NEW :
Loading contents...

আধুনিক যুগের কিছু ডেসক্রিপটিভ প্রশ্নোত্তর

১) পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বা বিদ্যাসাগর মহাশয়কে 'বাংলা গদ্যের জনক' বলে অভিহিত করা হয় কেন?

★উত্তর - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যকে গতিশীল করে প্রাণদান করেছেন। বিদ্যাসাগরের পূর্ববর্তী লেখকগণ অর্থাৎ ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পণ্ডিতগণ ও রাজা রামমোহন রায়ের বাংলা গদ্যরচনার প্রয়াস প্রশংসনীয়, কিন্তু তা ছিল অপূর্ণ। তিনি বাংলা গদ্যকে সুললিত শব্দবিন্যাস, পদবিভাগ ও যতি সন্নিবেশে সুবোধ্য ও শিল্প গুণান্বিত করে তোলেন। বাংলা গদ্যের অন্তর্নিহিত ধ্বনিঝংকার ও সুরবিন্যাস বিদ্যাসাগরই প্রথম উপলব্ধি করেন, বাংলা গদ্যপ্রবাহ সমৃদ্ধির জন্য তিনি তাঁর গদ্যে 'উচ্চবচ ধ্বনিতরঙ্গ' ও 'অনতিলক্ষ্য ছন্দস্রোত' সৃষ্টি করেন এবং বাংলা গদ্যের শ্বাসপর্ব ও অর্থপর্ব অনুসারে ভাগ করে, সেখানে যতি চিহ্ন প্রয়োগ করে বাংলা গদ্যকে তিনি সাহিত্যগুণ সম্পন্ন ও সর্বভাব প্রকাশক্ষম করেছিলেন বলেই পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়কে 'বাংলা গদ্যের জনক' বলে অভিহিত করা হয়।

অথবা, 

          বাংলা গদ্যপ্রবাহের সম্পূর্ণ বিকাশ ও নির্মাণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। তাঁরই বলিষ্ঠ প্রতিভার যাদুস্পর্শে বাংলা গদ্য কৈশোরকালের অনিশ্চয়তাকে পশ্চাতে পরিত্যাগ করে পূর্ণ সাহিত্যিকরূপের নিশ্চয়তার মধ্যে স্থান পায়। বিদ্যাসাগরের পূর্ববর্তী লেখকগণ অর্থাৎ ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পণ্ডিতগণ ও রাজা রামমোহন রায়ের গদ্যের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করলে ওনাদের মধ্যে যে সুষম বাক্য গঠনরীতির নিদর্শন লক্ষণীয় হয়ে ওঠে না তা নয়, কিন্তু এ ব্যাপারে বিদ্যাসাগর যেমন সচেষ্ট ছিলেন তেমন আর কারো মধ্যে দেখা যায় না। সেজন্য বাংলা গদ্যশৈলীর উদ্ভবের পঁয়তাল্লিশ বছর পরে লেখনী ধারণা করা সত্ত্বেও পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বা বিদ্যাসাগর মহাশয়কে 'বাংলা গদ্যের জনক' অভিধায় অভিহিত করা হয়।

  • ব্যক্তিগত অভিমত :- আপনাদের এই প্রশ্নটির ২টি উত্তর করে দেওয়া হল। তার মধ্যে যার যে উত্তরটি ভালো লাগবে, তারা পরীক্ষার খাতায় অবশ্য সেই উত্তরটিই লিখবেন।

২) 'সাহিত্যকর্ম' ও 'সমাজকর্ম'-এ দুইয়ের মধ্যে কোনটির জন্য পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিশেষভাবে সুপরিচিত ছিলেন? এ প্রসঙ্গে আপনার মতামত দিন

★উত্তর - বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিবর্তনের ইতিহাস এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। পাণ্ডিত্যের গভীরতায়, মানসিকতার উদারতায়, সমাজ সংস্কারের তৎপরতায় তাঁর যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে তা এ দেশের সমাজ-সংস্কৃতির ইতিহাসে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রাহ্য। যে কর্মবহুল সফল জীবন তিনি অতিবাহিত করেছিলেন তা ধর্ম ও সমাজের সংস্কারে যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি সাহিত্যের ক্ষেত্রেও এক অভূতপূর্ব বিশিষ্টতার অধিকারী।

৩) মধুকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত মহাশয়কে 'দত্ত কুলোদ্ভব কবি' আখ্যায় আখ্যায়িত করা হয় কেন?

★উত্তর - 'কুল' শব্দের অর্থ বংশ এবং 'উদ্ভব' শব্দের অর্থ উৎপত্তি বা জন্ম। 'দত্ত কুলোদ্ভব' মানে দত্ত বংশে উৎপত্তি বা জন্ম। খ্রিষ্টীয় আঠার শতকে ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামের প্রতাপশালী ব্যক্তি ছিলেন রামনিধি দত্ত। তাঁর চার পুত্রের মধ্যে কনিষ্ঠ ছিলেন রাজনারায়ণ দত্ত। তিনি পেশায় ছিলেন উকিল এবং জমিদারিতেও ছিল তাঁর ব্যাপক সুনাম। এই দত্ত বংশে জন্মের কারণে মধুকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত মহাশয়কে 'দত্ত কুলোদ্ভব কবি' বলে সম্বোধন করা হয়।

৪) বাংলা আধুনিক যুগের সাহিত্যের ইতিহাসে 'অমিত্রাক্ষর ছন্দ' (Blank Verse)-এর পরিচয় দিন।

★উত্তর - মধুকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন 'বাংলা অমিত্রাক্ষর ছন্দের জনক'। এই ছন্দ অক্ষরবৃত্ত ছন্দের পয়ার অবলম্বন করেই তৈরি হয়েছে। প্রতি ছত্রেই এখানে ১৪ মাত্রা রয়েছে। প্রথম ৮ মাত্রায় অর্ধযতি, আর শেষ ৬ মাত্রায় পূর্ণ যতি রয়েছে। এখানে গম্ভীর ও ধ্বনি মাধুর্যপূর্ণ শব্দের ব্যবহার হয়। ভাবের গভীরতা অতলস্পর্শী। এই ছন্দে অন্ত্যমিল বা অন্ত্যানুপ্রাস নেই। ছন্দটির প্রধান বিশেষত্ব এই যে, কত মাত্রার পর যতি পড়বে তা এখানে সুনির্দিষ্ট নয়। ভাবের প্রয়োজন অনুসারে শীঘ্র বা বিলম্ব এখানে যতির পতন হয়। যেমন ---

(ক) 'দানব-নন্দিনী আমি/রক্ষঃকূলবধূ' (৮+৬)

(খ) 'রাবণ শ্বশুর মম/মেঘনাদ স্বামী' (৮+৬)

(গ) 'আমি কি ডরাই, সখি/ভিখারী রাঘবে?' (৮+৬)

৫) দীনবন্ধু মিত্রের "নীলদর্পণ' নাটকের সাহিত্য-মূল্যের চেয়ে সামাজিক মূল্য বেশি।" --- মন্তব্যটির স্বপক্ষে যথাযোগ্য যুক্তি দিন।

★উত্তর - দীনবন্ধু মিত্রের প্রথম নাটক ব্রিটিশ ভারতের ঢাকা থেকে বেনামীতে মুদ্রিত বা প্রকাশিত "নীলদর্পণ" (১৮৬০)। ইংরেজ নীলকর সাহেবদের অত্যাচারে এ দেশের কৃষক জীবনের দুর্বিষহ অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর ক্ষেত্রে এই নাটকটির গুরুত্ব অপরিসীম। নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক নাটক হিসেবে রচিত হলেও এর মধ্যে গ্রাম্য বা গ্রামীণ সমাজের যে পরিচয় ফুটে উঠেছে তা তৎকালীন নাট্যসাহিত্যে ছিল একান্তই অভিনব। নাটকটির মধ্যে এ দেশের শাসক ও শাসিতজনের সম্বন্ধ, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেশের অবস্থা, সভ্য মানুষের মধ্যে বর্বরতার পরিচয় ইত্যাদি সামাজিক দিক সার্থকভাবে রূপায়িত হয়েছিল। তাই বলা যায় যে, নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র রচিত "নীলদর্পণ" (১৮৬০) নাটকের সাহিত্য-মূল্যের চেয়ে সামাজিক মূল্য বেশি।

৬) রায়বাহাদুর বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মহাশয়কে 'বাংলা উপন্যাসের জনক' অভিধায় অভিহিত করা হয় কেন?

★উত্তর - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস ''দুর্গেশনন্দিনী'' (মার্চ, ১৮৬৫)। 'উপন্যাস' একটি পাশ্চাত্য শিল্প ধারণা, সেই পাশ্চাত্যরীতিকে অবলম্বন করে একটি পরিপূর্ণ আখ্যানের মাধ্যমে তিনি এই উপন্যাসটি রচনা করেন। হানা ক্যাথেরিন ম্যুলেন্সের ''ফুলমণি ও করুণার বিবরণ'' এবং প্যারীচাঁদ মিত্রের ''টেকচাঁদ ঠাকুর'' ছদ্মনামে রচিত ''আলালের ঘরের দুলাল'' ছিল প্রথম বাংলা উপন্যাস তৈরির প্রাথমিক প্রচেষ্টা, যা সর্বাঙ্গ সার্থক নয়। ''দুর্গেশনন্দিনী'' রচনার মাধ্যমে বঙ্কিমচন্দ্র একদিকে যেমন তাঁর মৌলিক প্রতিভা বিকাশের পথের সন্ধান লাভ করেন, অন্যদিকে তেমনি বাঙালির মন ও মনন এক অভিনব সাহিত্যশিল্পের রসাস্বাদন করতে সক্ষম হয়। বাংলা সাহিত্যে মোট ১৪টি সার্থক উপন্যাস রচনা করে এ ধারাকে তিনি বেগবান করেন বলে তাঁকে 'বাংলা উপন্যাসের জনক' অভিধায় অভিহিত করা হয়।

৭) প্রমথ চৌধুরীর গদ্য বা 'বীরবলী গদ্যে'র কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন।

★উত্তর - প্রমথ চৌধুরীর গদ্য বা 'বীরবলী গদ্যে'র কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিম্নে দেওয়া হল ---

(ক) প্রমথ চৌধুরীর গদ্যের বৈশিষ্ট্য হল চলিত ভাষায় লেখা গদ্যের সুমার্জিত রূপ। গদ্যের চলিত রীতির জন্য তিনি বাংলা সাহিত্যে বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর রচিত গদ্যকে 'বীরবলী গদ্য' বলা হয়।

(খ) তিনি ছিলেন বাংলা গদ্যের একজন বিশিষ্ট শিল্পী। তাঁর গদ্য অন্তর্নিহিত প্রাণশক্তি, দৃঢ় প্রকৃতিস্থ ও বহিরাবয়ব আঙ্গিক বিন্যাসে সমৃদ্ধ হয়েছে।

(গ) তাঁর গদ্যে রসিকতাচ্ছলে সত্যকে উপস্থাপন করা হয়েছে।

৮) রাজশেখর বসু, ওরফে পরশুরামের "গড্ডলিকা" (১৯২৪/১৩৩১) গল্পগ্রন্থের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লিখুন।

★উত্তর - (ক) এই গল্পগ্রন্থের গল্পগুলির বিষয়বস্তুগত মিল চোখে পড়ে না।

(খ) এই গল্পগ্রন্থের গল্পগুলি যেন গড্ডলিকা অর্থাৎ মেঘ পালের মতো পরশুরামের সমাজের যথার্থ স্বরূপ খুলে দেবার অভিপ্রায়কে স্বাগত জানাবার জন্য একের অনুসরণে অন্যটি স্বতস্ফূর্তভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

(গ) এই গল্পগ্রন্থের গল্পগুলি প্রস্রবণের মতো স্বতোৎসারিত, স্বচ্ছন্দ। কোনরূপ আড়ষ্টতা বা সূচনা পর্বের শিথিলতা নেই। গল্পগুলি প্রস্রবণের মতোই গতিচঞ্চল এবং মুক্তপ্রাণ।

৯) রাজশেখর বসু, ওরফে পরশুরামের "কজ্জলী" (১৯২৭/১৩৩৫) গল্পগ্রন্থের দু'টি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন।

★উত্তর - (ক) ভণ্ড গুরুগিরি, মুক্তচিন্তাকে সর্বপ্রকারে কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা, রাজনীতিক নেতাদের ভণ্ডামি, বুড়ো বয়সেও কামার্তি, ক্লাব-ফ্যাশানের নব্য-উন্মাদনা, নবতর শাসন পদ্ধতির অদ্ভুতাচার প্রভৃতি সমাজের বিভিন্ন দিকের বিভিন্ন প্রকার মালিন্য ও কালিমা এই গল্পগ্রন্থে ফুটে উঠেছে।

(খ) এই গল্পগ্রন্থে পরশুরাম সমাজের বিভিন্ন দিকের বিভিন্ন প্রকার মালিন্য ও কালিমাকে পরশুরাম সর্বান্তঃকরণে মুছে ফেলতে চেয়েছেন। সে কারণে এই গল্পগ্রন্থের গল্পগুলির ঘটনা রীতিগুলোর আনুপুঙ্খ বর্ণনা করে পরোক্ষে সর্বজনের চোখ খুলে দিতে চেয়েছেন লেখক।

১০) শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে 'বাংলার রবার্ট ফ্রস্ট' উপাধিতে ভূষিত করা হয় কেন?

★উত্তর - বিখ্যাত মার্কিন বা আমেরিকান কবি রবার্ট ফ্রস্টের মতো ভারতীয় বাঙালি কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ও তাঁর কবিতায় মানুষের দুঃখ, কষ্ট, নিঃসঙ্গতা, মৃত্যু ভাবনা প্রভৃতি বিষয়কে তুলে ধরেছেন বা এসব বিষয়কে বড় করে দেখিয়েছেন। গ্রামীণ জীবনের বাস্তবসম্মত বর্ণনায় মার্কিন কথ্যভাষার উপর দক্ষতার জন্য রবার্ট ফ্রস্ট যেমন বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন, ঠিক তেমন গ্রামীন জীবনের বাস্তবসম্মত বর্ণনায় বাংলা কথ্যভাষার উপর দক্ষতার জন্য শক্তি চট্টোপাধ্যায়ও বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। এ সমস্ত কারণে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে 'বাংলার রবার্ট ফ্রস্ট' উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

  •  বিশেষ দ্রষ্টব্য :-  আপনারা দেখতে পাচ্ছেন যে, উপরে উল্লিখিত ৭ নং ও ৮ নং প্রশ্নে মাত্র ৩টি এবং ৯ নং প্রশ্নে মাত্র ২টি পয়েন্ট আমি দিয়েছি‌। গুগলের কপির আওতায় পড়ার জন্য আমি এই ৩টি প্রশ্নের প্রতিটি থেকে ১টি করে পয়েন্ট বাদ দিতে বাধ্য হয়েছি। নাহলে আমার কাছে ৭ নং ও ৮ নং প্রশ্নের ৪টি এবং ৯ নং প্রশ্নের ৩টি পয়েন্ট বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে করা ছিল।
  ¤ আরও দেখুন :-  



  • আলোচক : সৌম্য মাইতি
  • যোগাযোগ : ৬২৯০৩৭৭১৩৪
  • S.L.S.T  (S.S.C ) বাংলা অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে চাইলে ফোন করে যোগাযোগ করুন আমার ৬২৯০৩৭৭১৩৪ নম্বরে, অথবা আমার WhatssApp-তে ম্যাসেজ করুন ৮৭৬৮৮৩০২৩০ নম্বরে। এখানে উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর মতো সঠিক তথ্যসহকারে ১ নম্বরের উত্তর ও ২ নম্বরের ডেসক্রিপটিভ প্রশ্নোত্তর করানো হয়। ধন্যবাদ।

This is a premium content, you can continue reading this content in our Android App. Click the button below to continue. alert-info

Post a Comment

Previous Post Next Post