NEW :
Loading contents...

  মধ্যযুগ থেকে কিছু ডেসক্রিপটিভ প্রশ্নোত্তর  

১) 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যের গঠনরীতি কোন্ ধরনের? এ প্রসঙ্গে নিজস্ব মতামত দিন।

★উত্তর - 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' মূলত একটি যাত্রাপালা ছিল বলে মনে করা হয়। কারণ কাব্যটি জয়দেব রচিত সংস্কৃত ভাষার কাব্য 'গীতগোবিন্দ'-এর অনুরূপ গীতি এবং সংলাপবহুল নাট্যলক্ষণাক্রান্তে রচনা বলে অনেক পণ্ডিত একে 'নাট্যগীতিকাব্য' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ড. বিমানবিহারী মজুমদার 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যকে 'রাধাকৃষ্ণের ধামালী' বলে অভিহিত করেছেন। 'ধামালি' কথাটির অর্থ -- সংগীতের আটমাত্রার তালবিশেষ, রঙ্গরসাত্মক নাচগান, পরিহাস বাক্য, কৌতুক বা ছলনা। রঙ্গ তামাসার কালে কপট দম্ভ প্রকাশ করে যে সব উক্তি করা হয়, প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে তাকে 'ধামালী' বলে। নাটপালায় এরূপ 'ধামালী' হাস্যরসের উপাদানরূপে ব্যবহৃত হয়। এই কাব্যে মোট ১২টি স্থানে 'ধামালী' কথাটির প্রয়োগ আছে।

২) পদাবলির চণ্ডীদাসের পদগুলির দু'টি বৈশিষ্ট্য লিখুন।

★উত্তর - পদাবলির চণ্ডীদাসের পদগুলির দু'টি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ ---

(ক) চণ্ডীদাসের পদাবলির প্রধান বৈশিষ্ট হল ভাবগভীরতা। শিল্প সৌন্দর্যের আড়ম্বর না থাকলেও ভাবগম্ভীর অনুভূতিতে এই পদগুলি 'ছেড়েছে তার সকল অলংকার'।

(খ) আবেগের গভীরতা, গ্রামীণ মাধুর্য ও দুঃখবোধের দ্যোতনায় পদাবলির চণ্ডীদাস ভক্তিভাবুকতা ও প্রেমচেতনায় ভরপুর।

৩) মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে 'জীবনী সাহিত্য' বলতে কী বোঝায়?

★উত্তর - বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের গতানুগতিক ধারায় জীবনী সাহিত্য এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে। শ্রীচৈতন্যদেব ও তাঁর কতিপয় শিষ্যের জীবনকাহিনী অবলম্বনে এই জীবনী সাহিত্যের সৃষ্টি হয়। চৈতন্য জীবনের কাহিনিতে কবিরা অলৌকিকতা আরোপ করেছেন। তবু চৈতন্য ও তাঁর শিষ্যরা বাস্তব মানুষ ছিলেন এবং এ ধরনের বাস্তব কাহিনি নিয়ে সাহিত্যসৃষ্টি বাংলা সাহিত্যে এই প্রথম। বাংলা ভাষায় রচিত শ্রীচৈতন্যদেবের প্রথম জীবনীকাব্য কবি বৃন্দাবন দাসের 'শ্রীচৈতন্যভাগবত'। চৈতন্যদেবের জীবনী গ্রন্থকে 'কড়চা' নামে অভিহিত করা হয়। চৈতন্যদেবেরর জীবনী হিসেবে যে বইটি সবচেয়ে বিখ্যাত, তা হল কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজের 'শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত'।

৪) বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব স্মরণীয় কেন?

★উত্তর - নদিয়া জেলার নবদ্বীপে জন্মগ্রহণকারী শ্রীচৈতন্যদেব ভগবত প্রেমে উন্মত্ত হয়ে ওঠেন। মুসলমান শাসন ও ইসলাম ধর্মের সম্প্রসারণে হিন্দু সমাজের যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছিল তাকে প্রতিরোধ করার মন্ত্র প্রচার করেন চৈতন্যদেব তাঁর বৈষ্ণব মতবাদের মাধ্যমে। তিনি প্রচার করলেন, --- "জীবে দয়া ঈশ্বরে ভক্তি, বিশেষ করে নাম-ধর্ম, নাম-সংকীর্তন।" চৈতন্যদেবের আবির্ভাবে যে প্রভাব লক্ষ্য করা যায় তা হচ্ছে, ঐতিহাসিক ও সামাজিক দিক থেকে আমাদের দেশ জাতীয় মুক্তির পথের সন্ধান পায়। মানব প্রেমাদর্শে সমৃদ্ধ বৈষ্ণব দর্শন ও ধর্ম সম্প্রদায় গড়ে ওঠে এবং অধ্যাত্মভাব, চিত্র সৌন্দর্য ও মধুর প্রেমরসে সমৃদ্ধ বৈষ্ণব সাহিত্য সৃষ্টি হয়।

৫) গৌরাঙ্গ-বিষয়ক পদ ও গৌরচন্দ্রিকার মধ্যে পার্থক্য কী?

★উত্তর - গৌরাঙ্গ-বিষয়ক পদ হল মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের সন্ন্যাসপূর্ব জীবনের ঘটনাবলি অবলম্বনে রচিত পদ। আর গৌরচন্দ্রিকা হল বৈষ্ণব পালাকীর্তনের বিভিন্ন পর্যায়ে গান করার আগে সেই পর্যায়ে শ্রীচৈতন্যদেবের ভাবাবেশের বর্ণনা। চৈতন্যদেবের সেই ভাবাবেশের বর্ণনা করেই কীর্তনীয়া বুঝিয়ে দিতেন রাধাকৃষ্ণলীলার কোন্ পর্যায়ের গাও গাওয়া হবে।

৬) 'মনসামঙ্গল' কাব্যের উদ্ভবের সামাজিক পটভূমি বা প্রেক্ষাপট সংক্ষেপে বর্ণনা করুন।

★উত্তর - 'মঙ্গলকাব্য' ধারায় 'মনসামঙ্গল' বিশিষ্টতা অর্জন করেছে নিয়তির বিরুদ্ধে মানুষের বিদ্রোহের কাহিনির জন্য। এর পিছনে আছে মুসলিম প্রভাব। এ দেশে মুসলমানদের আগমনের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজব্যবস্থায় যে ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল, তা থেকে হিন্দু সমাজকে রক্ষা করার প্রচেষ্টার পরিণামে 'মঙ্গলকাব্য' ধারার সৃষ্টি। "বাঙলার কাব্য" গ্রন্থে হুমায়ুন কবির লিখেছেন, --- "হিন্দু-মুসলিম সমাজের অস্তিত্বের সংঘাতে হিন্দু সমাজকে রক্ষা করতে হিন্দুমানসে 'মনসামঙ্গলে'র সৃষ্টি।"

৭) সৈয়দ আলাওলকে মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে 'পণ্ডিত কবি' বলে অভিহিত করা হয় কেন?

★উত্তর - সৈয়দ আলাওল ছিলেন আরাকানের রাজসভার আশীর্বাদপ্রাপ্ত কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। শুধু তাই নয়, তিনি ছিলেন মধ্যযুগের মুসলমান কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্যের নাম -- 'পদ্মাবতী' (১৬৪৮)। তাঁর অন্যান্য বিখ্যাত কাব্যের নাম হল -- 'সয়ফুলমুলুক বদিউজ্জামাল' (১৬৬৯), 'সিকান্দরনামা' (১৬৭৩)। তাঁর এসব কাব্যে পাণ্ডিত্য ও কবিত্বের সংমিশ্রণ ঘটেছে। রত্নসেন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ আলাওলের পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতি দিয়ে উদ্ধৃতি দিয়েছেন। কাব্য, প্রেম ইত্যাদি সম্পর্কে আলাওলের মন্তব্য বিচার করলেই তাঁর পাণ্ডিত্যের গভীরতা উপলব্ধি করা যায়। এ সমস্ত কারণে সৈয়দ আলাওলকে মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে 'পণ্ডিত কবি' বলে অভিহিত করা হয়।

৮) ঘনরাম চক্রবর্তী রচিত কাব্যটির নাম লিখুন। কাব্যটির রচনাকাল কত? তাঁর কাব্যের দু'টি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন।

★উত্তর - ঘনরাম চক্রবর্তী রচিত কাব্যটির নাম - 'ধর্মমঙ্গল' বা 'অনাদিমঙ্গল'। কাব্যটির রচনাকাল - ১৭১১ খ্রিস্টাব্দ। তাঁর কাব্যের দু'টি বৈশিষ্ট্য হল ---

(ক) পাণ্ডিত্যের সঙ্গে রসবোধ, মানবচরিত্রজ্ঞানের সঙ্গে বাস্তববোধ ঘনরাম চক্রবর্তীর কাব্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

(খ) বর্ণনা ও চরিত্রসৃষ্টি তাঁর কাব্যে এক উল্লেখযোগ্য মাত্রা লাভ করেছে।

৯) ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের 'অন্নদামঙ্গল' কাব্য কোন্ শতাব্দীতে রচিত হয়েছিল? ঐ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনটি বাক্য লিখুন।

★উত্তর - আনুমানিক ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের 'অন্নদামঙ্গল' কাব্য রচনা শেষ হয়। তাই বলা যায় যে, এই কাব্যটি অষ্টাদশ শতাব্দীতে রচিত হয়েছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে যে বৈশিষ্ট্যগুলি প্রকাশিত তার মধ্যে অন্যতম হল --- দেব-নির্ভরতা ছেড়ে গ্রন্থ রচয়িতারা মনুষ্যত্বকে অধিকার দিতে শুরু করেন। এই সময় শৈলীগত দিক থেকে অলঙ্কার ও শব্দ ব্যবহারের চাতুর্য বিশেষ লক্ষণীয়। এই শতাব্দীর শেষদিকেই ছড়া ও কবিগানের আবির্ভাব হতে শুরু করে।

১০) মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের সাথে আধুনিক যুগের বাংলা সাহিত্যের মৌলিক পার্থক্য কী?

★উত্তর - (ক) মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে ধর্মীয় বিষয় ছিল একমাত্র উপজীব্য। আধুনিক যুগের বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে বড় লক্ষণ বলে বিবেচিত হয় মানবিকতা।

(খ) মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ না থাকলেও আধুনিক যুগের বাংলা সাহিত্যে তা পরিলক্ষিত হয়।

(গ) মধ্যযুগের বাংলা কাব্য ছিল অনুবাদ ও অনুকরণমূলক। মৌলিকতা আধুনিক যুগের বাংলা কাব্যের অন্য একটি লক্ষণ।

(ঘ) মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে রাজানুগত্য, জাতীয় চেতনাবোধ ও দেশীয় ঐতিহ্য চর্চার বিকাশ ঘটে। দেশপ্রেম বা জাতীয়তাবোধ আধুনিক যুগের বাংলা সাহিত্যের লক্ষণ বলে বিবেচ্য।

  ¤ আরও দেখুন :-  

মধ্যযুগ থেকে কয়েকটি ডেসক্রিপটিভ প্রশ্নোত্তর

মধ্যযুগ থেকে গুরুত্বপূর্ণ ডেসক্রিপটিভ প্রশ্নোত্তর

চর্যাপদ থেকে গুরুত্বপূর্ণ ডেসক্রিপটিভ প্রশ্নোত্তর

¤ আরও দেখুন :-


  • আলোচক : সৌম্য মাইতি
  • যোগাযোগ : ৬২৯০৩৭৭১৩৪
  • S.L.S.T  বাংলা অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে চাইলে ফোন করে যোগাযোগ করুন আমার ৬২৯০৩৭৭১৩৪ নম্বরে, অথবা আমার WhatssApp-তে ম্যাসেজ করুন ৮৭৬৮৮৩০২৩০ নম্বরে। এখানে উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর মতো সঠিক তথ্যসহকারে ১ নম্বরের পাশাপাশি ২ নম্বরের ডেসক্রিপটিভ প্রশ্নোত্তরও করানো হয়। ধন্যবাদ।

This is a premium content, you can continue reading this content in our Android App. Click the button below to continue. alert-info

4 Comments

Post a Comment

Previous Post Next Post