NEW :
Loading contents...

আধুনিক যুগ থেকে কিছু ডেসক্রিপটিভ প্রশ্নোত্তর

১) বাংলা সাহিত্যে মাইকেল মধুসূদন দত্তের "মেঘনাদবধ কাব্য" (১৮৬১)-এর কয়েকটি গুরুত্ব আলোচনা করুন।

★উত্তর - বাংলা সাহিত্যে "মেঘনাদবধ কাব্য"টির স্বতন্ত্র গুরুত্ব প্রধানত দু'টি। যথা ---

(ক) এই কাব্যটিকে প্রাচীন ধর্ম ও নীতিশাসিত জীবনের পরিবর্তে আত্মশক্তিনির্ভর অটল ব্যক্তিত্বে উন্নত শির মানুষের মহিমা মূর্ত করে তোলা হয়েছে। যা আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সূত্রপাত ঘটিয়েছে।

(খ) কাব্যকায়া গঠনে পয়ার ত্রিপদীর নিগড় ভেঙে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তন, রূপান্তরিত ভাষা প্রয়োগ, সুপরিকল্পিত কাহিনি বিন্যাস, সংহত কাব্যকায়া নির্মাণ এই কাব্যটিতে একেবারে অভিনব।

২) মাইকেল মধুসূদন দত্তের "বীরাঙ্গনা" (১৮৬২) কাব্যের একটি নারী চরিত্রের বৈশিষ্ট্য লিখুন।

★উত্তর - মাইকেল মধুসূদন দত্তের "বীরাঙ্গনা" কাব্যের "দ্বারকানাথের প্রতি রুক্মিনী" পত্রে কবি 'রুক্মিনী' চরিত্রটির গৃহচারিণী কল্যাণী পতিব্রতা মূর্তিকেই অপূর্ব শ্রদ্ধার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন। এ পত্রে আদর্শ ভারতীয় নারীর একনিষ্ঠ ছায়ামূর্তিই ফুটে উঠেছে। বিদর্ভাধিপতি ভীষ্মক রাজপুত্রী রুক্মিনী দেবীকে পৌরাণিক ইতিবৃত্তে স্বয়ং লক্ষ্মী-অবতার বলে ব্যাখা করেন। সুতরাং, তিনি আজন্ম বিষ্ণুপরায়ণ ছিলেন। যৌবনাবস্থায় তার ভাই যুবরাজ রুক্সচেদীশ্বর শিশুপালের সাথে তার পরিণয়ার্থে উদ্যোগী হলে রুক্মিনী দেবী দ্বারকানাথের প্রতি এই পত্রটি প্রেরণ করেন। তাই বলা যায়, 'রুক্মিনী' চরিত্রটি এই কাব্যে নিজেকে লজ্জাবতী, অসহায়, প্রিয়ভক্ত এবং অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

৩) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "গোরা" (১৯১০/১৩১৬) উপন্যাসকে 'মহাকাব্যিক উপন্যাস' বলার কারণ কী?

★উত্তর - একটা জাতির সামগ্রিক মানসিক সংকটের ছবি এই উপন‍্যাসে চিত্রিত হয়েছে। 'গোরা', 'বিনয়', 'পানুবাবু', 'পরেশবাবু', 'অবিনাশ' ইত‍্যাদি চরিত্রের মধ‍্য দিয়ে বাঙালি শিক্ষিত সমাজের মানসিক রূপান্তরের ছবিকে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -- যা এই উপন্যাসের কাহিনিকে মহাকাব‍্যিক বিশালতা দিয়েছে। এই কারণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "গোরা" (১৯১০/১৩১৬) উপন্যাসকে "মহাকাব্যিক উপন্যাস" বলা হয়।

৪) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "শেষের কবিতা" (১৯২৯/১৩৩৬) উপন্যাসের কোন্ চরিত্রটিকে আপনার ভালো লাগে? এবং কেন?

★উত্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "শেষের কবিতা" উপন্যাসের মূল বা কেন্দ্রীয় চরিত্র 'অমিত'-কে আমার ভালো লাগে। এর কারণ :- বিদেশি রীতির প্রভাবে অমিত বদলে গেলেও তার মন এই বাংলাতেই পড়ে থাকে। কাহিনীর এক পর্যায়ে অমিত নিজেকে বাংলার সাদামাটা সাজে সজ্জিত করে। তার পেছনের কারণ কাহিনির অন্য এক চরিত্র লাবণ্য। লাবণ্য অমিতের জীবনে ক্ষণিকের জন্য এলেও তার পুরো জীবনটাই বদলে দিয়ে যায়। লাবণ্য এবং অমিতের এই প্রেমের পরিণতি রং দ্বারা কাহিনির সমাপ্তি ঘটে। কিছু অতীতের পুনর্মিলন আর বর্তমানের ক্ষণিকের অনূভুতির মাধ্যমে উপন্যাসের কাহিনীটি যেন প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।

৫) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে 'মহাকাব্যিক উপন্যাস' রচনা করলেও তিনি 'মহাকাব্য' রচনায় মনোনিবেশ করেননি কেন?

★উত্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিংশ শতাব্দীর শুরুতে যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে অন্যান্য কয়েকজন সাহিত্যিকদের মতো 'মহাকাব্যিক উপন্যাস' রচনায় মনোনিবেশ করেছিলেন। তাঁর রচিত 'মহাকাব্যিক উপন্যাস'টি হল -- "গোরা" (১৯১০/১৩১৬)। এর পেছনে তাঁর অনেক সময় ব্যয় হবার ফলে তিনি বাংলা সাহিত্যে মাত্র ১৩টি উপন্যাস রচনা করতে পেরেছেন। কিন্তু অপরদিকে তিনি ছিলেন 'যুগসচেতন কবি'। সময়কে প্রাধান্য দিতে গিয়ে অর্থাৎ তিনি সময়ের দাবি জানতেন বলেই বাংলা সাহিত্যে ৫৬টি মৌলিক কাব্যগ্রন্থ রচনা করলেও তিনি 'মহাকাব্য' রচনায় মনোনিবেশ করেননি।

৬) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্পে নারী-ব্যক্তিত্বের স্বরূপ আলোচনা করুন।

★উত্তর - বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ছোটগল্পকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্পে পুরুষ চরিত্রের চেয়ে নারী চরিত্র অধিকতর উজ্জ্বল। "ঘাটের কথা" গল্পে 'কুসুম', "দেনাপাওনা" গল্পে 'নিরুপমা', "পোস্টমাস্টার" গল্পে 'রতন', "দালিয়া" গল্পে 'আমিনা', "একরাত্রি" গল্পে 'সুরবালা', "জীবিত ও মৃত" গল্পে 'কাদম্বিনী', "জয়-পরাজয়" গল্পে 'অপfরাজিতা', "কাবুলিওয়ালা" গল্পে 'মিনি', "সুভা" গল্পে 'সুভাষিণী', "মহামায়া" গল্পে 'মহামায়া', "সম্পাদক" গল্পে 'প্রভা', "সমাপ্তি" গল্পে 'মৃন্ময়ী', "প্রায়শ্চিত্ত" গল্পে 'বিন্ধ্যবাসিনী', "দিদি" গল্পে 'শশী', "অতিথি" গল্পে 'অন্নপূর্ণা' প্রভৃতি চরিত্রগুলো মুখ্য হয়ে উঠেছে। এই গল্পগুলোতে সমাজের কুসংস্কার, নারী অধিকার, নারী বিদ্রোহসহ নানাবিধ দিক উপস্থাপন করা হয়েছে।

৭) বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামকে 'বিদ্রোহী কবি' উপাধিতে ভূষিত করা হয় কেন?

★উত্তর :- বাংলা সাহিত্যে কবি কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব ধূমকেতুর মতো। অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে নজরুল ইসলাম বলিষ্ঠ বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন ও মহাবিশ্বে মহাজাগরণ ঘটিয়েছিলেন। তাঁর গভীরতম চেতনায় যে ক্ষোভ, বঞ্চিতের প্রতি যে নিবিড় সহানুভূতি, তা বজ্রাগ্নির মতো অসহনীয় উত্তাপে ফুটে উঠেছিল। "অগ্নিবীণা" কাব্যগ্রন্থের 'বিদ্রোহী' কবিতার মধ্য দিয়ে তাঁর বিদ্রোহের আত্মপ্রকাশ। পরে তিনি তাঁর "বিষের বাঁশী", "ভাঙার গান", "প্রলয়লিখা" প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ এবং "যুগবাণী" প্রবন্ধগ্রন্থ ও "চন্দ্রবিন্দু" গানের বইতে বিদ্রোহের সার্থক প্রকাশ ঘটিয়েছেন। এ সমস্ত কারণে বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামকে 'বিদ্রোহী কবি' উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

৮) সতীনাথ ভাদুড়ীর ছোটগল্পের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন।

★উত্তর - সতীনাথ ভাদুড়ীর ছোটগল্পের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ ---

(ক) সতীনাথ ভাদুড়ী একাধিক বিষয়কে অবলম্বন করেই তাঁর ছোটগল্পগুলি রচনা করেছেন।

(খ) তাঁর ছোটগল্পে হরেকরকমের চরিত্র, ভিন্ন-ভিন্ন প্লট, অদ্ভুত-অদ্ভুত পরিবেশ, বৈচিত্র্যময় বিষয় ভাবনা স্থান পেয়েছে।

(গ) তাঁর ছোটগল্পগুলিকে সমালোচকেরা বেশ কয়েকটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। যথা :- রাজনৈতিক গল্প, সমাজ ও সমস্যামূলক গল্প, প্রেম ও দাম্পত্য সম্পর্কমূলক গল্প, বাৎসল্যরসের গল্প, মনস্তাত্ত্বিক গল্প, ব্যঙ্গ রসাত্মক গল্প ইত্যাদি।

(ঘ) তাঁর কয়েকটি ছোটগল্প "১৯৪৭ সালের দেশবিভাগ"-এর পটভূমিকায় বা প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছে।

(ঙ) তাঁর কয়েকটি ছোটগল্প উত্তম পুরুষে রচিত হয়েছে।

৯) সমরেশ বসুর উপন্যাসের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লিখুন।

★উত্তর - সমরেশ বসুর উপন্যাসের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিম্নে দেওয়া হল ---

(ক) সমরেশ বসু তাঁর উপন্যাসে মূলত হিন্দুধর্মের মধ্যেকার জাত-পাতের ভেদা-ভেদের কুশ্রী রূপ, আর সাথে নীলকরদের অত্যাচার তুলে ধরেছেন।

(খ) তাঁর উপন্যাসগুলি মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব, মধ্যযুগীয় কবি জয়দেব, বাউল সাধক লালন ফকির, চিত্রশিল্পী রামকিঙ্কর বেইজ প্রমুখ মানবজীবনকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে।

(গ) তাঁর উপন্যাসগুলি ইতিহাস, পুরাণ, রামায়ণ ও মহাভারত প্রভৃতি মহাকাব্যকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে।

(ঘ) তাঁর কয়েকটি উপন্যাস দেশভাগ ও উদ্বাস্তু সমস্যার পটভূমিকায় বা প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছে।

১০) সমরেশ বসুর "গঙ্গা" (১৯৫৭) উপন্যাসের কয়েকটি গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন।

★উত্তর - সমরেশ বসুর "গঙ্গা" উপন্যাসের কয়েকটি গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ ---

★গুরুত্ব :- (ক) এটি সমরেশ বসুর সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাস। এই উপন্যাসটি লেখক তথা বাংলা উপন্যাস সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা রচনা বলে বিবেচিত হয়। "দেশ" পত্রিকার বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ২৪টি বাংলা উপন্যাসের তালিকাতেও উপন্যাসটি স্থান পায়।

(খ) এটি বাংলা সাহিত্যের একটি সার্থক আঞ্চলিক উপন্যাস। এছাড়া, এটি একটি ধ্রুপদী উপন্যাস।

★বৈশিষ্ট্য :- (ক) দক্ষিণবঙ্গ, বিশেষত অবিভক্ত ২৪ পরগণা জেলার মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের (মাছমারা) জীবনসংগ্রামের কাহিনী এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য বিষয়।

(খ) আঞ্চলিক প্রবাদ যে-কোন সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এটি একটি সার্থক আঞ্চলিক উপন্যাস হওয়ায় এই উপন্যাসের পাতায় পাতায় এসেছে বিভিন্ন আঞ্চলিক প্রবাদ।

 বিশেষ দ্রষ্টব্য :-  আপনাদের সবার সুবিধার জন্যই বা বেশি জানার জন্যই আমি এখানের কয়েকটি প্রশ্নের উত্তরে ৪-৫টি পয়েন্ট দিয়েছি। কারণ ছাত্রছাত্রীরা ১০০% তথ্য কখনই মনে রাখতে পারে না। তারা বেশিরভাগই পরীক্ষার হলে ৭০%-৭৫% তথ্য মনে রাখতে পারে। তাই ছাত্রছাত্রীদের সবার সুবিধার জন্যই আমি এখানে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তরে বেশি পয়েন্ট দিতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু আপনারা পরীক্ষা হলে আপনাদের নির্দিষ্ট জায়গা আর সময়মতো ২-৩টি পয়েন্ট লিখবেন।


  • আলোচক : সৌম্য মাইতি
  • যোগাযোগ : ৬২৯০৩৭৭১৩৪
  • S.L.S.T  বাংলা অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে চাইলে ফোন করে যোগাযোগ করুন আমার ৬২৯০৩৭৭১৩৪ নম্বরে, অথবা আমার WhatssApp-তে ম্যাসেজ করুন ৮৭৬৮৮৩০২৩০ নম্বরে। এখানে উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর মতো সঠিক তথ্যসহকারে ১ নম্বরের পাশাপাশি ২ নম্বরের ডেসক্রিপটিভ প্রশ্নোত্তরও করানো হয়। ধন্যবাদ।

This is a premium content, you can continue reading this content in our Android App. Click the button below to continue. alert-info

Post a Comment

Previous Post Next Post