপস্থাপন করেছেন। তাই ভক্তির ঢেউ অতিক্রম করে পাঠক অনায়াসে জানতে পারেন এক তরুণ সন্ন্যাসীর জীবনকথা, যেখানে বাল্যের দুরন্তপনা, কৈশোরের শিক্ষা, যৌবনের বিবাহ, বিবাহোত্তর সন্ন্যাসপর্ব এসবই বিশ্বস্তভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
১৯) বৃন্দাবন দাসের কবিপ্রতিভার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন।
★উত্তর - (ক) বৃন্দাবন দাসের "শ্রীচৈতন্যভাগবত" গ্রন্থে ঐতিহাসিক বস্তু নিষ্ঠার পরিচয় রয়েছে। ষোড়শ শতাব্দীর চৈতন্যপূর্ববর্তী যুগের সমাজ-রাজনীতি-সংস্কৃতি এই কাব্যের মধ্যে উপস্থাপিত হয়েছে।
(খ) তাঁর "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যটি পয়ারছন্দে রচিত। ছন্দ বৈচিত্র্যের জন্য এখানে ত্রিপদীর ব্যবহার করা হয়েছে।
(গ) পয়ারছন্দের প্রবাহমানতা সুরের এমন মোহনীয় আবেশ সৃষ্টি করেছে যে, এই কাব্যটি কীর্তনীয়াদের কাছে আদরণীয়। এই কাব্যে 'মঙ্গল', 'পট', 'ধানসী', 'কেদার' ইত্যাদি রাগরাগিণীর উল্লেখ আছে।
★Extra Point :-
(ঘ) পরবর্তীকালে যাঁরাই গ্রন্থ লিখেছেন, তাঁদের অনেকেই বৃন্দাবন দাসের "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্য থেকে উপাদান সংগ্রহ করেছেন।
(ঙ) বৃন্দাবন দাস তাঁর কাব্যে মানব গৌরাঙ্গের ছবি এঁকেছেন। তিনি অলৌকিক কোন তত্ত্ব কথা শোনাননি। এর প্রমাণ কাজি-দলন প্রসঙ্গে তিনি যে বিবরণ দিয়েছেন সেখানে প্রতিবাদী গৌরাঙ্গকে পাই, ক্ষমাশীল গৌরাঙ্গ সেখানে অনুপস্থিত।
২০) বৃন্দাবন দাসের "শ্রীচৈতন্যভাগবত" কাব্যটির সীমাবদ্ধতা কোথায়?
★উত্তর - বৃন্দাবন দাস তাঁর গুরু নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর মুখ থেকে যতটুকু শুনেছিলেন, ততটুকুই তিনি কাব্যমধ্যে উপস্থাপন করেছিলেন। তাই এই কাব্যে নবদ্বীপ লীলার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেলেও নীলাচলের কাহিনি প্রসঙ্গে তিনি অতি সংক্ষেপে বলেছেন। চৈতন্যদেবের জীবনের শেষ পর্যায়ের কাহিনি এখানে যেন অনেকটা অধরা। এর আদিখণ্ডে চৈতন্যের জন্ম থেকে গয়াগমন ও সেখান থেকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন এবং মধ্যখণ্ডে চৈতন্যের সন্ন্যাস গ্রহণের বিস্তারিত তথ্য থাকলেও অন্ত্যখণ্ডে গৌড়ীয় ভক্তদের সঙ্গে মিলন ও মহোৎসবের মধ্য দিয়েই যেন কাব্যটি হঠাৎ থেকে গেছে। তথ্য ও তত্ত্ব কোনটাই অন্ত্যখণ্ডে পরিপূর্ণ নয়। তিনি সূত্রাকারে অন্ত্যলীলা খণ্ডটি মাত্র দশটি পরিচ্ছেদ বা অধ্যায়ে সমাপ্ত করায় এই কাব্যটির শেষাংশ অতি সংক্ষিপ্ত হয়েছে।
¤ আরও দেখুন :-
মধ্যযুগ থেকে কয়েকটি ডেসক্রিপটিভ প্রশ্নোত্তর
মধ্যযুগ থেকে গুরুত্বপূর্ণ ডেসক্রিপটিভ প্রশ্নোত্তর
চর্যাপদ থেকে গুরুত্বপূর্ণ ডেসক্রিপটিভ প্রশ্নোত্তর
- আলোচক : সৌম্য মাইতি
- যোগাযোগ : ৬২৯০৩৭৭১৩৪
- S.L.S.T বাংলা অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে চাইলে ফোন করে যোগাযোগ করুন আমার ৬২৯০৩৭৭১৩৪ নম্বরে, অথবা আমার WhatssApp-তে ম্যাসেজ করুন ৮৭৬৮৮৩০২৩০ নম্বরে। কারণ আমার এখন নতুন ব্যাচে ভর্তি চলছে। এখানে উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর মতো সঠিক তথ্যসহকারে ১ নম্বরের পাশাপাশি ২ নম্বরের ডেসক্রিপটিভ প্রশ্নোত্তরও করানো হয়। ধন্যবাদ।
Post a Comment