উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক এবং রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
¤ উপভাষা বলতে কী বোঝায়?
★উত্তর - সাধারণভাবে উপভাষা বলতে বোঝানো হয় দেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র অঞ্চলে ব্যবহৃত ভাষাকে বা আঞ্চলিক ভাষাকে বা বিশেষ অঞ্চলের দৈনন্দিন জীবন-যাপনের ভাষাকে।
- কিন্তু ফার্গুসন বলেছেন, ---
"উপভাষা হল কোন ভাষার এক বা একাধিক বৈচিত্র্যের গুচ্ছ, যেগুলোতে বিদ্যমান থাকে একটা বা একগুচ্ছ সাধারণ বৈশিষ্ট্য, যা তাদের স্বতন্ত্র করে দেয় ভাষার অন্যান্য বৈচিত্র্য থেকে; এবং ওই বৈশিষ্ট্যগুলোকে ভাষিক বা অভাষিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় এককরূপে।"
অথবা, একই ভাষা সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জীবনে কথাবার্তায় ব্যবহৃত ধ্বনিগত, রূপগত ও বিশিষ্ট বাগধারাগত বৈশিষ্ট্য সমন্বিত যে ভাষা বিশেষ অঞ্চল ভেদে পরিলক্ষিত হয়, তাকে উপভাষা বলে।
¤ বাংলার মৌখিক উপভাষাগুলিকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
★উত্তর - বাংলার মৌখিক উপভাষাগুলিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :- (ক) রাঢ়ি উপভাষা, (খ) বঙ্গালী উপভাষা, (গ) ঝাড়খন্ডী উপভাষা, (ঘ) বরেন্দ্রী উপভাষা এবং (ঙ) কামরূপী বা রাজবংশী উপভাষা।
¤ প্রত্যেকটি উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক বা ধ্বনিগত এবং রূপতাত্ত্বিক বা রূপগত লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য উদাহরণসহ নিম্নে দেওয়া হল :-
(ক) রাঢ়ি উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক এবং রূপতাত্ত্বিক লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্যগুলি উদাহরণসহ আলোচনা :-
★ধ্বনিতাত্ত্বিক বা ধ্বনিগত লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য :
১) অ-কারের ও-কার রূপে উচ্চারণ। যেমন :- বন>বোন, মধু>মোধু, সত্য>শোত্তো, অতি>ওতি ইত্যাদি।
২) পদের শেষে অঘোষ ধ্বনির ঘোষবৎ উচ্চারণ। যেমন :- শাক>শাগ, উপকার>উপগার ইত্যাদি।
৩) 'ন' ও 'ল' ধ্বনির বিপর্যয়। যেমন :- নয়>লয়, লাউ>নাউ, লেবু>নেবু, নৌকো>লৌকো, লোক>নোক, লঙ্কা>নঙ্কা ইত্যাদি।
৪) অপিনিহিতির প্রয়োগ লোপ পেয়ে তার জায়গায় অভিশ্রুতি প্রয়োগ। যেমন :- করিয়া>কইর্যা>করে, আজি>আইজ>আজ ইত্যাদি।
৫) দ্বিমাত্রিকতা এবং ব্যঞ্জনদ্বিত্ব। যেমন :- কখনো>কখ্খনো, গামোছা>গামছা ইত্যাদি।
৬) স্বরসংগতিজনিত পরিবর্তন। যেমন :- মিঠা>মিঠে, বিলাতি>বিলিতি, ইংরেজি>ইংরিজি, দেশি>দিশি ইত্যাদি।
৭) প্রথম স্বরধ্বনিতে শ্বাসাঘাতের জন্য পদান্ত ব্যঞ্জনের মহাপ্রাণতা। যেমন :- লাভ>লাব, মধু>মদু, সুখ>সুক ইত্যাদি।
৮) পদের মাঝে "হ"-কারের লোপ। যেমন :- যাহার>যার, তাহার>তার ইত্যাদি।
৯) শব্দের নাসিক্য ব্যঞ্জন লোপ পেয়ে সেখানে স্বরের নাসিক্যভবনের প্রবণতা। যেমন :- চন্দ্র>চাঁদ, বন্ধ>বাঁধ ইত্যাদি।
১০) স্বতোনাসিক্যীভবন বা অনাবশ্যক চন্দ্রবিন্দু উচ্চারণের প্রবণতা। যেমন :- হাতি>হাঁতি, হাসি>হাঁসি, সাপ>সাঁপ, ঘোড়া>ঘোঁড়া, ঘাস>ঘাঁস ইত্যাদি।
★রূপতাত্ত্বিক বা রূপগত লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য :
১) অতীতে উত্তমপুরুষ -লুম, -নু, -লম্-এর প্রয়োগ ছিল আকছার। যেমন :- করলুম, পড়ুন, দেখলুম ইত্যাদি।
২) অনেক সময় বহুবচন বোঝাতে 'দের' প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। যেমন :- লোকেদের বাড়ি। ছেলেদের বই। মনিবদের গাড়ি। ইত্যাদি বহুবচন "গুলি", "গুলো" প্রভৃতি প্রয়োগও হয়। যেমন :- বইগুলি, যাত্রীগুলো।
৩) গৌণকর্মে 'কে' বিভক্তির প্রয়োগ - বইটা যদুকে পড়তে দেওয়া হয়েছে। অধিকরণ কারকে 'এ', 'তে', 'য়' বিভক্তি। যেমন :- ট্রামে বড্ড ভিড়। বাড়িতে কেউ থাকে না। মেলায় মা-বাবা দুজনেই এসেছেন।
৪) ঘটমান বর্তমান ও ঘটমান অতীতের অর্থ বোঝাতে মূল ধাতুর সঙ্গে যুক্ত 'আছ্' ধাতুতে কাল ও পুরুষ বিভক্তি প্রয়োগ করা হয়। যেমন :- লিখ্ + ছি > লিখছি, পড়্ + ছিল > পড়ছিল।
- নিদর্শন :- কলকাতা ও তার সন্নিহিত অঞ্চলের উপভাষা (দক্ষিণ রাঢ়ি) - "একজন চাকরকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলে - এসব ব্যাপার হচ্ছে কেন? তাতে চাকর বললে - আপনার ভাই ফিরে এসেছে, আর আপনার বাবা তাঁকে ভালোয় ভালোয় ফিরে পেয়েছেন বলে নাচ-গান খাওয়ান-দাওয়ান করেছেন।" [ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের "বাঙ্গালা ভাষাতত্ত্বের ভূমিকা" গ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছে।]
(খ) বঙ্গালী উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক এবং রূপতাত্ত্বিক লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্যগুলি উদাহরণসহ বিশ্লেষণ :-
★ধ্বনিতাত্ত্বিক বা ধ্বনিগত লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য :
১) মধ্যবাংলার অপিনিহিতি এখনও পুরোপুরিভাবে রক্ষিত। যেমন :- করিয়া>কইর্যা, আজি>আইজ ইত্যাদি।
২) এ>অ্যা হয়ে উচ্চারণের প্রবণতা। যেমন :- মেঘ>ম্যাঘ, কেন>ক্যান, দেশ>দ্যাশ ইত্যাদি।
৩) নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি লোফ পায় না। যেমন :- চন্দ্র>চান্দ।
৪) কিছু শব্দের উচ্চারণে অনুনাসিক লোপ পায়। যেমন :- চাঁদ>চাদ, কাঁদা>কাদা ইত্যাদি।
৫) ও>উ হয়ে উচ্চারণের প্রবণতা। যেমন :- ভোর>ভুর, চোর>চুর ইত্যাদি।
৬) 'স' ও 'শ' - এর স্থলে 'হ' উচ্চারিত হয়। যেমন :- বাড়ি>বারি, নাড়ি>নারি ইত্যাদি।
৭) শব্দের প্রথম ও মাঝের 'হ'>'অ' হয়ে উচ্চারিত হয়। যেমন :- সে>হে, শাক>হাক, সকলে>হকলে, শিয়াল>হিয়াল ইত্যাদি।
৮) 'ড়'>'র' হয়ে উচ্চারিত হয়। যেমন :- বাড়ি>বারি, নাড়ি>নারি ইত্যাদি।
৯) শব্দের প্রথম ও মাঝের 'হ'>'অ' হয়ে উচ্চারিত হয়। যেমন :- হয়>অয়, হইবে>অইবে ইত্যাদি।
★রূপতাত্ত্বিক বা রূপগত লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য :
১) অতীতকালের উত্তমপুরুষে 'লাম' প্রত্যয়ের প্রয়োগ। যেমন :- খাইছিলাম, শুইছিলাম, গাইছিলাম।
২) ভবিষ্যৎকালে বোঝাতে নিত্যবৃত্ত অতীতে প্রয়োগ। যেমন :- পড়িতাম না, যাইতাম না, খাইতাম না।
৩) ঘটমান অর্থ বোঝাতে সাধারণ বর্তমানের প্রয়োগ। যেমন :- বাপে ডাকে (বাপ ডাকছে)।
৪) কর্তায় 'এ', অধিকরণকারকে 'ত', অন্য কারকের বহুবচনে 'গো' ইত্যাদি বিভক্তির প্রয়োগ দেখা যায়। যেমন :- বাপে কইছে। বাড়িত (বাড়িতে) থাকুম। আমাগো (আমাদিগকে) খাইতা দিবা না?
- নিদর্শন :- মানিকগঞ্জ, ঢাকা (বাংলাদেশ) - "একজন চাকরেরে ডাইকা জিগগাসা কৈল্লো - ইয়ার মানে কী? সে কৈলে - তোমার বা'ই আইচে, তার বা'লে-আলে পাইয়া তোমার বাপে এক খাওনা দিচেন।" [ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের "বাঙ্গালা ভাষাতত্ত্বের ভূমিকা" গ্রন্থ হইতে গৃহীত হয়েছে।]
(গ) ঝাড়খন্ডী উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক এবং রূপতাত্ত্বিক লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্যগুলি উদাহরণসহ আলোচনা :-
★ধ্বনিতাত্ত্বিক বা ধ্বনিগত লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য :
১) সানুনাসিক স্বরধ্বনির প্রাচুর্য। যেমন :- গঁধাচ্ছে, চাঁ হঁইছে ইত্যাদি।
২) শব্দের মাঝের অল্পপ্রাণ ধ্বনির মহাপ্রাণ ধ্বনি প্রাপ্তির প্রবণতা। যেমন :- দুপুর>দোফুর, পুকুর>পোখুর ইত্যাদি।
৩) ও-কারের অ-কার উচ্চারণের প্রবণতা। যেমন :- চোর>চর, লোক>লক ইত্যাদি।
৪) 'র' ও 'ন'-এর উচ্চারণে 'ল'-এর প্রবণতা। যেমন :- নয়>লয়, লোকেরা>লোকলা ইত্যাদি।
★রূপতাত্ত্বিক বা রূপগত লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য :
১) নামধাতুর প্রয়োগবৈচিত্র লক্ষণীয়। যেমন :- কী দপকাছে (লাফালাফি করছে) ব্যাটাবেটি গুলান!
২) কিছু সর্বনাম পদের ব্যবহারে বৈচিত্র্য লক্ষণীয়। যেমন :- হামরা (<আমরা), মুই (<আমি), মোহে (<মোরে) ইত্যাদি।
৩) 'আছ্' ধাতুর স্থলে 'বট্' ধাতুর ব্যবহার। যেমন :- হঁ মিছা কথা বটে।
৪) ক্রিয়াপদে সার্থিক 'ক' প্রত্যয়ের ব্যবহার। যেমন :- আজ সে বাড়ি যাবেক নাই। রাম আজ বাড়ি ফিরবেক নাই।
৫) ক্রিয়াপদের আগে নঞর্থক উপসর্গের ব্যবহার। যেমন :- নাই খায়, নাই যায়, নাই ঘুমায় ইত্যাদি।
- নিদর্শন :- মানভূম - "এক লোকের দুটা বেটা ছিল, তাদের মাঝে ছুঁটু বেটা তার বাপকে বল্লেক, বাপ হে, আমাদের দৌলতের যা হিসসা আমি পাব তা আমাকে দাও।" [Garison, George Abraham - এর "Linguistic Survey of India, Vol. V" গ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছে।]
(ঘ) বরেন্দ্রী উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক এবং রূপতাত্ত্বিক লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য উদাহরণসহ বিশ্লেষণ :-
★গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :- রাঢ়ি উপভাষা ও বরেন্দ্রী উপভাষা একসময় প্রায় অভিন্ন ছিল। পরে বঙ্গালী উপভাষার প্রভাবে এক্ষেত্রে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পার্থক্য ঘটেছে।
★ধ্বনিতাত্ত্বিক বা ধ্বনিগত লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য :
১) বরেন্দ্রী স্বরধ্বনি রাঢ়ি স্বরধ্বনির প্রায় অনুরূপ।
২) কোথাও শব্দের আদিতে 'র' লোপ পায়। যেমন :- রক্ত>অক্ত, রাস্তা>আস্তা ইত্যাদি।
৩) কোথাও বা শব্দের আদিতে 'র'-এর আগম হয়। যেমন :- আম>রাম, ইন্দুর>র্যানদুরা।
৪) কিছু শব্দে শেষ ধ্বনির উচ্চারণে মহাপ্রাণ ধ্বনি অল্পপ্রাণ ধ্বনি বর্ণ হয়ে যায়। যেমন :- বাঘ>বাগ।
★রূপতাত্ত্বিক বা রূপগত লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য :
১) সম্বন্ধ পদের বিভক্তিতে 'গোর'-এর ব্যবহার দেখা যায়। যেমন :- আমাগোর।
২) অধিকরণ কারকে 'তে' বিভক্তিতে 'ত'-এর ব্যবহার দেখা যায়। যেমন :- ছাতিত ব্যথা, মাথাত ব্যথা ইত্যাদি।
- নিদর্শন :- মালদা বা মালদহ - "য়্যাক্ ঝোন্ মানুষের দুটা ব্যাটা আছ্লো। তার ঘোর বিচে ছোটকা আপনার বাবাক্ কহলে, বাব ধন্-করির যে হিসসা হামি পামু, সে আমাকে দে।" [Garison, George Abraham-এর "Linguistic Survey of India, Vol. V" গ্রন্থ হইতে গৃহীত হয়েছে।]
(ঙ) কামরূপী বা রাজবংশী উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক এবং রূপতাত্ত্বিক লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্যগুলি উদাহরণসহ আলোচনা :-
★ধ্বনিতাত্ত্বিক বা ধ্বনিগত লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য :
১) 'ও', 'উ'-রূপে উচ্চারিত হয়। যেমন :- তোমার>তুমার, গোপাল>গুপাল, সোনালি>সুনালি ইত্যাদি।
২) পদের শেষে 'অ' ধ্বনি 'ও' হয়ে উচ্চারিত হয়। যেমন :- বসিত>বইতো, হইত> অইতো ইত্যাদি।
৩) অনেক সময় অন্ত 'অ', 'উ' হয়েও উচ্চারিত হয়। যেমন :- দুঃখ>দুকখু, তুচ্ছ > তুচ্ছু ইত্যাদি।
৪) শব্দের আদিতে 'অ' শ্বাসাঘাতের ফলে কখনো-কখনো 'আ' হয়ে উচ্চারিত হয়। যেমন :- 'অবস্থা>আবস্থা', 'অকথা>আকথা' ইত্যাদি।
৫) 'ন', 'ল' হয়ে উচ্চারণের প্রবণতা দেখা যায়। যেমন :- নীল>লীল, নামা>লামা, ননী>লনী, নাচ>লাচ ইত্যাদি।
৬) শব্দমধ্যস্থ 'প'-এর জায়গায় 'ফ' উচ্চারিত হয়। যেমন :- আপনার>আফনার, বিপদ>বিফদ, আপদ>আফদ।
৭) সময় সময় শব্দমধ্যস্থ 'প' উচ্চারিত হয় 'ব' হয়ে। যেমন :- সুপারি>সুবারি।
৮) কখনো-কখনো শব্দের আদিস্থ 'অ' উচ্চারিত হয় 'উ' হয়ে। যেমন :- ক্ষতি>খুতি, ডগা>ডুগা ইত্যাদি।
৯) শব্দের প্রথম 'অ', 'এ' হয়ে উচ্চারিত হয়। যেমন :- ক্ষমা>খেমা, খড়>খের ইত্যাদি।
১০) কখনো-কখনো শব্দমধ্যের 'অ', 'উ' হয়ে উচ্চারিত হয়। যেমন :- এমন>এমুন, বাসন>বাসুন, বিষহরি>বিষুরি ইত্যাদি।
★রূপতাত্ত্বিক বা রূপগত লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য :
১) ভবিষ্যৎকালের ক্রিয়াপদ 'বাম' প্রত্যয় হয়। যেমন :- পড়িব>পড়িবাম, যাইব>যাইবাম ইত্যাদি।
২) গৌণকর্মের বিভক্তি 'ক'। যেমন :- দাদাকে>দাদাক্, তপনকে>তপনক্ ইত্যাদি।
৩) উত্তমপুরুষের একবচনে 'আমি'-র স্থলে 'মুই', 'হাম' উচ্চারিত হয়।
৪) অধিকরণকারকে 'ত' বিভক্তির প্রয়োগ লক্ষণীয়। যেমন :- পশ্চাতে>পাছত।
- নিদর্শন :- কামরূপী বা রাজবংশী (উত্তরবঙ্গ) - "তখন তাঁর একজন চেঙ্গারাক্ ডাকেয়া পুছ্ করিল্ - ইগলা কি? তখন তাঁয় তাক কৈল্ - তোর ভাই আইচ্চে, তোর বাপ্ তাক্ ভালে ভালে পায়্যা একটা বড়ো ভান্তরা করচে।" [ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় "বাঙ্গালা ভাষাতত্ত্বের ভূমিকা" গ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছে।]
¤ ভাষাতত্ত্ববিদরা বাংলার মৌখিক উপভাষাগুলিকে যে পাঁচ ভাগে ভাগ করেছেন, সেই উপভাষাগুলির অবস্থান অঞ্চল নির্দেশ করুন।
(ক) রাঢ়ি উপভাষা [অবস্থান অঞ্চল] :-
- মধ্য পশ্চিমবঙ্গ তথা রাঢ় অঞ্চল (পশ্চিম রাঢ়ি - বীরভূম, বর্ধমান, পূর্ব বাঁকুড়া; পূর্ব রাঢ়ি - মুর্শিদাবাদ, নদিয়া; দক্ষিণ রাঢ়ি - কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর-পূর্ব মেদিনীপুর)।
(খ) বঙ্গালী উপভাষা [অবস্থান অঞ্চল] :-
- পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ববঙ্গ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ফরিদপুর, যশোর বা যশোহর, খুলনা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালি)।
(গ) ঝাড়খন্ডী উপভাষা [অবস্থান অঞ্চল] :-
- দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড ও বিহারের কিছু অংশ (পূর্ব ও পশ্চিম সিংভূম, মানভূম, দক্ষিণ-পশ্চিম বাঁকুড়া, দক্ষিণ-পশ্চিম মেদিনীপুর)।
(ঘ) বরেন্দ্রী উপভাষা [অবস্থান অঞ্চল] :-
- উত্তর-মধ্যবঙ্গ (মালদা বা মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা)।
(ঙ) কামরূপী বা রাজবংশী উপভাষা [অবস্থান অঞ্চল] :-
- উত্তর-পূর্ববঙ্গ (উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, রংপুর, কাছাড়, সিলেট বা শ্রীহট্ট)।
- আলোচক : সৌম্য মাইতি
- যোগাযোগ : ৬২৯০৩৭৭১৩৪
আপনার পোস্ট পড়ে বাংলা উপভাষা সম্পর্কে সম্পূর্ণ পরিস্কার ধারণা পেলাম। অনেক ধন্যবাদ স্যার।
ReplyDeleteস্বাগত আপনাকে।
DeleteVery Nice Post. Thanks Sir.
ReplyDeleteWelcome Apnake.
ReplyDeletePost a Comment