¤ উপন্যাস সাহিত্যে বুদ্ধদেব বসুর অবদান ¤
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
(৩০ নভেম্বর ১৯০৮ --- ১৮ মার্চ ১৯৭৪)
দীনেশরঞ্জন দাস সম্পাদিত এবং গোকুলচন্দ্র নাগ সহ-সম্পাদিত "কল্লোল" (প্রথম প্রকাশ : ১৯২৩/১ বৈশাখ ১৩৩০) পত্রিকাকে আশ্রয় করে সেকালের তরুণ কথাশিল্পীরা সাহিত্যে যে নূতন যুগ আনতে চেয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বুদ্ধদেব বসু। প্রথম "কল্লোল" পত্রিকায় লেখার সময় বুদ্ধদেব বসুর বয়স ছিল ১৫ বছর। নূতন যুগের আবেগ ও মুল্যবােধকে তিনি সাহিত্যের রূপ দিয়েছিলেন। তাঁর কথাসাহিত্যের সম্ভারে প্রথম দেখা যায় ছােটগল্প। এর দুই বছর পরে তিনি উপন্যাস রচনা শুরু করেছিলেন। বুদ্ধদেব বসুর যুগ্মভাবে বা যৌথভাবে রচিত উপন্যাস, একত্রে রচিত উপন্যাস, শিশু-কিশোর উপন্যাস ও গোয়েন্দা বা ডিটেকটিভ উপন্যাস বাদ দিয়ে তাঁর গ্রন্থাকারে প্রকাশিত মােট উপন্যাসের সংখ্যা ৪৩টি। [নিম্নে উল্লিখিত যৌথভাবে বা একত্রে রচিত উপন্যাসগুলিকে নিয়ে তাঁর গ্রন্থাকারে প্রকাশিত উপন্যাস সংখ্যা ৪৮টি ধরা হয়েছে।]
★বুদ্ধদেব বসুর এই ৪৮টি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত উপন্যাসের মধ্যে [প্রথম অংশ বুদ্ধদেব বসুর স্বনামে এবং চতুর্থ অংশ "বিপ্রদাস মিত্র" ছদ্মনামে রচিত "চৌরঙ্গী" (রচনাকাল : ১৯৩৪ ও গ্রন্থাকারে প্রকাশকাল : ১৯৩৫) উপন্যাসটিকে একত্রে রচিত উপন্যাস না ধরে] ২৬টি [যথাক্রমে ১-১৩ ও ১৮-৩০ নং উপন্যাস] উপন্যাস ১৯২৮-১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রচিত ও গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছিল। আর ৪টি [যথাক্রমে ১৪, ১৫, ১৬ ও ১৭ নং উপন্যাস] উপন্যাস ["বিসর্পিল" (রচনাকাল : ১৯৩২ ও গ্রন্থাকারে প্রকাশকাল : ১৯৩৪/১৩৪১), "বনশ্রী" (রচনাকাল : ১৯৩৩ ও গ্রন্থাকারে প্রকাশকাল : ১৯৩৪/১৩৪১), "বান্ধবী" (গ্রন্থাকারে প্রকাশকাল : ১৯৩৪/১৩৪১) এবং "সাতনরী" (রচনাকাল ও গ্রন্থাকারে প্রকাশকাল অজ্ঞাত)] একত্রে রচিত ও প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ "বুদ্ধদেব বসুর উপন্যাসের প্রথম পর্যায় (১৯২৮-১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ)"-তে অন্তর্ভুক্ত মোট ৩০ (২৬+৪)-টি [১-৩০নং উপন্যাস] উপন্যাসের রচনাকাল ও প্রকাশকালের তালিকা ক্রমানুসারে সাজিয়ে নিম্নে দেওয়া হবে।
★বাকি বুদ্ধদেব বসুর গ্রন্থাকারে প্রকাশিত ১৮টি উপন্যাসের মধ্যে ১৭টি [যথাক্রমে ৩০-৩৬নং ও ৩৮-৪৮নং উপন্যাস] উপন্যাসই ১৯৪৫-১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রচিত ও গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় [এখানে দুটি উপন্যাস বুদ্ধদেব বসুর মৃত্যু (১৮ই মার্চ, ১৯৭৪)-র আগে, অর্থাৎ ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের আগে বা ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে রচিত হলেও প্রকাশিত হয় বুদ্ধদেব বসুর মৃত্যু (১৮ই মার্চ, ১৯৭৪)-র পরে যথাক্রমে ১৯৭৫ ও ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে]। আর ১টি [৩৭ নং] উপন্যাস ["বসন্ত জাগ্রত দ্বারে" (গ্রন্থাকারে প্রকাশকাল : ১৯৫৪)] যৌথভাবে রচিত ও প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ "বুদ্ধদেব বসুর উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্ব বা পর্যায় (১৯৪৫-১৯৭২/১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ)"-তে অন্তর্ভুক্ত মোট ১৮ (১৭+১)-টি [৩০-৪৮নং উপন্যাস] উপন্যাসের রচনাকাল ও প্রকাশকালের তালিকা ক্রমানুসারে সাজিয়ে নিম্নে দেওয়া হবে।
★এই সময়কালের মধ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৮) ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫) সংগঠিত হয়েছিল। এছাড়া সমকালীন বাঙালির মানসপটে পাশ্চাত্য সাহিত্যের অনুভূতি ও আবেগ, সমাজবাদ ও ফ্রয়েডীয় মনস্তত্ত্ব বা যৌনতত্ত্ব কথাসাহিত্যিকদের শিল্প চেতনাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল। স্বাভাবিকভাবেই বুদ্ধদেব বসুর উপন্যাসগুলিতে এই প্রভাব পড়েছিল। তাই তাঁর প্রথমদিকের উপন্যাসে নর-নারীরা যেভাবে বিচরণ করেছিল শেষের দিকের উপন্যাসে তা দেখা যায় না। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের পরবর্তীকালের, অর্থাৎ ১৯৪৫-১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রচিত ও ১৯৪৫-১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত উপন্যাসের চরিত্রগুলির স্বভাব, চিন্তা, চেতনা ও জীবনাচরণেরও পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল। সুতরাং এই পরিবর্তনের ফলে তাঁর প্রথম ও শেষের দিকের উপন্যাসের বিভাজনের কিছু বৈশিষ্ট্য আমরা দেখতে পাই। বুদ্ধদেব বসুর উপন্যাসের এইসব দিকগুলি লক্ষ্য করে তাঁর উপন্যাসগুলিকে সমালোচকেরা ২টি পর্যায়ে বিভক্ত করেছেন। যথা ---
(ক) বুদ্ধদেব বসুর উপন্যাসের প্রথম পর্যায় (১৯২৮-১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ) :-
প্রথম পর্যায়ের উপন্যাস-রচনাকাল-প্রকাশকাল
১) ''সাড়া'' [এটি বুদ্ধদেব বসুর প্রথম (সাধুভাষায়) রচিত ও প্রকাশিত উপন্যাস। এই উপন্যাসটিকে অনেক সমালোচক "অশ্লীল" উপন্যাস বলে উল্লেখ করেছেন।] --- ১৯২৮-১৯২৯ --- জানুয়ারি, ১৯৩০
২) "অকর্মণ্য" [এটি বুদ্ধদেব বসুর দ্বিতীয় রচিত ও প্রকাশিত উপন্যাস।] --- মার্চ, ১৯২৯ --- ১৯৩১
৩) "মন-দেয়া-নেয়া" --- নভেম্বর, ১৯৩০ --- জুলাই, ১৯৩২
৪) "যবনিকা পতন" --- ১৯৩১-১৯৩২ --- ১৯৩২
৫) "রডোডেনড্রন গুচ্ছ" --- ১৯৩২ --- নভেম্বর, ১৯৩২
৬) "অসূর্যম্পশ্যা" --- ১৯৩২ --- জানুয়ারি, ১৯৩৩
৭) "সানন্দা" --- ১৯৩২ --- ১৯৩৩
৮) গুগলের কপিরাইটের আওতায় পড়ার জন্য এই উপন্যাসটির নাম দিতে পারলাম না --- ১৯৩২ --- ১৯৩৩
৯) "হে বিজয়ী বীর" --- অজ্ঞাত --- ১৯৩৩
১০) "ধূসর গোধূলি" --- ১৯৩৩ --- ১৯৩৩
১১) "অনেক রকম" [নাট্যোপন্যাস] --- ১৯৩০ --- ১৯৩৩ (১৩৪০)
★পরবর্তী নাম : ''ক্ষণিকের বন্ধু'' --- অজ্ঞাত --- ১৩৫৯ বঙ্গাব্দ।
১২) "এলোমেলো" --- অজ্ঞাত --- ১৯৩৩
১৩) "একদা তুমি প্রিয়ে" --- জানুয়ারি, ১৯৩৩ (১৩৪০) --- মে, ১৯৩৩ (১৩৪১)
১৪) "বিসর্পিল" [এটি একত্রে রচিত উপন্যাস। এই উপন্যাসটিকে অনেক সমালোচক "বারোয়ারি" উপন্যাস বলে থাকেন।] --- ১৯৩২ --- ১৯৩৪ (১৩৪১)
১৫) "বনশ্রী" [এটি একত্রে রচিত উপন্যাস। এই উপন্যাসটিকে অনেক সমালোচক "বারোয়ারি" উপন্যাস বলে থাকেন।] --- ১৯৩৩ --- ১৯৩৪ (১৩৪১)
১৬) "বান্ধবী" [এটি একত্রে রচিত ও "বারোয়ারি" উপন্যাস।] --- অজ্ঞাত --- ১৯৩৪ (১৩৪১)
১৭) "সাতনরী" [এই উপন্যাসটিকে সাতজন লেখক একত্রে রচনা করেছেন বলে উপন্যাসটির নামকরণ করা হয়েছে "সাতনরী"। এটি একত্রে রচিত ও "বারোয়ারি" উপন্যাস।] --- অজ্ঞাত --- অজ্ঞাত
১৮) "আমার বন্ধু" --- ১৯৩৩ --- ১৯৩৪
১৯) "সূর্য্যমুখী" --- ১৯৩৪ --- মে, ১৯৩৪
২০) "রূপালি পাখি" --- ১৯৩৪ --- ১৯৩৪
২১) "লালমেঘ" --- ১৯৩৪ --- ১৯৩৪
২২) "পরস্পর" --- ১৯৩২-১৯৩৪ --- অক্টোবর, ১৯৩৪
২৩) "বাড়িবদল" --- ১৯৩৪ --- ১৯৩৫
২৪) "চৌরঙ্গী" [এটি একত্রে (প্রথম অংশ বুদ্ধদেব বসুর স্বনামে এবং চতুর্থ অংশ বুদ্ধদেব বসুর "বিপ্রদাস মিত্র" ছদ্মনামে) রচিত উপন্যাস। এই উপন্যাসটিকে অনেক সমালোচক "বারোয়ারি" উপন্যাস বলে থাকেন।] --- ১৯৩৪ --- ১৯৩৫
২৫) "বাসরঘর" --- ১৯৩৫ --- ১৯৩৫
২৬) "পারিবারিক" --- অজ্ঞাত --- ১৯৩৬
★পরবর্তী নাম : "দুই ঢেউ এক নদী" --- ১৯৫৭ --- মে, ১৯৫৮ (বৈশাখ, ১৩৬৫)
২৭) "পরিক্রমা" --- ১৯৩৬ --- ১৯৩৮
২৮) "কালো হাওয়া" --- ১৯৩৯-১৯৪০ --- ১৯৪২
২৯) "জীবনের মূল্য" --- অজ্ঞাত --- ১৯৪২
৩০) "অদর্শনা" --- ১৯৪৩ --- ১৯৪৪
★পরবর্তী নাম : "তুমি কি সুন্দর'' --- অজ্ঞাত --- ১৯৫১ (১৩৫৮)
(খ) বুদ্ধদেব বসুর উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্যায় (১৯৪৫-১৯৭২/১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ) :-
দ্বিতীয় পর্যায়ের উপন্যাস-রচনাকাল-প্রকাশকাল
৩১) "বিশাখা" --- ১৯৪৫ --- ১৯৪৬
৩২) "তিথিডোর" --- ১৯৪৭-১৯৪৯ --- ১৯৪৯
৩৩) "হাওয়া বদল" --- অজ্ঞাত --- ১৯৫০
৩৪) গুগলের কপিরাইটের আওতায় পড়ার জন্য এই উপন্যাসটির নাম দিতে পারলাম না --- ১৯৫০ --- ১৯৫১
৩৫) "নির্জন স্বাক্ষর" --- ১৯৫০ --- জুলাই, ১৯৫১
৩৬) "মৌলিনাথ" --- অজ্ঞাত --- ১৯৫২
৩৭) গুগলের কপিরাইটের আওতায় পড়ার জন্য এই উপন্যাসটির নাম দিতে পারলাম না --- অজ্ঞাত --- ১৯৫৪
৩৮) "শেষ পাণ্ডুলিপি" --- অজ্ঞাত --- ১৯৫৬
৩৯) "শোণপাংশু" --- ১৯৫৮ (১৩৬৫) --- অক্টোবর, ১৯৫৯ (আশ্বিন, ১৩৬৬)
৪০) "নীলাঞ্জনের খাতা" --- [প্রথম খসড়ার রচনাকাল : ১৯৫৬ ও সম্পূর্ণ অংশের রচনাকাল : ১৯৫৯ (১৩৬৬)] --- ১৯৬০ (১৩৬৬)
৪১) "পাতাল থেকে আলাপ" --- অজ্ঞাত --- ১৯৬৭
৪২) "রাত ভ'রে বৃষ্টি" [এই উপন্যাসটিকে সমালোচকেরা "অশ্লীল" উপন্যাস বলে উল্লেখ করেছেন।] --- মে, ১৯৬৬-১৯৬৭ --- ১৯৬৭
৪৩) "আয়নার মধ্যে একা" --- ১৯৬৮ --- ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৮
৪৪) "গোলাপ কেন কালো" [এই উপন্যাসটিকে অনেক সমালোচক "অশ্লীল" উপন্যাস বলে উল্লেখ করেছেন।] ---১৯৬৭-১৯৬৮ --- ১৯৬৮
৪৫) "বিপন্ন বিস্ময়" --- অজ্ঞাত --- ১৯৬৯
৪৬) "রুকমি" [এটি বুদ্ধদেব বসুর জীবদ্দশায় (জীবিতকালে) প্রকাশিত শেষ উপন্যাস।] --- ১৯৭১-১৯৭২ --- ১৯৭২
৪৭) "প্রভাত ও সন্ধ্যা" [এটি বুদ্ধদেব বসুর মরণোত্তর (মৃত্যুর পরে) প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস।] --- অজ্ঞাত --- ১৯৭৫
৪৮) "এক বৃদ্ধের ডায়েরি" [এটি বুদ্ধদেব বসুর জীবদ্দশায় (জীবিতকালে) রচিত শেষ উপন্যাস এবং তাঁর মরণােত্তর (মৃত্যুর পরে) প্রকাশিত দ্বিতীয় বা শেষ উপন্যাস।] --- ১৯৭২ --- ১৯৮০
বুদ্ধদেবের উপন্যাস: বিষয় অনুসারে শ্রেণিবিন্যাস
বুদ্ধদেব বসুর উপন্যাসগুলিকে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে বিন্যাস করার পর এবার তাঁর উপন্যাসগুলিকে আমরা বিষয় অনুসারে শ্রেণিবিন্যাস করব। এ প্রসঙ্গে বলা প্রয়ােজন যে, তাঁর উপন্যাসের বিষয় ভাবনার মূল সুর প্রায় একই রকম। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৮) ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫)-এর সময়কালের লেখা ও পরবর্তী কালের লেখা উপন্যাসগুলির কিছু বিষয় ভাবনা ও চরিত্রের চেতনার সজীব ও গাঢ় অনুভূতি লক্ষ করা যায়। এই অনুভূতি তাঁর উপন্যাসকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করে। ফলে তাঁর উপন্যাসে ঘটনা ও নর-নারীর জীবন যাত্রায় আলাদা বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠতে দেখা যায়। এই পরিবর্তন সূত্রে তাঁর উপন্যাসগুলিকে বিভিন্ন বিষয় ও বৈশিষ্ট্যের গােত্র ফেলে আলাদা করা যেতে পারে। যেমন ---
(ক) বুদ্ধদেব বসুর প্রথম পর্যায়ের (১৯২৮-১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ) উপন্যাসগুলিকে বিষয় অনুসারে শ্রেণিবিন্যাস করা হল :-
(১) আত্মমুখী স্বপ্নাবিষ্ট রােমান্টিক উপন্যাস :-
"সাড়া" (জানুয়ারি, ১৯৩০) [এটি বুদ্ধদেব বসুর প্রথম (সাধুভাষায়) রচিত ও প্রকাশিত উপন্যাস। এই উপন্যাসটিকে অনেক সমালোচক "অশ্লীল" উপন্যাস বলে উল্লেখ করেছেন।], "রডােডেনড্রন গুচ্ছ" (নভেম্বর, ১৯৩২), "অসূর্যস্পশ্যা" (জানুয়ারি, ১৯৩৩), "সানন্দা" (১৯৩৩), "ধূসর গােধূলী" (১৯৩৩), "অনেক রকম" (নাট্যোপন্যাস : ১৯৩৩/১৩৪০) [★পরবর্তী নাম : "ক্ষণিকের বন্ধু" (১৩৫৯ বঙ্গাব্দ)।], "হে বিজয়ী বীর" (১৯৩৩), "এলােমেলাে" (১৯৩৩), "একদা তুমি প্রিয়ে" (মে, ১৯৩৩/১৩৪১), "সূর্যমুখী" (মে, ১৯৩৪), "পরস্পর" (অক্টোবর, ১৯৩৪), "বাড়িবদল" (১৯৩৫)।
(২) দাম্পত্য জীবন ও বিবাহােত্তর বা বিবাহ পরবর্তী প্রেমের উপন্যাস :-
"রূপালি পাখি" (১৯৩৪), "লালমেঘ" (১৯৩৪), "কালাে হাওয়া" (১৯৪২), "চৌরঙ্গী" (১৯৩৫) [★এটি একত্রে (প্রথম অংশ বুদ্ধদেব বসুর স্বনামে এবং চতুর্থ অংশ বুদ্ধদেব বসুর "বিপ্রদাস মিত্র" ছদ্মনামে) রচিত উপন্যাস]।
(৩) দেহ-চেতনার যন্ত্রণা ও রহস্যসূচক উপন্যাস :-
"মন-দেয়া-নেয়া" (জুলাই, ১৯৩২), "যবনিকা পতন" (১৯৩২), "সূর্যমুখী" (মে, ১৯৩৪)।
(৪) বিশুদ্ধ প্রেমের উপন্যাস :-
"অকর্মণ্য" (১৯৩১) [এটি বুদ্ধদেব বসুর দ্বিতীয় রচিত ও প্রকাশিত উপন্যাস।], "যেদিন ফুটলাে কমল" (১৯৩৩), "আমার বন্ধু" (১৯৩৪), "পারিবারিক" (১৯৩৬) [★পরবর্তী নাম : "দুই ঢেউ এক নদী" (মে, ১৯৫৮/বৈশাখ, ১৩৬৫)।], "পরিক্রমা" (১৯৩৮)।
(৫) মনস্তাত্ত্বিক বা মনস্তত্ত্ব লক্ষণ সম্পন্ন উপন্যাস :-
"বাসরঘর" (১৯৩৫), "অদর্শনা" (১৯৪৪) [★পরবর্তী নাম : "তুমি কি সুন্দর" (১৯৫১/১৩৫৮)]।
(খ) বুদ্ধদেব বসুর দ্বিতীয় পর্যায়ের (১৯৪৫-১৯৭২/১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ) উপন্যাসগুলিকে বিষয় অনুসারে শ্রেণিবিন্যাস করা হল :-
(১) চেতনামূলক উপন্যাস :-
"হাওয়া বদল" (১৯৫০), "নির্জন স্বাক্ষর" (জুলাই, ১৯৫১), "আয়নার মধ্যে একা" (ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৮), "রুকমি" (১৯৭২) [★এটি বুদ্ধদেব বসুর জীবদ্দশায় প্রকাশিত শেষ উপন্যাস]।
(২) জীবনাদর্শমূলক উপন্যাস :-
"মৌলিনাথ" (১৯৫২), "নীলাঞ্জনের খাতা" (১৯৬০/১৩৬৬), "প্রভাত ও সন্ধ্যা" (১৯৭৫) [★এটি বুদ্ধদেব বসুর মরণোত্তর প্রকাশিত শেষ উপন্যাস।], "শােণপাংশু" (১৯৮০)।
(৩) দাম্পত্য জীবনের প্রেম ও নূতন পথের দিশারীমূলক উপন্যাস :-
"শেষ পাণ্ডুলিপি" (১৯৫৬), "রাত ভ'রে বৃষ্টি" (১৯৬৭) [এই উপন্যাসটিকে সমালোচকেরা "অশ্লীল" উপন্যাস বলে উল্লেখ করেছেন], "গােলাপ কেন কালাে" (১৯৬৮) [এই উপন্যাসটিকে অনেক সমালোচক "অশ্লীল" উপন্যাস বলে উল্লেখ করেছেন], "বিপন্ন বিস্ময়" (১৯৬৯)।
(৪) প্রেমের উপন্যাস :-
"বিশাখা" (১৯৪৬), "তিথিডাের" (১৯৪৯), "মনের মতাে মেয়ে" (১৯৫১), "পাতাল থেকে আলাপ" (১৯৬৭), "এক বৃদ্ধের ডায়েরি" (১৯৮০) [★এটি বুদ্ধদেব বসুর জীবদ্দশায় রচিত শেষ উপন্যাস এবং মরণােত্তর প্রকাশিত দ্বিতীয় বা শেষ উপন্যাস]।
বুদ্ধদেবের যৌথভাবে বা একত্রে রচিত উপন্যাস
১) ''বিসর্পিল'' (রচনাকাল : ১৯৩২ ও গ্রন্থাকারে প্রকাশকাল : ১৯৩৪/১৩৪১) --- বুদ্ধদেব বসু এই উপন্যাসটি কথাসাহিত্যিক অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ও প্রেমেন্দ্র মিত্রের সঙ্গে একত্রে রচনা করেন। উপন্যাসটিকে অনেক সমালোচক "বারোয়ারি" উপন্যাস বলে থাকেন।
২) ''বনশ্রী'' (রচনাকাল : ১৯৩৩ ও গ্রন্থাকারে প্রকাশকাল : ১৯৩৪/১৩৪১) --- এই উপন্যাসটি বুদ্ধদেব বসু কথাসাহিত্যিক অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ও প্রেমেন্দ্র মিত্রের সঙ্গে একত্রে রচনা করেন। উপন্যাসটিকে অনেক সমালোচক "বারোয়ারি" উপন্যাস বলে থাকেন।
৩) "বান্ধবী" (গ্রন্থাকারে প্রকাশকাল : ১৯৩৪/১৩৪১) --- এই উপন্যাসটি বুদ্ধদেব বসু কথাসাহিত্যিক নরেশ্চন্দ্র সেনগুপ্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সৌরিন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়, প্রবোধ কুমার সান্যাল ও শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে একত্রে রচনা করেন। উপন্যাসটিকে "বারোয়ারি উপন্যাস" বলা হয়।
৪) ''চৌরঙ্গী'' (রচনাকাল ও "প্রগতি" পত্রিকায় প্রকাশকাল : ১৯৩৪ ও গ্রন্থাকারে প্রকাশকাল : ১৯৩৫) --- এই উপন্যাসটি বুদ্ধদেব বসু সাহিত্যিক প্রভূ গুহঠাকুরতা ও শচীন্দ্র নাথ করের সঙ্গে একত্রে রচনা করেন। উপন্যাসটির প্রথম অংশ বুদ্ধদেব বসু স্বনামে ও চতুর্থ অংশ "বিপ্রদাস মিত্র" ছদ্মনামে রচনা করেন। উপন্যাসটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় অংশ যথাক্রমে প্রভূ গুহঠাকুরতা ও শচীন্দ্র নাথ কর রচনা করেন। উপন্যাসটিকে অনেক সমালোচক "বারোয়ারি" উপন্যাস বলে থাকেন।
৫) ''বসন্ত জাগ্রত দ্বারে'' (গ্রন্থাকারে প্রকাশকাল : ১৯৫৪) --- এই উপন্যাসটি বুদ্ধদেব বসু তাঁর সহধর্মিণী সাহিত্যিক প্রতিভা বসুর সঙ্গে যৌথভাবে রচনা করন।
৬) "সাতনরী" (গ্রন্থাকারে প্রকাশকাল অজ্ঞাত) --- এই উপন্যাসটি সাতজন লেখক একত্রে রচনা করেছেন বলে উপন্যাসটির নামকরণ করা হয়েছে "সাতনরী"। উপন্যাসটি বুদ্ধদেব বসু কথাসাহিত্যিক (শিশুসাহিত্যিক) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, অন্নদাশঙ্কর রায়, প্রবোধকুমার সান্যাল, রমেশ সেন ও রাধাকিঙ্কর রায়চৌধুরীরর সঙ্গে একত্রে রচনা করেন। উপন্যাসটিকে "বারোয়ারি" উপন্যাস বলা হয়।
- আলোচক : সৌম্য মাইতি
- যোগাযোগ : ৬২৯০৩৭৭১৩৪
Post a Comment