NEW :
Loading contents...

মধ্যযুগ থেকে গুরুত্বপূর্ণ ডেসক্রিপটিভ প্রশ্নোত্তর 

১) চণ্ডীদাসকে 'বাংলা ভাষার প্রথম মানবতাবাদী কবি' বলে অভিহিত করা হয় কেন?

★উত্তর - কবি চণ্ডীদাস "শুনহ মানুষ ভাই/ সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপর নাই" বলে জাত-পাতযুক্ত সমাজে প্রথম মানবতার বাণী তাঁর কাব্যে ধারণ করেছেন। তাছাড়া, ব্যক্তিজীবনেও তিনি জাত-সংস্কারের ঊর্ধ্বে ছিলেন। তাই চণ্ডীদাসকে 'বাংলা ভাষার প্রথম মানবতাবাদী কবি' বলে অভিহিত করা হয়। অনেকেই যে বলে থাকেন, মানবতার বাণী আমরা ইউরোপ মহাদেশ থেকে পেয়েছি, কবি চণ্ডীদাসের এই বাণী তা ভুল প্রমাণিত করে।

২) 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যে গ্রামীণজীবনের কী পরিচয় পাওয়া যায়? তা নিজের ভাষায় ব্যক্ত করুন।

★উত্তর - 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্য মূলত খ্রিষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীতে লেখা। তখন বাংলার গ্রাম ও শহরের পত্তন ঘটতে শুরু করেছে। বিশেষত হাট বা বেচাকেনার স্থানকে কেন্দ্র করে একদল মানুষ বাণিজ্যকেন্দ্রিক বসত গড়তে থাকে। তারপরও 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যে গ্রামজীবনই মুখ্য। কাব্যের ১৩টি খণ্ডে যে গৃহের বর্ণনা, পথ বর্ণনা, লতাপাতানিসর্গ বর্ণনা, কদম্ব-তমালের কথা, তৈজসপত্রের তালিকা, ধেনুকলের বিবরণ, বাঁশির কথা সবই গ্রামজীবনকেই মূর্ত করে। তাছাড়া মানুষের জীবিকার অবলম্বনও কৃষি বা কৃষিসংশ্লিষ্ট বিষয়। ফলে এ কথা বলা প্রাসঙ্গিক হবে যে, 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যে বাংলার গ্রামীণজীবনের চমৎকার পরিচয় আছে।

৩) 'মৈথিল কোকিল' কাকে বলা হয়? এবং কেন?

★উত্তর - 'মৈথিল কোকিল' মিথিলার কবি বিদ্যাপতিকে বলা হয়। কোকিল যেমন সুললিত সুমধুর গান গেয়ে সকলকে মুগ্ধ করে, মিথিলার রাজসভার কবি বিদ্যাপতিও মৈথিলী ভাষায় সুন্দর পদাবলি ও অন্যান্য গীতিকবিতা রচনা করে সকলকে মুগ্ধ করেছেন। তাই তাঁকে 'মৈথিল কোকিল' বলা হয়।

৪) 'মঙ্গলকাব্যে'র উদ্ভবের প্রেক্ষাপট বা পটভূমি কী?

★উত্তর - 'মঙ্গলকাব্যে'র অধিকাংশ দেবদেবী অস্ট্রিক গোষ্ঠীভুক্ত আদিম লোকায়ত সমাজের বাংলার গ্রামীণ পরিবেশে ও সমাজে এঁদের উদ্ভব ও প্রতিষ্ঠা। অস্ট্রিকদের দেবী হলেন মহাদেব শিবের মানসকন্যা মনসা, আর্যপূর্ব অনার্য আদিবাসী জাতি বা সমাজের দেবী চণ্ডী বা চণ্ডিকা হলেন শিবের গৃহিণী। আর তাদের সূর্যদেবতা হলেন কুর্মরূপী ধর্মঠাকুর।

৫) 'মনসামঙ্গল' কাব্যের উদ্ভব সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত টীকা লিখুন।

★উত্তর - সর্পদেবী মনসা দেবীর উদ্ভব সম্পর্কে কোন সমাজের প্রজনন শক্তিপূজার কথা বলা হয়, গ্রিসের সর্পদেবী মেডুসা, দক্ষিণ ভারতের সর্পদেবী মঞ্চামা, বৌদ্ধ তান্ত্রিক দেবী জাঙ্গুলি তারা প্রভৃতির মিশ্র প্রেরণা সক্রিয় ছিল। এই সঙ্গে সিদ্ধ গাছ ও টোটেমের ব্যাপারটিও ছিল। পরে সর্পদেবী মনসা মহাদেব শিবের কন্যা পরিচয়ে অভিজাত সমাজে স্থান পেয়েছে। অভিজাত শ্রেণির ওপর প্রান্তিক মানুষের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা 'মনসামঙ্গল' কাব্যের মূল কথা।

৬) মহাভারতের প্রথম অনুবাদক কবীন্দ্র পরমেশ্বর দাসের মহাভারতকে 'পরাগলী মহাভারত' বলা হয় কেন?

★উত্তর - নবাব হুসেন শাহ (১৪৯৩-১৫১৯) চট্টগ্রাম শাসনের জন্য পরাগল খাঁ নামক এক লস্কর যুক্ত করেন। মহাভারতে বিচিত্র কৌশলে যুদ্ধের বর্ণনা আছে। যুদ্ধপ্রিয় পরাগল খাঁ মহাভারতের যুদ্ধকাহিনি শুনে গ্রন্থটি অনুবাদ করার জন্য পরমেশ্বর দাসকে নির্দেশ দেন। সে অনুসারে মহাভারত অনুবাদ করা হয় বলে একে 'পরাগলী মহাভারত' বলা হয়।

৭) কবি কাশীরাম দাসের মহাভারত অনুবাদের কাহিনির বর্ণনায় মৌলিকতা কোথায়?

★উত্তর - কবি কাশীরাম দাস রচনার সময় মূল মহাভারতের কাহিনি গ্রহণ-বর্জন করেছেন। পর্ববিভাগ ও নামকরণে তিনি স্বাধীন পথেই চলেছেন। 'মহাপ্রস্থান পর্ব' ও 'স্বর্গারোহণ পর্ব' দু'টি একত্রে 'স্বর্গারোহণ পর্ব' নামে চিহ্নিত হয়েছে। শ্রীবৎস-চিন্তার মধুর সম্পর্কটি কবির নিজস্ব। 'সুভদ্রা হরণ', 'পারিজাত হরণ', 'সত্যভামার তুলাব্রত', 'রাজসূয় যজ্ঞে বিভীষণের অপমান' প্রভৃতি কবির নিজস্ব সৃষ্টি।

৮) মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে 'বটতলার পুথি' কী?

★উত্তর - কলকাতার বটতলা নামক স্থানে অতি সস্তা কাগজ ও মুদ্রণে যে বই ছাপা হত, যেগুলোর কাহিনি রুচির প্রশ্নে অনেক সময়ই নিম্নরুচির বলে বিবেচিত হত, সেগুলোকে মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে 'বটতলার পুথি' বলা হয়। এই পুথিসমূহের ভাষা ছিল মিশ্র, পাঠক ছিল গ্রামের খুবই অল্পশিক্ষিত মানুষ।

৯) কবি সৈয়দ আলাওলের 'পদ্মাবতী' (১৬৪৮) কাব্যকে তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা বলা হয় কেন?

★উত্তর - 'পদ্মাবতী' (১৬৪৮) কাব্যকে কবি সৈয়দ আলাওলের শ্রেষ্ঠ রচনা বলা হয় কারণ ---

(ক) তাঁর এই কাব্যে নাগরিক শিক্ষার পরিচয় পাওয়া যায়।

(খ) তাঁর এই কাব্যে রুচির বৈদগ্ধ্য রূপ প্রকাশ পেয়েছে।

(গ) তাঁর এই কাব্যে ভাবের গভীরতা প্রকাশ পেয়েছে।

(ঘ) তাঁর এই কাব্যে ভাষা ও অলংকার প্রয়োগের বুদ্ধিদীপ্ততার পরিচয় পাওয়া যায়

(ঙ) তাঁর এই কাব্যে মধ্যযুগের লৌকিক প্রণয়ের বর্ণনা রয়েছে।

(চ) তাঁর এই কাব্যটি চিত্রধর্মী ও গীতিধর্মী।

১০) কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের 'ঈশ্বরী পাটুনী' চরিত্রটি নারী না পুরুষ? উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দিন।

★উত্তর - এ নিয়ে কিছুটা তর্ক আছে পণ্ডিতদের মধ্যে। তাঁদের অনেকেই তাকে পুরুষ চরিত্র বলেন। কারণ 'পাটুনী' শব্দের অর্থ খেয়ামাঝি। তাদের বিচারে খেয়ামাঝি হল পুরুষ। কিন্তু এই এই যুক্তিগুলো ভেবে দেখা প্রয়োজন ---

(ক) চর্যাপদে নারীদের নৌকা চালনার দৃষ্টান্ত আছে, মধ্যযুগেও (মহাভারতে সত্যবতী চরিত্র) সে ধারাবাহিকতা থাকা খুবই সম্ভব।

(খ) ঈশ্বরী নামটিও একজন স্ত্রীলোকের নাম।

(গ) তাছাড়া একজন মমতাময়ী মায়ের মতো ব্যক্তিগত চাহিদার চেয়ে সর্বদা সে সন্তানের সমৃদ্ধি কামনা করেছে, তাই তাকে তো নারী হিসেবেই বিবেচনা করা প্রয়োজন।


  • আলোচক : সৌম্য মাইতি
  • যোগাযোগ : ৬২৯০৩৭৭১৩৪
  • S.L.S.T  বাংলা অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে চাইলে ফোন করে যোগাযোগ করুন আমার ৬২৯০৩৭৭১৩৪ নম্বরে, অথবা আমার WhatssApp-তে ম্যাসেজ করুন ৮৭৬৮৮৩০২৩০ নম্বরে। এখানে উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর মতো সঠিক তথ্যসহকারে ১ নম্বরের পাশাপাশি ২ নম্বরের ডেসক্রিপটিভ প্রশ্নোত্তরও করানো হয়। ধন্যবাদ।

This is a premium content, you can continue reading this content in our Android App. Click the button below to continue. alert-info

7 Comments

  1. উপকৃত হলাম

    ReplyDelete
  2. খুব ভালো প্রশ্ন - উত্তর । Thank you so much স্যার 🙏🙏🙏🙏

    ReplyDelete
  3. খুব উপকৃত হলাম

    ReplyDelete
  4. This comment has been removed by a blog administrator.

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post